‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ নিয়ে শুধু সচিবালয়ের কর্মচারীরাই নয়, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই অধ্যাদেশের যৌক্তিকতা নিয়ে মঙ্গলবার (২৭ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি অনানুষ্ঠানিক সচিবসভায় প্রশ্ন তোলেন একাধিক সচিব।
সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনরত কর্মচারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে হঠাৎ ডাকা হয় সচিবসভা। বৈঠকে প্রায় আধাঘণ্টা আলোচনায় কয়েকজন সচিব বলেন, এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকারের এত তাড়াহুড়া করা অনভিপ্রেত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে অংশ নেওয়া এক সচিব বলেন, ‘এই আইনটির সঙ্গে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারীর স্বার্থ জড়িত। হঠাৎ এত গুরুত্বপূর্ণ একটি আইন কেন সংশোধন করা হলো, আমরা কেউই তা বুঝতে পারছি না।’
সচিবালয়ের বাইরে অবস্থিত একটি মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রশ্ন তোলেন, ‘এত দ্রুত অধ্যাদেশটি কেন পাস করতে হলো?’ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভূমি সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি সচিব কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় সচিবালয়ে আন্দোলনরত কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠক শেষে ভূমি সচিব সাংবাদিকদের জানান, ‘কর্মচারীরা সদ্য পাস হওয়া অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। আমরা সেই দাবি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানাব।’
কর্মচারীদের পক্ষে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্যারদের সামনে অধ্যাদেশের ত্রুটিগুলো তুলে ধরেছি। স্যাররাও আমাদের যুক্তিগুলোর সঙ্গে দ্বিমত করেননি।’
অপর নেতা বাদিউল কবীর বলেন, ‘আমরা বুধবারের কর্মসূচি স্থগিত করেছি। সরকার দাবি না মানলে আবার আন্দোলনে নামব।’
অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গত চারদিনের মতো মঙ্গলবারও সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শত শত কর্মচারী বিক্ষোভে অংশ নেন। ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই সচিবালয়ের ভেতরে চলে মিছিল ও সমাবেশ।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদারে সোয়াট, বিজিবি, র্যাব ও এপিবিএন সদস্যরা সচিবালয়ের বিভিন্ন প্রবেশপথে মোতায়েন করা হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত সচিবালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাংবাদিকরাও ঢুকতে পারেননি। আন্দোলন দমনে ব্যবহারযোগ্য দুটি এপিসিও রাখা ছিল মূল গেটের বিপরীত পাশে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই অধ্যাদেশের খসড়ার সূচনা হয় স্বরাষ্ট্রসচিবের এক চিঠির মাধ্যমে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রথমে এতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন কট্টর সদস্যের চাপের মুখে এপ্রিল মাসে খসড়া তৈরি হয়। ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তা অনুমোদন পায় এবং ২৬ মে তা কার্যকর হয়।
তবে কর্মচারী সংগঠনগুলো শুরু থেকেই এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছিল। সরকারি ঘোষণার পরপরই তারা আন্দোলনে নামেন এবং এখন পর্যন্ত তা স্থগিত রাখা হয়েছে মাত্র একদিনের জন্য।