সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী 

দেশনেত্রীকে জীবন-মৃত্যুর পথরেখায় ঠেলে দিচ্ছে সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
  ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৪৮

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেছেন, ‘জনসমর্থনহীন শাসকগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্মূলের মহাপরিকল্পনায় লিপ্ত। এ ক্ষেত্রে খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগ থেকে শুরু করে বিচারের নামে প্রহসনের সাজা দেওয়া এবং গুম-খুন-গুপ্তহত্যার বিবিধ প্রণালি অবলম্বন করেছে সরকার। এটা নিশ্চিত যে বন্দি বেগম জিয়াকে আওয়ামী সরকার সুপরিকল্পিতভাবে খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে। আর এটির প্রকাশ হচ্ছে লন্ডনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতায়। সেই বক্তৃতার মধ্যেই নিহিত ছিল বিচার-বুদ্ধিহীন ও বিবেচনা শক্তিহীন প্রতিশোধের ইঙ্গিত। বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় বাধাদান সেটারই বড় প্রমাণ।’
সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন রিজভী আহমেদ। 
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়েছিলেন। তিন মাস পর সেপ্টেম্বরে তিনি যখন দেশে ফেরেন তখন তিনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। এর কয়েক মাস পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে একটি মিথ্যা মামলার ফরমায়েশি রায়ে তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর দৃশ্য দেশবাসী সবাই ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে অবলোকন করেছে। দেশনেত্রী হেঁটেই কারা ফটক পার হয়েছেন। তাহলে সোয়া দুই বছরে তিনি কেন এত গুরুতর অসুস্থ হলেন?’
ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের ঘটনা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনীতির নামে বিরোধী নেতাকে হত্যার নানা দৃষ্টান্ত আছে দুনিয়াজুড়ে। রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেকসাই নাভালিনের চায়ে বিষ মেশানো হয়। বিজ্ঞানীরা অসুস্থ ইয়াসির আরাফাতের শরীরেও বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ পলেনিয়ামের অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন; এটাই তার মৃত্যুর কারণ। চীনে চীন বংশের সম্রাট হুন কুয়াংশু ক্ষমতাচ্যুত হলে গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় বিষ খাইয়ে তাকে মারা হয়েছে। একজন মোগল সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহচর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা করতে দেওয়া হয়নি ফরাসি চিকিৎসককে। কারণ, পরবর্তী সময়ে মোগল সম্রাটের বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। সারা বিশ্বে এমন দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি।’
বিএনপি নেতা রিজভী প্রশ্ন করেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে সুস্থ অবস্থায় প্রবেশ করেন, তাহলে কী কারণে এত জটিল দুরারোগ্য ব্যাধিতে তিনি আক্রান্ত হলেন?’
খালেদা জিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বেগম জিয়ার রোগব্যাধির ভয়াবহতা এখন চরম পর্যায়ে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আথরাইটিসে আক্রান্ত। কারাগারে যাওয়ার পরে যকৃতের রোগ (লিভার সিরোসিস) দেখা দিয়েছে। যে রোগের কারণে তার পোর্টাল হাইপারটেনশন, পেট ও ফুসফুসে পানি আসা, অন্ত্রের রক্তক্ষরণ হচ্ছে—যার চিকিৎসা এ দেশে আর সম্ভব নয় বলে মেডিক্যাল বোর্ড ইতোমধ্যে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নেই। তার হৃদযন্ত্রের অবস্থাও ভয়ানক অবনতির দিকে। ইতোমধ্যে তার হৃদপিণ্ডে একটি রিং বসানো হয়েছে।’
‘বর্তমানে তিনি কিডনি রোগের জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে সব মিলিয়ে দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে। বারবার তাকে সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে’, বলেন রিজভী। 
তিনি বলেন, ‘ক্রোধ মেটাতে অপমান ও বিপন্নতাকে প্রকট করে তুলেছেন শেখ হাসিনা। দেশনেত্রীকে জীবন-মৃত্যুর পথরেখায় ঠেলে দেওয়া সেই অবিরাম আগ্রাসী হিংসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন প্রতিক্ষণ।