সরকার পতনের একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনের মহাযাত্রা শুরু করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত পূর্বঘোষিত সমাবেশে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসাসহ একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ আয়োজনে এই সমাবেশ হয়। একই দিন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আরও পাঁচটি দল ও জোট পৃথক সমাবেশ থেকে একই কর্মসূচি ঘোষণা করে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, সামনে কয়েকটা দিন সময় আছে। দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যে সিদ্ধান্ত নিন আপনারা কী করবেন। পদত্যাগ করে সসম্মানে একটা সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) নেবেন, নাকি জনগণ দ্বারা বিতাড়িত হবেন। এটা খুব প্রয়োজনীয় একটি কথা। তাই আবার সরকারকে আহ্বান জানাই, জনগণের ভাষা, তাদের আওয়াজ বুঝতে পেরে পদত্যাগ করুন। শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন, যেটা সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
সমাবেশ থেকে একদফা দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল। এই ২৮ অক্টোবরের আগে সরকারকে পদত্যাগ করে নিরাপদ প্রস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আংশিক কর্মসূচি। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। তারপর সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আর থেমে থাকবে না। অনেক বাধা আসবে, অনেক বিপত্তি আসবে, তা অতিক্রম করে আমরা জয়ী হব। বারবার বলছি, আমাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এর মাধ্যমে আমরা এই অশান্তি সৃষ্টিকারী, সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাব।
সরকার দেশে আরেকটি সংকট তৈরি করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সংবিধানে নিয়ম আছে রাষ্ট্রপতি যদি দেশের বাইরে যান, তাহলে কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে। অর্থাৎ এই রাষ্ট্রে এখন কোনো রাষ্ট্রপতি নেই, দেওয়া হয়নি। এখানেও তারা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ও অসাংবিধানিক কাজ করছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, জনসমাবেশকে নস্যাৎ করার জন্য ২৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, এই সরকার অত্যন্ত ভয় পেয়েছে, ভীত হয়েছে। তারা কাঁপছে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এত মামলা-অত্যাচার-নির্যাতনে করে দেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। গত ছয় মাসে ৯৬ জন নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের পরিকল্পনা হচ্ছে আমরা যারা নির্বাচন করতে পারি- এ ধরনের ব্যক্তিকে যদি সাজা দিয়ে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা যায়, তাহলে তাদের মাঠ পরিষ্কার। কতটা ভীত হলে তারা আজকে এ ধরনের ব্যবস্থাগুলো নিচ্ছে।’
চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ লড়াই শুধু বিএনপির নয়, ১৮ কোটি মানুষের লড়াই। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঘরে ঘরে এই বার্তা পৌঁছাবেন, এখন দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। সেই জাগরণের মধ্য দিয়েই দ্রুতই এই সরকারের পতন দেশের মানুষ ঘটাবে’।
মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা নাকি ১৮ অক্টোবর বসে পড়ব। বসে পড়লে নাকি শাপলা চত্বরের অবস্থা করবে। তার অর্থ দাঁড়ায় আপনারা (সরকার) শাপলা চত্বরে খুনখারাবি করেছেন। শাপলা চত্বরে আপনারা হাজার হাজার লোক মেরেছেন- এটা আপনি নিজে স্বীকার করে নিলেন। শাপলা চত্বরের এই হত্যাকা- একটি ঐতিহাসিক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা, যেটা ওবায়দুল কাদের আপনি স্বীকার করে নিলেন। তিনি বলেন, আমরা কি বসে পড়ব- এ কথা বলেছি? আমাদের বসাবসির কোনো কর্মসূচি নেই। আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি আসছে, সেখানে বসে থাকার অবকাশ নেই। শাপলা চত্বরে ওই দিন যারা ছিলেন, ওরা আর আমরা এক না। আমরা জনগণের ভোটে তিন তিনবার নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছিলাম।