চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই পৌরসভা

একমাস ধরে পানিবন্দি ২ শতাধিক পরিবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা
  ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩০

টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই পৌরসভার প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। সদর উপজেলার নওয়াবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ পৌরসভায় প্রায় একমাস ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, নওয়াবগঞ্জ পৌর এলাকার বেলেপুকুর ও বিদিরপুর মহল্লার এবং শিবগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানবাড়ি মহল্লার এসব মানুষ জলাবদ্ধতা থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।  

যাতায়াতের রাস্তা ডুবে গেছে, এমনকি বাড়ির মধ্যেও পানি ঢুকে গেছে। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে কাজ করা হচ্ছে।
নবাবগঞ্জ পৌর এলাকার তিন নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ পানিবন্দি থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মহল্লাবাসী। গত সপ্তাহের চারদিনের টানা বর্ষণে শহরের অক্ট্রয় মোড়ের পুকুরটি উপচে গেলে ওই মহল্লাবাসী পানিবন্দি হয়। ফলে শাহ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের ভেতর থেকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কলেজের মাঠ ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি আশপাশের প্রায় অর্ধশত পরিবারের বাড়িঘর পানিবন্দি হয়ে পড়ে। মহল্লাবাসীর যাতায়াতের রাস্তাটির পাশাপাশি অনেকের বাড়ির ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে।  
স্থানীয়রা জানান- নিউ মার্কেট, কালেক্টরেট চত্বর, নিয়ামতনগর, লাখেরাজপাড়াসহ আশপাশের মহল্লার সব দূষিত পানি অক্ট্রয় মোড়ের পুকুরটিতে পড়ে। এছাড়া নতুন ড্রেন নির্মাণ হওয়ায় আলীনগর, মুন্সিপাড়া, বেলেপুকুরের একাংশের এলাকার পানি এ পুকুরটিতে নামছে। এদিকে, ভারী বর্ষণে পুকুরটি উপচে বেলেপুকুর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্ট এ জলাবদ্ধতায় প্রায় মাস খানেকের বেশি সময় ধরে এ মহল্লার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।  
জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় তাদের অনেকের বাড়ির ভেতর পানি ঢুকে গেছে। যার ফলে সাপ আর বিষাক্ত পোকামকড়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে এ মহল্লাটিতে। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
পৌর প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান- নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করলেও, কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পান না তারা।
অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে মাঠ ও পুকুর ভেসে যাওয়ায় বিদিরপুর এলাকার রেললাইনের ধারের নিম্নাঞ্চলের প্রায় অধিকাংশ বাড়িতে পানি ঢুকেছে। তাদের ঘরে হাঁটু পানি থাকায় সব ধরনের কাজ করতে ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে।
বেলপুকুর মহল্লার সাদিকুল ইসলাম জানান- প্রায় দেড়মাস থেকে হাঁটুপানি ভেঙ্গে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ রাস্তা দিয়ে পুরুষ মানুষের কষ্ট না হলেও মহিলাদের বেশ ভুগতে হয়। শহরের যত দূষিত পানি অক্ট্রয় মোড়ের পুকুরটিতে পড়ে। এসব দূষিত পানি মানুষের বাড়িতে ঢুকে গেছে।
একই মহল্লার সেফাতুল ইসলাম শিফাত জানান, অক্ট্রয় মোড় থেকে ব্যবহৃত পানিগুলো ড্রেনের সাহায্যে রুহুলবাঁধ এলাকায় পড়ে। কিন্তু এ ড্রেনটি গত বছর থেকে অকেজো হয়ে আছে। ড্রেনটি মেরামত এবং পরিষ্কার করার জন্য দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। প্রায় ২০ দিন আগে বিশ্বরোড এলাকার ড্রেনের দুটি ঢাকনা ওঠানো হলেও, এখনও কাজ শুরুই হয়নি। এতে করে বিষাক্ত জলাবদ্ধতায় তারা দিনযাপন করছেন। আর পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বার বার বলার পরও তাদের জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল রাজু আহমেদ জানান, বিশ্বরোড এলাকার ড্রেনটি মেরামত এবং পরিষ্কার করার জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দেড় লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ। দ্রুতই জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজনিন ফাতেমা জিনিয়া জানান, পৌর এলাকার বিদিরপুর ও বেলেপুকুর মহল্লায় অনেক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। এসব পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনগুলো পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে একই অবস্থা। নিম্ন ও মধ্যবৃত্তদের বসবাস হওয়ায় এ এলাকার প্রতি কারো নজর নাই বলে তাদের অভিযোগ। পৌর এলাকায় বাস করার পরও নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
বাগানবাড়ি মহল্লার আবুল হাসান জানান, পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের এলাকার শতাধিক বাড়িঘর গত একমাস ধরে ডুবে আছে। সকালে কাজের জন্য বাড়ি থেকে এসে আর বাড়ি ফিরতে মন চায়না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি পৌরসভায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পৌর কর্তৃপক্ষ কে জানানো হলেও তারা এখনও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য ও প্যানেল মেয়র ফারুক ইসলাম টুটুল জানান, ঐ এলাকাটি নিচু এবং পানি নামার ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই মেয়র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।