আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে ফরিদপুরের তিন উপজেলা, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের কয়েকটি গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়েছে। ওই পাঁচটি উপজেলার সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে ও ভেঙে গেছে কয়েক হাজার গাছপালা। বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ সময় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ঘরের নিচে চাপা পড়ে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের সোনতুন্দী গ্রামে আঘাত হানে টর্নেডো। মাত্র এক মিনিটের এ টর্নেডোতে বিধ্বস্ত হয় ২১টি বসতঘর। বল্লভদী ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিন বলেন, ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে সোনাতন্দী গ্রামের ২১টি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের থাকা ও খাবার কোনো ব্যবস্থা নেই।
এদিকে আলফাডাঙ্গায় কয়েক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে দুটি ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রামের শতাধিক কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে সদর ও টগরবন্ধ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ঝড়ে উপড়ে পড়েছে কমপক্ষে তিন শতাধিক গাছপালা। এছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে দুই উপজেলার ছয়টি গ্রামের শতাধিক কাঁচা-পাকা বাড়িঘর ভেঙে গেছে। অনেকেই এখন খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। এ ছাড়া তিন শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
ভাঙ্গায় ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পাঁচটি গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি। এ সময় ঘরের নিচে পড়ে এক গর্ভবতী গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে এবং কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। মৃত গৃহবধূ ঝরনা আক্তার (২১) বড় হামিরদী গ্রামের দিনমজুর শাহাবুদ্দিন শেখের স্ত্রী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন জানান, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ এবং রাতের ঘূর্ণিঝড়ে দুই ইউনিয়নের চারটি গ্রামে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সারাদিন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল বিতরণ করেছি।
মুকসুদপুরে, বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে উজানী ইউনিয়নের বাসুদেবপুর, ডিগ্রীকান্দি, মহাটালী এবং কাঁশালিয়া ইউনিয়নের শার্শাকান্দি গ্রামে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রায় ৬০টি বাড়িঘর তছনছ হয়েছে।
উজানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শ্যামল কান্তি বোস জানান, আকস্মিক ঘূর্ণিঝড় তার ইউনিয়নের চারটি গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী কাঁশালিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে আঘাত হানে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের প্রস্তুতি চলছে।
অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইলে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে ২০টি টিনশেড বসতঘর। শুক্রবার বিকাল ৩টায় শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লাল মিয়া পাড়া গ্রামের মেরাতলী এলাকায় বয়ে যায় এ ঘূর্ণিঝড়।
শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল বলেন, শুক্রবার সকাল থেকেই ভারী ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়। বিকালে হঠাৎ করে মেরাতলী মাঠের দিক থেকে প্রচণ্ড বেগে টর্নেডো ধেয়ে আসে। মুহূর্তেই এলাকার প্রায় ২০টি টিনশেড ঘরে আঘাত হানে। এ সময় আটটি বসতঘর ও ১২টি দোকান বিধ্বস্ত হয়। এ ছাড়া টিনের চালা উড়ে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির তারের সঙ্গে লেগে গেছে। এর ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি বিভিন্ন গাছের ডালপালা ভেঙে বাড়িঘরের ওপর পড়েছে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন জানান, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩০ কেজি করে চাল এবং টিন সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।