সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গত রোববার হঠাৎ লন্ডন সফরে যান। এ নিয়ে সিলেটে এখন নানা আলোচনা চলছে।
আরিফুলের লন্ডন সফর নিয়ে নগরে দুটি বিষয় চাউর হয়েছে। একটি পক্ষ বলছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদে নিয়োগ পাওয়ার একটি প্রস্তাব আরিফুল পেয়েছেন। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘সিগন্যাল’ পেলে তিনি এ দায়িত্ব নিতে পারেন।
আরেকটি পক্ষ বলছে, প্রশাসক পদে নিয়োগের কোনো প্রস্তাব আরিফুল পাননি। তিনি মূলত আগামী সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে তাঁর আগ্রহের বিষয়টি জানাতেই আরিফুল যুক্তরাজ্য গেছেন।
আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি বলেন, বিএনপির মনোনয়নে আরিফুল টানা দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়ে সিলেটে অনেক উন্নয়নকাজ করেছেন। দল-মতনির্বিশেষে সব মহলের কাছে তাঁর একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরিফুলকে অংশ নেওয়ার জন্য দলের বাইরের ভোটারদের চাপ ছিল। তবে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় জয় অনেকটা নিশ্চিত জেনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
সাবেক মেয়রের কর্মী-সমর্থকদের আশা, আরিফুল দলের প্রতি অনুগত হয়ে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচন কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যেকোনো একটিতে মনোনয়ন পাবেন। মূলত কোন নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পেতে পারেন, এ–সম্পর্কিত একটা ধারণা পেতে আরিফুল হক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে লন্ডনে গেছেন।
আরিফুল বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য। এর আগে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন একসময়ের ছাত্রদলের প্রভাবশালী এই নেতা।
গতকাল বুধবার রাতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয় আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে। হঠাৎ লন্ডন সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার নাতনিকে দেখতে এসেছি। যেহেতু লন্ডনে এসেছি, স্বাভাবিকভাবেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করব।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরিফুলের ঘনিষ্ঠ এক প্রবীণ নেতা বলেন, ‘ইতিমধ্যে তারেক রহমানের সঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরীর মুঠোফোনে কথা হয়েছে। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) থাকায় তিনি (তারেক) পারিবারিক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে আরিফুলকে তিনি (তারেক) লন্ডনে কিছুদিন অবস্থান করতে বলেছেন। তাই আরিফুল অপেক্ষা করছেন। শিগগির দেখা করে আরিফুল দেশে ফিরবেন। তখনই জানা যাবে লিডারের (তারেক) সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে। এর আগে প্রকৃত তথ্য অনুমান করা মুশকিল।’
এদিকে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, আরিফুলের ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে তাঁর মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব ও বিরোধ আছে। এ ছাড়া জাতীয় নাকি স্থানীয় কোন নির্বাচনে তাঁকে দল প্রার্থী করা হতে পারে, সেটাও আরিফুল এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নন। এ জন্য আরিফুলের মধ্যে একটা দোলাচাল আছে। এ সংশয় দূর করতেই তিনি লন্ডনে গেছেন বলে দলের অনেকে মনে করছেন।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরিফুল মূলত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। তাঁর প্রথম পছন্দ সিলেট-১ আসন। তবে এখানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর। বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতা আগামী নির্বাচনেও এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক। ফলে মুক্তাদীরকে ডিঙিয়ে আরিফুলের এখানে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। এ ক্ষেত্রে আরিফুলকে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলের ভেতরে আলোচনা আছে।
অন্যদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাউর আছে। যদিও এখানে দলের ভেতরে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন। তাঁরা হচ্ছেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।