চাকরিপ্রার্থীদের‘মার্চ টু পিএসসি’ কর্মসূচি পালন

বিসিএস পরীক্ষার জটে হিমশিম সরকারি কর্ম কমিশন

অজানা কারণে মৌখিক পরীক্ষার গতি স্লথ হয়ে গেছে
ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০

সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) বিসিএস পরীক্ষার জট লেগেছে। ৪৪ থেকে ৪৭তম পর্যন্ত চারটি পরীক্ষার কার্যক্রম নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে চার বছরেও শেষ হয়নি ৪৪তম বিসিএসের কার্যক্রম। ৪৫তম আটকা তিন বছর, আর ৪৬তম দুই বছর। 
আর্থিক, মানসিকসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিপ্রার্থীরা গতকাল রোববার ‘মার্চ টু পিএসসি’ কর্মসূচি করেছেন। তারা আগারগাঁওয়ে পিএসসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। পরে জটে পড়া প্রতিটি বিসিএসের দিন-তারিখসহ সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে পিএসসি চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেন।
সাধারণত প্রতিবছর নভেম্বরে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। গত পাঁচ বিসিএসে এমনই হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি হলেও বাছাই, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা সময়মতো হয়নি। ফলে জটের কারণে পরবর্তী পরীক্ষাগুলোয় দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই প্রার্থীর বারবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যেমন কষ্টের, তেমনি রাষ্ট্রীয় সম্পদেরও অপচয় হয়। নতুনরা চাকরির সুযোগ হারাচ্ছেন। পুরোনো প্রার্থীরা জায়গা দখল করে রাখায় বিসিএস জট সৃষ্টি হচ্ছে।
মৌখিক পরীক্ষায় আটকা ৪৪তম
বর্তমানে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর এ বিসিএসের আবেদন শুরু হয়। ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন আবেদন করেন। ২০২৩ সালের ২৭ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। ২৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের মাধ্যমে রেকর্ড করে পিএসসি, উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ৭০৮ জন। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ৪৪তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ কর্মকর্তা নিয়োগ পাবেন।
১৫ মাসেও হয়নি ৪৫তমের লিখিতের ফল
৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা হলেও আটকে আছে ফল। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি, এর পর ২০২৩ সালের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলে উত্তীর্ণ হন ১২ হাজার ৭৮৯ জন। লিখিত পরীক্ষা গত বছরের ২৩ জানুয়ারি শুরু হয়। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়। এ বিসিএসে আবেদনকারী ৩ লাখ ৪৬ হাজারের মধ্যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন। ১৫ মাস পার হলেও লিখিত পরীক্ষার ফল হয়নি।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে ২ হাজার ৩০৯ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। আর নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জন।
প্রশ্ন ফাঁসে অভিযুক্ত ৪৬তম
প্রায় এক বছর আগে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠলেও নাকচ করে পিএসসি। গত বছর এপ্রিলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। ৯ মের ফলে ১০ হাজার ৬৩৮ জন উত্তীর্ণ হন। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ফল বাতিলের আন্দোলন শুরু হলে পিএসসি নতুন করে ফল প্রকাশ করে। এতে আগের উত্তীর্ণের সঙ্গে যুক্ত হন ১১ হাজার জন। এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা
বিসিএসজটে হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরিপ্রার্থী অম্লান চাকমা অনম সমকালকে বলেন, বেকারদের কষ্ট পিএসসি বুঝতে চায় না। সোহরাব কমিশনের প্রথম ধাপে জেনারেল ক্যাডারের জন্য প্রায় ৫ হাজার প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান মোনেম কমিশন তা বাতিল করেছে।
আরেক চাকরিপ্রার্থী শাহমিকা শাহরিন অনামিকা বলেন, তিনটি বিসিএস পরীক্ষা চার বছর ধরে চলছে। আমরা খুবই হতাশ; ক্ষুব্ধও। বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছিলেন, সদস্য কম, নতুন সদস্য নিয়োগ পেলে ৪৪তম ভাইভায় গতি পাবে। দ্রুত ফল দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সদস্য বাড়ার পর অজানা কারণে মৌখিক পরীক্ষার গতি স্লথ হয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফরিদুল ইসলাম বলেন, “বিসিএস দিতে এসে টানা চার বছর ধরে একই জায়গায় ‘ট্র্যাপড’ হয়ে থাকা আমাদের মতো মানুষের আর্তনাদ ধারণ করতে না পারা লোকজনই পিএসসির কর্ণধার। সবই নিয়তি, কিছুই বলার নেই।” সিলেটের বিসিএসপ্রার্থী আমিনুল হক বলেন, ‘আগের বিসিএসগুলোর কার্যক্রম আগে শেষ করা দরকার। পিএসসি শুধু পরীক্ষা নিচ্ছে, কোনো ফল দিচ্ছে না। এভাবে চলতে পারে না।’
পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম  বলেন, ‘সব বিসিএসের রোডম্যাপ রয়েছে। দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। এখন আমাদের অগ্রাধিকার ৪৪তম। নানা কারণে এটি দেরি হয়ে গেছে। এখন দ্রুত ৪৪তমের মৌখিক পরীক্ষা শেষ করে ফল দিতে চাই। অন্যান্য বিসিএসের কার্যক্রমও এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’