ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এক রাতেই নারী ও শিশুসহ অন্তত ১০৫ বাংলাদেশিকে দেশের ছয়টি সীমান্ত দিয়ে পুশ-ইন করেছে। বুধবার (২১ মে) রাত থেকে বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল পর্যন্ত কুমিল্লা, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি ও ফেনীর সীমান্ত দিয়ে এই পুশ-ইনের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের আটক করে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন নিচে তুলে ধরা হলো:
পঞ্চগড়
সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে পুশ-ইন করা হয়। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন শিশু-কিশোর, ৬ নারী ও ১ তরুণ। তারা আগে ভারতের গুজরাটে কাজ করতেন। সেখান থেকে পুলিশ তাঁদের ধরে এনে বিএসএফের মাধ্যমে সীমান্তে ঠেলে দেয়।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ বদরুদ্দোজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লালমনিরহাট
পাটগ্রামের গাটিয়ারভিটা সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে পুশ-ইন করা হয়, যাঁদের মধ্যে ১১ নারী, ৭ শিশু ও ২ পুরুষ রয়েছেন। তাঁরা জানান, ভারতের জেলে ২০–২৫ দিন বন্দি থাকার পর বিএসএফ তাঁদের সীমান্তে এনে বাংলাদেশে পুশ-ইন করে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, আটক ব্যক্তিরা বাংলাদেশি দাবি করায় তাঁদের কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার
কুলাউড়ার মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে পুশ-ইন করা হয়। তাঁদের মধ্যে তিন শিশু, দুই নারী ও দুই পুরুষ। তারা ভারতের ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন এবং কুড়িগ্রামের বাসিন্দা বলে দাবি করেন।
মুরইছড়া ক্যাম্প কমান্ডার আবু তাহের বলেন, আজ ভোরে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে ওই ৭ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাঁরা নিজেদের কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা বলে দাবি করেছেন। ভারতে ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তাঁরা। প্রাথমিক যাচাইয়ের পর তাঁদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ফেনী
ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী সীমান্ত দিয়ে মোট ৩৯ জনকে পুশ-ইন করে বিএসএফ। তাঁদের মধ্যে ছয়টি পরিবারের ২৪ জন এবং আরও ১৫ জনকে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিজিবি আটক করে। অধিকাংশই ভারতীয় হরিয়ানা রাজ্যে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, সীমান্তে আটক ২৭ জনকে বিজিবি থানায় হস্তান্তর করেছে। আপাতত তাঁরা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ছাগলনাইয়া সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক ১২ জনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ছাগলনাইয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আটক ১২ জন ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের বাসিন্দা। বর্তমানে তাঁরা ছাগলনাইয়া থানার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত জানাবে।
কুমিল্লা
আদর্শ সদর উপজেলার গোলাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে পুশ-ইন করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ, ৩ নারী ও ৭ শিশু রয়েছে। বিজিবি ১০ ব্যাটালিয়নের তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা ও ফেনী জেলার সীমান্ত দিয়ে এক রাতে মোট ৫২ জন বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করা হয়েছে।
বিজিবির কুমিল্লা ব্যাটালিয়নের (১০ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ আজ দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, কুমিল্লা ও ফেনী জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে রাতের আঁধারে সর্বমোট ৫২ বাংলাদেশি নাগরিক পুশ-ইন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী এবং শিশু ও কিশোর ১৮ জন। অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় ওই ৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাঁদের বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে। তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলমান। যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষে তাঁদের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
খাগড়াছড়ি
রামগড় সীমান্ত দিয়ে আজ ভোরে ৫ জনকে পুশ-ইন করে বিএসএফ। তারা ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে ইটভাটায় কাজ করতেন এবং গভীর রাতে ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম সীমান্ত দিয়ে ফেনী নদীতে হাত-পা বেঁধে ফেলিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন। বর্তমানে তাঁদের রামগড় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ইসমত জাহান বলেন, পাঁচজনকে সাময়িকভাবে রামগড় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাঁদের উপজেলা প্রশাসন থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন ও রামগড় থানা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে, ৭ মে খাগড়াছড়ির তিনটি সীমান্ত দিয়ে ৭২ জনকে পুশ-ইন করেছিল বিএসএফ।
বিজিবি বলছে
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই ভারত থেকে ফেরত আসা শ্রমিক, যাঁরা বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সেখানে কাজ করতেন। তাঁদের পরিচয় যাচাই শেষে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।