পটুয়াখালীর উপকূলের মৎস্যপল্লিতে মাছ কিনতে মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষের ভিড় জমেছে। বুধবার (১১ অক্টোবর) বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দেশের অন্যতম মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুর মৎস্যপল্লিতে সাধারণ ক্রেতারা ভিড় করেন। তুলনামূলক কম দামে মাছ কেনার জন্য সরগরম হয়ে ওঠে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্র থেকে একটি ট্রলার ঘাটে ফেরা মাত্র সাধারণ মানুষ ট্রলারের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ফ্লোরে মাছ ফেলার সঙ্গে সঙ্গে চতুর্দিকে ভিড় করছেন পাইকার ও সাধারণ ক্রেতারা। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে ট্রলার থেকে মাছ তুলতে হিমশিম খেয়েছেন ঘাট শ্রমিকরা।
মৎস্য অধিদফতর এ বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করেছে ১২ অক্টোবর থেকে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত। এই ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণে অভিযান পরিচালনা করবে প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগ মুহূর্তে সবাই মাছ কিনতে ছুটে যান মৎস্যপল্লিতে।
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ কিনতে আসা ক্রেতা জুয়েল খান বলেন, যেহেতু ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে তাই কিনতে এসেছি। প্রতি মণ ৩৫ হাজার টাকা দামে ১০ কেজি ইলিশ কিনেছি। অন্য সময় এ মাছের দাম ছিল মণ ৫০ হাজার টাকা।
মহসিন নামের অন্য এক ক্রেতা বলেন, মণ ৩০ হাজার টাকা দামে ২০ কেজি কিনেছি। প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৭৫০ টাকা। অন্য সময় এ মাছ কিনতে প্রতি কেজির দাম পড়ত ১৩ থেকে ১৪০০ টাকা।
মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম খান বলেন, আমার আড়তের দাদন নেওয়া একটি ট্রলার ৯০ মণ মাছ নিয়ে রাত ৯টার দিকে ঘাটে ফিরেছে। প্রতি মণ ৩০ হাজার টাকা দরে ২৭ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। দুপুর ১২টার দিকে ট্রলারটি ঘাটে ফিরতে পারলে প্রতি মণ মাছের দাম হতো ৫০ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, এই ট্রলারটি চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার। ট্রলারটি দুই দিন আগে মাছ বিক্রি করে গেছে। জেলেরা মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে গিয়েছে। বাঁশখালী ফেরার পথে সোনার চর সংলগ্ন গভীর সমুদ্রে লালচে রঙের পানি দেখে জাল ফেলে পাঁচ হাজার ২০০ মাছ পেয়েছে।
ট্রলার মালিক রুহুল আমিন খলিফা বলেন, ১২ অক্টোবর থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার কারণে দূর-দূরান্তের পাইকার না থাকায় স্থানীয় লোকজন কম দামে মাছ কেনার সুযোগ পেয়েছেন।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার মধ্যরাত থেকে সাগর ও নদীতে বন্ধ থাকবে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার। ইলিশের বাধাহীন প্রজননের জন্য আগামী ২২ দিন মাছ ধরার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। এ সময় মাছ পরিবহন, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় ও বাজারজাত করা বন্ধ থাকবে। এ আইন অমান্যকারী এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। তাই মাছ ধরা বন্ধ করে গভীর সাগর থেকে দেশের অন্যতম মৎস্য বন্দর পটুয়াখালীর মহিপুর ও আলীপুরের পোতাশ্রয় খাপড়াভাঙ্গা নদীতে আশ্রয় নিয়েছে ট্রলারগুলো।
এদিকে, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল করতে বুধবার (১১ অক্টোবর) শেষ বিকালে মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। এতে মহিপুর-আলীপুরের দুই শতাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলে অংশগ্রহণ করেন।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনও জেলে সাগর ও নদীতে মাছ ধরলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।