হতে চেয়েছিলেন নায়িকা। কিন্তু হন চিকিৎসক। মহামারী করোনাভাইরাসে যখন পৃথিবী স্তব্ধ, ঠিক তখনই তিনি করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রতারণার অভিযোগে কারাগারে যান। নিম্ন আদালতে তার সাজা হলেও উচ্চ আদালতে পরে আপিল আবেদন করেন এবং জামিন পান। প্রায় তিন বছর কারাগারে কাটিয়ে চলতি বছরের ৫ জুন জামিনে মুক্তি পান সাবরিনা। পরে অনেকটাই আত্মগোপনে চলে গেছেন আলোচিত সমালোচিত এই চিকিৎসক।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর জাতীয় হৃদ রোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে যাননি ডা. সাবরিনা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও যাননি। স্বামী আরিফুল ইসলাম চৌধুরী এখনও করোনাভাইরাস পরীক্ষার জালিয়াতি মামলায় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সব কিছু মিলে সব সময়ে মন খারাপ থাকে ডা. সাবরিনার।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বাসায় থাকেন সাবরিনা। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হন না। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা হওয়ার কারণে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। এই মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি চাকরিতে ফিরতে পারবেন না। তাই সারাদিন বাসায় থাকেন। দরকার না হলে ঘর থেকেও বের হন না। মুঠোফোনও সব সময় বন্ধ রাখেন। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ রাখেন না।
সাবরিনা কোথায় আছেন কেমন আছেন- জানতে সাবরিনার মুঠেফোনে একাধিবার ফোন করা হয়। কিন্তু তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এমনকি কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়ার পরেও তিনি তার কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
সাবরিনার বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের একজন অধ্যাপক ঢাকাটাইমসকে বলেন, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে মামলা হয়েছে। তিনি এই মামলায় জেলও খেটেছেন। তাই এই মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন না। এছাড়াও তিনি জামিনে বের হওয়ার পরে তিনি একদিনের জন্যও হাসপাতালে যাননি।
করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী প্রতিষ্ঠানের সিইও আরিফুল চৌধুরীসহ আটজনকে তিনটি পৃথক অভিযোগে ১১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গত বছর ২০২২ সালের ১৯ জুলাই ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর মূখ্য হাকিম তোফাজ্জল হোসেন এ ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী প্রতিষ্ঠানের সিইও আরিফুল চৌধুরীসহ আটজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেন। রায়ে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রত্যেককে তিন বছর কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারায় প্রত্যেককে চার বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৪৭১ ধারায় প্রত্যেককে চার বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
তিনটি ধারার সাজা পরপর কার্যকর হবে মর্মে রায়ে বলা হয়েছে। তাই তাদের ১১ বছর সাজাই খাটতে হবে বলে জানান মামলার আইনজীবীরা। সাবরিনা-আরিফুল ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা। পরে উচ্চ আদালতে আপিল আবেদন করেন এবং জামিন নেন সাবরিনা।
২০২০ সালের ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুলসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও হামলা করে থানায়। মারধর করে পুলিশকে।
জেকেজির কর্ণধার স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি টেস্টের জন্য জনপ্রতি নিয়েছেন সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি তারা নিতেন ১০০ ডলার।
২০২০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক লিয়াকত আলী। এরপর একই বছরের ২০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত।
করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্ণধার আরিফুল চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। মামলার পর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।