গুলি-সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে হামলার পরিণাম ভালো হবে না বলে সরকারকে হঁশিয়ার করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ সরকার, পুলিশ বাহিনী বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পন্ড করার লক্ষ্যে একের পর এক গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানান। রোববার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাসমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মহাসমাবেশে অংশ নিতে ভোর থেকে নয়াপল্টনে আসতে শুরু করে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টার আগেই একদিকে আরামবাগ, অন্যদিকে মৎস্যভবন, পল্টন মোড়, শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের পদচারণায় পূর্ণ হয়ে যায়। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ঢাকা মহানগরের বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কেউ কেউ তিন থেকে চার দিন আগেই ঢাকা পৌঁছান। কেউ এসেছেন পুলিশের তল্লাশি চৌকি ফাঁকি দিয়ে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে নয়াপল্টনে শুরু হয় গান-বাজনা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগে গান পরিবেশন করা হয়। দুপুর পৌনে ১টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ শুরু হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেওয়ার পরই শুরু হয় সংঘর্ষ। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের ধোঁয়া ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দের মধ্যে মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে চলে যেতে বাধ্য হন কেন্দ্রীয় নেতারা। কাঁদানে গ্যাসে সমাবেশস্থলে কারও পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। এতে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। ৩টার দিকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের ভেতরে যান নেতারা।
এর আগে বেলা ২টার দিকে মহাসমাবেশস্থলের মঞ্চ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কারও উসকানিতে পা দেবেন না, দয়া করে বসে যান। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নস্যাৎ করতে চায় সরকার। মির্জা ফখরুল যখন এ আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তখন কাকরাইলের দিক থেকে কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া আসছিল। তবে মহাসমাবেশের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। এ সময় মঞ্চ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দু-একটা পটকায় ভয় পাবেন না। গুলি হলে হবে।’
এরপর বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমান বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্যের শুরুতে স্লোগান ধরেন-‘শেখ হাসিনা ভোট চোর, ভোট চোর।’
তিনি বলেন, ‘এই চোরদের ধরতে হবে। যারা গুলি করে মানুষ খুন করে, মিথ্যা মামলা দেয়-সেই ভোট চোররা আর রেহাই পাবে না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গোলাগুলি করে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার তারা কেড়ে নিতে চাচ্ছে। এরা কারা? এরা ভোট চোরদের অংশীদার। এই ভোট চোরদের কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছে। তারা পার পাবে না।’
তার বক্তব্যের শেষদিকে এসে মাইক বন্ধ হয়ে যায়। তখন বেলা আড়াইটা। আমির খসরুর বক্তব্যের সময়ও বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কাকরাইলের দিক থেকে এই শব্দ যখন আসছিল, তখন মহাসমাবেশস্থলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে টিয়ারশেলের ধোঁয়া বিএনপির মঞ্চের দিকে আসতে থাকে। সোয়া ২টায় বিদ্যুৎ চলে গেলে বন্ধ হয়ে যায় মাইক। বেলা পৌনে ৩টায় একটি ভ্যানে করে রক্তাক্ত এক ব্যক্তিকে বিএনপির মঞ্চের সামনে আনা হয়। তখন উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
একপর্যায়ে বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়, আমিনুল হক, ইশরাক হোসেনসহ নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে কাকরাইলের দিকে যেতে থাকেন। তখন সমাবেশস্থলে কাঁদানে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে মঞ্চ ছাড়তে বাধ্য হন নেতাকর্মীরা। পরে মঞ্চে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল হ্যান্ডমাইকে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা দেন।
সরকার পতনের একদফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির মহাসমাবেশের আয়োজন করে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা। তবে অধিকাংশই বক্তব্য দিতে পারেননি।