স্মরণকালের বৃহৎ জামাত

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশ নিলেন ছয় লাখের বেশি মুসল্লি

প্রত্যেককে একটি করে গাছের চারা রোপণ করতে বললেন শোলাকিয়ার ইমাম
ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৮:২০
আপডেট  : ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৮:৫৩

লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে শেষ হলো শোলাকিয়ার ঈদের জামাত। সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল ১০টায় শোলাকিয়ায় ১৯৮তম ঈদুল ফিতরের জামাতে ইমামতি করেন শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজবেহ রহমত বলেন, এবারও দেশ-বিদেশের প্রায় লাখ মুসল্লি এ ময়দানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। এবারের জামাত স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মুসল্লিরা অংশ নেয়। এবারের জামাতের ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি অংশ নেয়।

মুসল্লিদের উদ্দেশে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ বলেন ‘আমি নাগরিক রেসপন্সিবিলিটি থেকে, বিশ্বনবীর (সা.) পক্ষ থেকে পরামর্শ এবং রিকোয়েস্ট রাখতে চাই, এই যে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে আমরা সমাবেত হলাম। এক বছর সময় আপনাদের আমি দিলাম। পৃথিবীর জন্য দেশের মানুষের জন্য প্রত্যেকেই একটা করে গাছের চারা বাড়িতে রোপণ করে আবার এই ময়দানে আসবেন ইনশাআল্লাহ।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতে বেশি মুসল্লি হয়। যেহেতু আপনারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, ঈদুল আজহার জামাতকে আমরা সুন্দর করতে চাই। বর্তমান বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যারা কষ্টে আছেন, ফিলিস্তিনের গাজার মুসলমানদের জন্য আমরা সবাই দোয়া করবো ইনশাআল্লাহ।’
দীর্ঘ ১৫ বছর পর ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমামতি ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুফতি মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। এসময় তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
আগের দিন রোববার থেকে শুরু করে সোমবার ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ মুসল্লির ঢল নামে শোলাকিয়া ময়দানে। সকাল সাড়ে ৮টার আগে মাঠ কানায় কানায় ভরে যায় ময়দান। সকাল ১০টায় নামাজ শুরু হলে শোলাকিয়া মাঠে উপচেপড়া ভিড়ের কারণে আশপাশের রাস্তা-ঘাট, বাসাবাড়ির ছাদ, নরসুন্দা নদীর পারে মুসল্লিরা নামাজের কাতার করে দাঁড়িয়ে যান।
ঈদগাহ ময়দানের রেওয়াজ অনুযায়ী নামাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগে পরপর তিনবার শটগানের গুলি ছুড়ে মুসল্লিদের নামাজে দাঁড়ানোর সংকেত দেওয়া হয়।
শোলাকিয়ায় নামাজ আদায়ে দুদিন ধরে নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, যশোরসহ ৬৪টি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে কিশোরগঞ্জে লোক আসতে শুরু করে। অনেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাসায়, আবাসিক হোটেল, শহরের মসজিদগুলোতে এবং ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে রাত যাপন করেন। ভোররাতে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও হেঁটে হাজারো মানুষ কিশোরগঞ্জে আসেন। সবার গন্তব্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।
নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মা বিশেষ করে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।