জীবিত ব্যক্তিকে জুলাই আন্দোলনে 'শহীদ' দেখিয়ে হত্যা মামলা

শেখ হাসিনা, কাদের, কামাল, শামীম ওসমানসহ ৪১ নেতা আসামি
ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩১ মে ২০২৫, ১২:৩১
কথিত মৃত সোলায়মান সেলিম

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া এলাকার সোলায়মান সেলিম নামের এক ব্যক্তি দাবি করছেন, জুলাই আন্দোলনে তাকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা হয়েছে। তার ঠিকানায় পুলিশ তদন্তে গেলে নিজের 'ভুয়া মৃত্যু' ও হত্যা মামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন।
জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কা থেকে স্থানীয় থানায় সম্প্রতি একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সেলিম।
৩ আগস্ট ঢাকার কাজলা এলাকায় গুলিতে মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি রুজু করা হয়। ওই মামলার বাদী সেলিমের আপন বড় ভাই।
যাত্রাবাড়ী থানায় সেলিম হত্যা মামলায় প্রধান আসামি শেখ হাসিনা। এছাড়া ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান কামাল, শামীম ওসমানসহ ৪১ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও দেড়শ থেকে দুশ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সেলিম হত্যা মামলার বিষয়টি প্রাথমিক তদন্ত করেছে যাত্রাবাড়ী ও ফুলবাড়ীয়া থানা।
বর্তমানে মামলাটি ডিবির তদন্তাধীন রয়েছে।
দুই থানা ও ডিবির তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার বাদী এই মুহূর্তে পলাতক আছেন। এছাড়া সেলিমের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত করতে ডিএনএ টেস্ট করা হবে।
ফুলবাড়ীয়ার ধামোর এলাকায় নিজ আঙিনায় বসে সেলিম জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
তার সন্দেহ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ভাই সাজানো হত্যা মামলা দিয়ে থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ীয়া থানায় হাজির হয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তার নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। ফুলবাড়ীয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিমের হত্যা মামলা এবং থানায় গিয়ে তার শঙ্কা প্রকাশের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন।
এ হত্যা মামলার বাদীর পাশাপাশি যে দুজন সাক্ষী তারাও সেলিমের আপন ভাই বলে উল্লেখ করে তিনি। তিন ভাইয়ের সঙ্গে সেলিমের জমিজমা নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকার কথাও জানান সেলিম।
তিনি বলেন, জীবিত থাকতে যদি কেউ মৃত দেখায়, তার চেয়ে দুঃখ আর কী হতে পারে? আমার ভাইয়েরাই দেখাইছে আমি নাকি মারা গেছি। আমারে মারার জন্যই এই মামলা করছে, জুলাই আন্দোলন উছিলা কইরা। এর মধ্যে আমারে মারতে পারলে এই মামলায় যারা আসামি তারা বিনা কারণে জেল খাটতো।
সোলায়মান সেলিম জানান, তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচবার ঢাকায় গিয়ে আদালত, থানা ও ডিবি কার্যালয়ে হাজির হয়ে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করেছেন। কিন্তু মামলাটি তাকে আতঙ্কে রেখেছে।
তার গ্রামেও বিষয়টি ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এ ধরনের ভুয়া মামলা নিয়ে মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, জুলাই-অগাস্টের মতো ঘটনাকে ম্লান করার একটা প্রচেষ্টা যখন একটা জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে মামলা করা হয়। একজন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে তারই আত্মীয়স্বজন মামলা করছেন- এটি কল্পনার বাইরে। এটি সরাসরি জুলাই-অগাস্টের শহীদদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো ঘটনা। এর মধ্য দিয়ে প্রধানত মামলাগুলোর দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘঠিত করেছে স্বৈরাচারী শক্তি, তাদের কিন্তু চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আপনি বেগ পাবেন।