ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফিলিস্তিনের ওপর বারবার আঘাত মেনে নেওয়া যায় না।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি ১৫০টি সেতুসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে এক হয়ে ফিলিস্তিনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমরাও এর সঙ্গে আছি। আমাদের লড়তে হবে। এভাবে বারবার তাদের ওপর আঘাত হানা এটা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। এটা আমরা মানতে পারি না।
ফিলিস্তিনকে তাদের জমি ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কথা হলো দ্রুত এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিনবাসী যেন তাদের ন্যায্য জায়গা ফেরত পায়। যে জায়গাগুলো ইসরায়েল দখল করেছে সেই জায়গাগুলো ফেরত দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে, আমরা শান্তি চাই। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা নিজেরা জীবন দিয়ে দেখেছি।
তিনি বলেন, আজ ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর ইসরায়েল যেভাবে হামলা করে, বিশেষ করে হাসপাতালে হামলা করে নারী, শিশু, মানুষকে যেভাবে হত্যা করেছে, আমরা এর নিন্দা জানিয়েছি। যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে, শিশু হত্যা করেছে তাদের চেহারা সহ্য করা যায় না।
অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং যুদ্ধ বন্ধ করে সেই টাকা সারা বিশ্বের শিশুদের শিক্ষা এবং শান্তির জন্য ব্যয় করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
গাজায় হতাহতের ঘটনায় এক দিনের শোক পালন করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শনিবার আমরা একটা দিন শোক দিবস ঘোষণা করেছি। সেইদিন আমাদের পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
আগামী শুক্রবার সারাদেশের মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফিলিস্তিনবাসীর জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেন তিনি।
গাজায় সহায়তা পাঠানো হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনে ওষুধ, শুকনা খাবার, প্রয়োজনীয় পণ্য আমরা পাঠাব। আমরা সবসময় দুর্গত মানুষের পাশে আছি।
গাজা ইস্যুতে যারা চুপ, তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখি অনেকে চুপ থাকেন, কারণ যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা আবার যদি নাখোশ হয়, তাই নির্যাতিতদের পক্ষে কথা বলার সাহস তাদের নেই। তারা আবার আন্দোলন করে পদত্যাগের ডাক দেয়।
উদ্বোধন হওয়া ১৫০টি সেতুর মধ্যে ৪০টি ময়মনসিংহ বিভাগ, ঢাকায় ৩২টি, চট্টগ্রামে ২৭টি, রাজশাহীতে ২২, খুলনায় ১২টি, বরিশাল ও রংপুরে ৮টি করে এবং সিলেটে একটি সেতু। একই সঙ্গে তিনি মহাসড়কের ওপর নির্মিত ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধন করেন।
একই অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটখালি সেতু এবং রহমতপুর সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
দেশের দীর্ঘতম স্টিল আর্চ সেতু কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণে খরচ হবে মোট ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং রহমতপুর সেতু নির্মাণে খরচ হবে ৩৫৮ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুনে সেতু দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
এ অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর মিরপুরে ১০৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্রসহ রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নবনির্মিত ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেটর অথরিটি (ডিটিসিএ) ভবন, ময়মনসিংহে বিআরটিসি’র বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
এ সময় বিভিন্ন সময় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬২ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারকে আর্থিক সহায়তা হিসাবে ৭ কোটি ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
২০১৮ সালে আইন হওয়ার পর এই প্রথম দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ দিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
অর্থ প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকজনের হাতে অনুদানের টাকা তুলে দেন
সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আবেদনকারীদের আগামীতে ধারাবাহিকভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বিধিমালা অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে পাঁচ লাখ টাকা এবং দুর্ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে ভুক্তভোগী তিন লাখ টাকা সহায়তা পাবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান রওশন আরা মান্নান।
ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয় এবং ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠ থেকে জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত আছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী গেল বছরের ৭ নভেম্বর ১০০ সেতু এবং ২১ ডিসেম্বর ১০০টি সড়ক ও মহাসড়ক উদ্বোধন করেছিলেন।