শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস কে শরীফুল আলমকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রথমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এমন তথ্য জানানো হয়।
অবশ্য পরদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। আচার্য অনুমোদন করলেই তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে। এরপর শূন্যপদে নতুন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে।
তবে পদত্যাগপত্র পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শরীফুল আলম। উল্টো তাকে অব্যাহতি না দেওয়ার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর চিঠি লিখেছেন তিনি। সেখানে অধ্যাপক শরীফুল নিজেকে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি’ উল্লেখ করে তাকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক মাছুদের বিরুদ্ধে ‘বিষোদগার’ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কুয়েট উপ-উপাচার্য ই-মেইলযোগে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সিআর) আবরার কে এ চিঠি দেন। চিঠির একটি কপি মিডিয়ার হাতে এসেছে।
শিক্ষা উপদেষ্টাকে লেখা চিঠিতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শরীফুল আলম লেখেন, ‘জুলাই ২০২৪ অভ্যুত্থানে আমি ছাত্র-জনতার পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখি। পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর আমাকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। উপ-উপাচার্য পদে যোগদানের পর বিভিন্ন দাপ্তরিক সভা-সিন্ডিকেটে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি।’
যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজে তাকে কোনো সহযোগিতা করেননি এবং তাকে কোনো কাজ করতে দেওয়া হয়নি অভিযোগ করে উপ-উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক উপ-উপাচার্যের সীমিত আকারে প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজ করার যে নীতিমালা ছিল, তা গত ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বাতিল করে দেওয়া হয়।
‘ফলশ্রুতিতে গত ৪ মাসে প্রশাসনিক কার্যাদি এবং আর্থিক বিলে সই করতে না দিয়ে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদটিকে শুধুমাত্র একটি অলংকারিক পদে পরিণত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে আমি শুধুমাত্র লাইব্রেরি কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করি।’
কুয়েট ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তিনি কাজ করেছেন উল্লেখ করে চিঠিতে লেখেন, এ অবস্থায় গত রাতে (বুধবার) বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি যে, সরকারের পক্ষে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাস্তবতা হলো- আমি নিজে এখনো আমার অপরাধ সম্পর্কে জানি না। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি, যা খুবই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে শিক্ষার্থী, ছাত্রদল ও বহিরাগতদের সংঘর্ষে অধ্যাপক শরীফুল আলমও আহত হন দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত ন্যাক্কারজনক হামলার সময়ে ছাত্র ও বহিরাগত সন্ত্রাসী উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি এবং আমার শরীরে দুটি ঢিল বা পাটকেল লাগে। এতে ছাত্রদের সঙ্গে আমি নিজেও আহত হই। এ ব্যাপারে সাধারণ ছাত্রদের বক্তব্য নেওয়া যেতে পারে ও ঘটনার ফুটেজ দেখা যেতে পারে।
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়া এবং কোনো অপরাধ বা অপকর্ম না করে অব্যাহতি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুল বার্তা যাবে বলে মনে করেন ড. শরীফুল আলম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষা উপদেষ্টাকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি সত্য বলে নিশ্চিত করেছেন কুয়েট উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শরীফুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমি অপরাধ করিনি, কোনো অপরাধে বা ছাত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। তাহলে আমাকে কেন উপাচার্যের সঙ্গে মিলিয়ে অব্যাহতি দেওয়া হবে? আমার অপরাধ বা অযোগ্যতা কী, সেটা জানার অধিকার আমার রয়েছে। সেজন্য আমি চিঠিটি দিয়েছি।
উপ-উপাচার্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারও ফোন কল রিসিভ করেননি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘পুরো প্রক্রিয়াটি শিক্ষা উপদেষ্টা পর্যবেক্ষণ করছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনা করে কুয়েটে শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে যা যা করণীয়, তা মন্ত্রণালয় করবে। উচ্চপর্যায়ের যে টিম সেখানে গেছেন, তাদের পরামর্শও নেওয়া হবে।’