ময়মনসিংহের ভালুকায় খুন হওয়া স্কুলছাত্রী রাখিয়া সুলতানা রিয়া তার স্বামীর বাড়িতে ফিরে না যাওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার রহস্য উদঘাটন, ঘাতক প্রবাসী স্বামী রিপন মিয়াকে গ্রেফতার এবং হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করেছে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ।
শুক্রবার বিকেলে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার গোরাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার রিপন মিয়া তার বাড়িতে ফিরে না যাওয়ায় স্ত্রী রিয়াকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভালুকা মডেল থানা পুলিশ জানায়, এক বছর আগে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মাওশা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে প্রবাসী রিপন মিয়ার সাথে বিয়ে হয় ভালুকা উপজেলার বাটাজোর গ্রামের আবদুর রশিদের মেয়ে রাখিয়া সুলতানা রিয়ার। বিয়ের ১৫ দিন পর রিপন বিদেশ চলে যাওয়ার কিছুদিন পর স্ত্রী রিয়া তার বাবার বাড়ি চলে আসে। এর পর থেকেই তাদের মাঝে বনিবনা হচ্ছিল না। বিদেশে থেকে অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাবার বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে আনতে পারেননি প্রবাসী রিপন। তার কিছুদিন পর রিয়া তার স্বামী রিপনকে জানায়, সে আর তাদের বাড়িতে যাবে না।
পরে রিপনের স্ত্রী রিয়া তার সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে প্রবাসী রিপন রিয়ার স্কুলের সহপাঠীদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, রিয়া অন্য একজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। গত ২ অক্টোবর পরিবারের কাউকে না জানিয়ে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে আসে রিপন। পরে তিনি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর পৌরসভা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে। ঘটনার আগের দিন ৮ অক্টোবর সকালে প্রবাসী রিপন মিয়া বাটাজোর বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটে তার স্ত্রী রিয়াকে অন্য একটি ছেলের সাথে দেখতে পায়। এতে রিপন মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে পরদিন সখিপুর বাজার থেকে একটি দা কিনে রিয়ার স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে অপেক্ষা করতে থাকে।
ওইদিন দুপুরে পরীক্ষা দিতে স্কুলে যাওয়ার পথে ধানক্ষেতে ফেলে ধারালো দা দিয়ে মাথা ও ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায় রিপন। পরে মেয়েটিকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই রিয়ার বাবা আব্দুল রশিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রিয়ার বাবা আব্দুল রশিদ জানান, বিয়ের পনের দিন পর রিয়ার স্বামী রিপন সৌদি আরব চলে যান। এরপর রিয়ার উপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। ছয় মাস আগে রিয়াকে আমার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। অল্প বয়সে না বুঝে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম। আমার মেয়ে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করেছিল। কিন্তু আমার মেয়েটিকে ওরা বাঁচতে দিল না। আমি আমার মেয়ে হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানান, থানা পুলিশের অভিযানে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী রিয়া হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামি রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তাছাড়া হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রবাসী রিপন তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।