ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ছাড়া বিএনপি রাজপথ ছাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। গতকাল রবিবার রোডমার্চ নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার সময় বিভিন্ন পথসভায় তারা বলেন, এই সরকারের প্রতি দেশের মানুষ অনাস্থা জানিয়েছে। কাজেই এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। যত শিগগিরই তারা ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে, ততই দেশের মঙ্গল হবে।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বগারবাজার এলাকা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রোডমার্চ শুরু হয়। শেষ হয় রাত পৌনে ৯টার দিকে; কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ চক্ষু হাসপাতালসংলগ্ন বালুর মাঠে সমাবেশের মধ্য দিয়ে। পথসভা হয় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চুরখাই, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের চায়না মোড়, শম্ভুগঞ্জ ও ঈশ্বরগঞ্জে।
রোডমার্চ উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এতে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, ওয়ারেছ আলী মামুন, জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী অংশগ্রহণ করেন।
সরকারবিরোধী একদফা দাবিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর সিলেটে, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশালে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনায় রোডমার্চ করে বিএনপি। গতকাল ছিল চতুর্থ রোডমার্চ। একই দাবিতে আগামীকাল ফরিদপুরে এবং আগামী বৃহস্পতিবার কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগে রোডমার্চ হবে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকায় আজ কৃষক সমাবেশ এবং আগামী বুধবার ‘পেশাজীবী কনভেনশন’ অনুষ্ঠিত হবে।
পথসভায় ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আজকে আমরা রাজপথে নেমেছি। আপনারা এই প্রত্যয় নিন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না। পাশাপাশি যতক্ষণ পর্যন্ত না এই সরকার পদত্যাগপত্র জমা না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না।’ তিনি বলেন, ‘গত এক বছর ধরে আপনারা দেখেছেন, আমরা কোটি কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করে রাজপথে সমাবেশ করেছি, মিছিল করেছি এবং মিটিং করেছি। এই সরকারের প্রতি বাংলাদেশের মানুষ অনাস্থা দিয়েছে। কাজেই এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। যত শিগগিরই তারা ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে, ততই দেশের মঙ্গল হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আগামী দিনে আন্দোলন আরও জোরদার হবে। কারণ মানুষ বাঁচতে চায়, এ দেশের গরিব মানুষের আর বাঁচার উপায় নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ে বেগমপাড়া ছিল না, সেকেন্ড হোম ছিল না, দুবাইয়ে গুলশান-৩ ছিল না। এসব আমরা আগে শুনিনি। কারা দেশের শ্রমিকের কষ্টার্জিত টাকা বিদেশে পাঠায়, সরকার তা জানে। কিন্তু কোনো বিচার করবে না।’
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ করে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘তাদের বলছিÑ যারা বাধা দেবেন, তাদের দীর্ঘদিন মনে রাখা হবে।’
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, সেখানে পথসভায় বক্তব্য রাখেন ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ভোটের অধিকার চায়, গণতন্ত্রের অধিকার চায়।’ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বাধা দিয়ে কখনো বন্যার পানি আটকে রাখা যায় না। মাথা ঠুকে কখনো পাথর ভাঙা যায় না।’