আমি একজন শহীদের মা বলছি

আওয়ামী লীগকে আর কোনোভাবেই রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ২২:০৪

জুলাই, পিলখানা, শাপলা গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে ‘শহীদি সমাবেশ’ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল সোয়া ৩টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শুরুতেই বক্তব্য দেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
যাত্রাবাড়ীতে নিহত শহীদ সাইমের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল যে, ওকে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে? আমি একজন শহীদের মা বলছি— এ দেশে আওয়ামী লীগকে আর কোনোভাবেই রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না।’
শাপলা চত্বরের ঘটনায় শহীদ আল-আমিনের ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজের হাতে ভাইয়ের মরদেহ তুলেছিলাম ২০টা মরদেহের স্তূপ থেকে। এ নৃশংসতা যদি বিচার না হয়, তাহলে কীসের বিচার হবে?’
জুলাই হত্যাযজ্ঞে নিহত ১৫ বছরের আব্দুল্লাহ ইফতির মা আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে বলেন, ‘আমার ছেলের মস্তিষ্ক রাস্তায় ছিটকে পড়ে ছিল। এ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে আর এ দেশের মাটিতে পা রাখতে দেওয়া যাবে না। আমি বিচার চাই। আমি গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার চাই।’
জুলাই শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা বলেন, ‘এ আওয়ামী লীগ শুধু দেশের সম্পদ লুটপাট করেনি, বিদেশি ষড়যন্ত্রে অর্থায়ন করছে। এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। আমাদের সন্তানের রক্ত বৃথা যেতে পারে না।’
উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কাছে অনুরোধ জানিয়ে জুলাই আন্দোলনে শহীদ রফিকুল ইসলামের ১৩ বছরের ছেলে বলে, ‘নয় মাস হয়ে গেছে। আমি জানি না আমার বাবার দেহ রায়ের বাজারে কোথায় আছে। ভিডিওতে হত্যাকারীদের দেখেছি, কিন্তু পুলিশ কিছুই করছে না। আমি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্যারের কাছে অনুরোধ করছি—আপনি দয়া করে বিচারের ব্যবস্থা করুন। না হলে জনগণ আপনাকেও ক্ষমা করবে না।’
শুধু শোক নয়, রাজনৈতিক নেতা এবং শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আন্দোলনকারীদের মুখেও ছিল আওয়ামী লীগ বিচারের দাবি।
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে দাবি করে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) প্রধান সংগঠক আলী আহসান মোহাম্মদ জুনায়েদ বলেন, ‘যারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছে, ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করেছে, তারা রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি আমাদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি করতে চায়— তাহলে সেটা আমরা হতে দেবো না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘নয় মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার এখনো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বা নিবন্ধন বাতিলের কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেনি— এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমরা নির্বাচন বা সংস্কার চাই না, আগে চাই ন্যায়বিচার। সরকার যদি ন্যায়বিচার না করে তাহলে তাদের হাতেও রক্ত লেগে থাকবে।’
জুলাই আন্দোলনে আহত সৌরভ ইসলাম বলেন, ‘যারা আবার এ গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, তারা জেনে রাখুক—আমাদের শরীরে এখনো রক্ত আছে। আর একবার রক্ত দিতে আমরা প্রস্তুত।’
আওয়ামী লীগকে মাফিয়া দাবি করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং তাদের ১৪ দলীয় জোট একটি জীবিত মাফিয়া। তারা আজকের যুগের নাৎসি পার্টি। আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণ করবে ১৪০০ শহীদ পরিবারের রক্ত। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হোক একটি গণতান্ত্রিক অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনো ব্যর্থ।’
সমাবেশ থেকে যে চারটি মূল দাবি উত্থাপন করা হয়

• আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার একটি দৃশ্যমান বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং নির্বাহী, বিচারিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

• শাপলা চত্বর গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

• পিলখানা হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে এবং তার সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।

• সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে একটি স্পষ্ট ধারা রাখতে হবে, যেখানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগযুক্ত গণহত্যাগুলোর বিচারের অঙ্গীকার থাকবে।