হাওর থেকে প্রতিদিন ট্রলারযোগে ধান আসছে ভৈরব বাজারের বিভিন্ন মোকামে। নেত্রকোনার কালিয়াজুড়ি, কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইনের কৃষকরা বিক্রির জন্য নদী পথে এসব ধান নিয়ে আসছেন। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, একাধিক ট্রলারভর্তি ধান হাওর থেকে ভৈরবে নিয়ে এসেছে কৃষক ও বেপারীরা। অসংখ্য ট্রলার ধান ভর্তি করে এসেছে বিক্রির আশায়। এসব ধান বাজারের আড়তগুলিতে আমদানি করা হচ্ছে। আবার নদীর পাড়ে স্তূপ করে মজুত রাখা হচ্ছে ধান। তবে নতুন ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা হতাশ।
ভৈরব বাজারে নতুন মোটা ধান বিক্রি হয় প্রতি মণ ৮০০ টাকা থেকে ৮২০ টাকা দরে। তবে চিকন ধান বিক্রি হয় প্রতি মণ ১০০০ টাকা দরে। এর একমাস আগেও পুরান ধান প্রতিমণ বিক্রি হয়েছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে। নতুন ধান আমদানি হওয়ায় ধানের দাম এক লাফে মণ প্রতি ৫০০ টাকা কমে গেছে।
আড়ৎ মালিকরা জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাসে নতুন ধান আমদানি হলে দাম কমে যায়। তবে সরকার এবার বোরো ধান কেনার দর নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা। এতে মণ প্রতি দাম হয় ১৫০০ টাকা। এখনও সরকার ধান কেনা শুরু করেনি। সরকার ধান কেনা শুরু করলে ধানের দাম বাড়বে।
স্থানীয়রা জানায়, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার হাওরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। নদীপথে ট্রলারে আনা সহজ ও পরিবহন খরচ কম লাগে বলে কৃষক ও বেপারীরা নতুন ধান কাটার পর ভৈরব বাজারে নিয়ে আসে। এখানে একাধিক ধানের আড়ৎ রয়েছে। আশুগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রামের রাইস মিল মালিকরা নতুন ধান কিনতে ভৈরব বাজারের আড়তে আসে। এছাড়া এসব ধান স্থানীয় রাইসমিল মালিকরাও ধান কিনছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান হাওর থেকে আসবে ভৈরবে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার হাটের দিন মেঘনা নদীর পাড়ে কম হলেও ২০ থেকে ৩০টি ট্রলারে হাজার হাজার মণ ধান আমদানি হয়।
ভৈরবের ধান আড়ৎ মালিক মাহবুব মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন যাবত নতুন ধান আসতে শুরু হয়েছে। হাওরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। এখন কৃষকরা আগাম জাতের ধান কেটে কাচা ধান নিয়ে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছে। কাচা ধান শুকানোর পর ওজন কমে যায়। রাইস মিলে ধান ভাঙলে চালের পরিমাণ কম হয়। তাই ধানের দাম এখন কম। জ্যৈষ্ঠ মাসে শুকনা ধান আসলে হলে আর সরকার ধান চাল কেনা শুরু করলে দাম কিছুটা বাড়বে।
আরেক আড়ৎদার আলী হোসেন বলেন, ভৈরবের মোকামে প্রচুর ধান আসছে কিন্তু ক্রেতা কম থাকায় বিক্রি কম হচ্ছে।
হাওরের ইটনা উপজেলা থেকে ভৈরবে আসা কৃষক আমজাদ আলী বলেন, আমি ১০০ মণ নতুন ধান এনে ৮০০ টাকা মন দরে বিক্রি করেছি। এতে আমি হতাশ। কারণ একমণ ধান উৎপাদনে এখন ৮০০ টাকার উপরে খরচ হয়।
আবদুর রশিদ বেপারি বলেন, আমি হাওরের নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলা থেকে ২০০ মণ ধান ৭৮০ টাকা দরে কিনে ভৈরবে এনে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে লোকসান হয়েছে।
ধান কিনতে আসা রাইস মিল মালিক খোরশেদ মিয়া জানান, ধানের দাম কম থাকায় আমরা খুশি।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, এখন পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহে হাওরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। সরকারিভাবে ধানচাল কেনা শুরু হলে ধানের দাম বেড়ে যাবে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে ধানের দাম কিছুটা কম থাকে। তিনি বলেন, কৃষকরা ধান শুকিয়ে রেখে দুইমাস পর বিক্রি করলে তারা ন্যায্য মূল্য ঠিকই পাবে।