যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘কথিত’ উপদেষ্টা মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়।
এর আগে শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আরেফী নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, কথিত উপদেষ্টা আরেফীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আরেফীর পুরো নাম জাহিদুল ইসলাম আরেফী। তার ডাক নাম বেল্লাল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে থাকেন। তিনি একজন বাংলাদেশি আমেরিকান। জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায়। তিনি মাঝে মাঝেই বাংলাদেশে আসেন।
এর আগে শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সঙ্গে বসে আরেফি কথা বলেন।
এ সময় তিনি নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা দাবি করে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্পূর্ণ পক্ষে। মার্কিন সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিরোধীদের আন্দোলনকে সমর্থন করে।বাইডেন ছাড়াও আরেফি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং বাংলাদেশে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
বিএনপি আমাকে শিখিয়ে জো বাইডেনের উপদেষ্টা বানিয়েছে
বিএনপির কার্যালয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ে সংবাদ সম্মেলন করা মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফী (মিয়ান আরাফী) দাবি করেছেন, তাকে কয়েকটি বিষয় শিখিয়ে এনে মিথ্যা পরিচয় দিয়েছে দলটি।
গত শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ও বিতর্কিত সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের “উপদেষ্টা’ পরিচয়ে বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
পরদিন রবিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে বিমানবন্দরে আরাফিকে আটক করে ডিবির হাতে তুলে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ।
ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মিয়ান আরাফি জানান, বিএনপি নেতা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর সঙ্গে ২৮ অক্টোবর বিএনপি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে দাবি করে মিয়ানজ জানান, বিএনপির শেখানো কথাই তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন।
ডিবি কার্যালয়ে দেওয়া বক্তব্যে আরাফি বলেন, “২৮ অক্টোবর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী আমাকে বিএনপির পার্টি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে ইশরাকও উপস্থিত ছিলেন। আরও অনেকে ছিলেন যাদের আমি চিনি না। পরে আমাকে তারা ডেমোক্রেট কমিটির লিডার এবং জো বাইডেনের এডভাইজর বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানান। আমি তাদের শিখিয়ে দেয়া কথা সেখানে বলি।”
নিজের ভুল স্বীকার করে তিনি বলেন, “আমাকে বিএনপি অফিসে শিখিয়ে দেয়া কথা বলানো হয়। আমি যা বলেছি তার জন্য আমি দুঃখিত, আমার ভুল হয়েছে। আমাকে তারা বুঝিয়ে দিয়েছিল কী বলতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাকে বলা হয়নি সেদিন বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বিচারপতির বাসভবনেও হামলা হয়েছে। রাস্তাতে আগুন লাগিয়েছে। একজন পুলিশও মারা যায়। অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এটা আমি জানতাম না। বিষয়টি তারা ঠিক করেনি, আমারও ভুল হয়েছে।”
এ সময় নিহত পুলিশের প্রতি শোক জ্ঞাপন করে ও বিএনপির জ্বালাও-পোড়াওয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তাদের এমন করা ঠিক হয়নি।”
বিএনপি কার্যালয়ে রহুল কবির রিজভীর সঙ্গেও কথা বলেন মিয়ান আরাফী
এর আগে রবিবার রাতে মিয়ান আরাফির বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, “বিএনপি নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতেই আরাফিকে দিয়ে মিথ্যা নাটক সাজানো হয়। তাকে বিএনপি নেতারা শিখিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি সব কথা স্বীকার করেছেন। তিনি একজন প্রবাসী।”
মিয়ান আরাফির বরাত দিয়ে হারুন আরও বলেন, “বিএনপি নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতেই আরাফিকে দিয়ে মিথ্যা নাটক সাজানো হয়। যে কথাগুলো তাকে বলতে বলা হয়েছিল, সেগুলোই তিনি বলেছেন। আসলে এসব কথা তাকে দিয়ে বলানো হয়েছে।”
উল্লেখ্য, মিয়ান আরাফির বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি সাংবাদিকদের বলেন, “এ ধরনের তথ্য পুরোপুরি অসত্য।”
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা মিয়ান আরাফি ওরফে জাহিদুল ইসলাম আরেফি বেল্লাল একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগুরক। তবে তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই, শুধু মার্কিন পাসপোর্ট রয়েছে। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায়।
২০২৩ সালে এইবার নিয়ে দ্বিতীয়বার ঢাকায় আসেন আরাফি। এর আগেরবার এসে টানা ৫ মাস তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করেন। এছাড়া ২০২২ সালেও তিনি দুইবার বাংলাদেশে আসেন।