জিআই স্বীকৃতি

বিশ্বে বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু নতুন ব্র্যান্ডিং হচ্ছে

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০২ মে ২০২৫, ১১:২২

সুন্দরবনের আয়তন ও মধু উৎপাদনের সিংহভাগ বাংলাদেশের। তবে গত বছর নিজেদের পণ্য হিসেবে মধুর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি নিয়েছিল ভারত। সেই থেকে বাংলাদেশের মৌয়াল, মধু ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতাকে দায়ী করে দ্রুত দেশের মধুর জিআই সনদের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে তাঁদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে।
গত বুধবার সুন্দরবনের মধুর জিআই নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। এই স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত সারা দেশের মধুওয়ালারা।
এ সম্পর্কে চট্টগ্রামের আল্ওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, দেশে প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় উৎস সুন্দরবন। ঘ্রাণ ও স্বাদে অতুলনীয় সুন্দরবনের মধুর বিশ্বজোড়া চাহিদা আছে। দেশের সুন্দরবনের মধু আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সারা দেশের মধুওয়ালাসহ সবাই। স্বীকৃতি পাওয়ায় আজ জুমার নামাজের পর অনেক মসজিদে আমরা শুকরিয়া দোয়া ও মিষ্টি বিতরণের আয়োজন করেছি। জিআই স্বীকৃতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধুর একটা নতুন ব্র্যান্ডিং হবে।’
গত বুধবার বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫ উদ্‌যাপন উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর আয়োজনে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান হয়। সেখানে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের হাতে সুন্দরবনের মধুর জিআই পণ্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সনদ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মমিনুর রহমান।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট আবেদন করা হয়েছিল। এরপর গত বছরের জুনে পুনরায় কিছু তথ্যাদি দাখিল করা হয়। আমরা অবশেষে সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতির সেই সুখবর পেয়েছি।
মমিনুর রহমান, বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)
আজ শুক্রবার মমিনুর রহমান উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মধুর জিআই নিবন্ধন সনদ পেয়ে দেশের সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার মৌয়াল, ব্যবসায়ী ও গবেষকদের মতো আমরাও আনন্দিত। সুন্দরবনের মধু জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট আবেদন করা হয়েছিল। এরপর গত বছরের জুনে পুনরায় কিছু তথ্যাদি দাখিল করা হয়। আমরা অবশেষে সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতির সেই সুখবর পেয়েছি। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের চেষ্টায় এমন স্বীকৃতি পাওয়া আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।’
সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার মৌয়াল আজিজুল হক বলেন, ‘সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মৌয়াল বাঘ, সাপ, কুমিরের ভয় উপেক্ষা করে সরাসরি সুন্দরবনে ঢুকে মধু সংগ্রহ করে। আমি ১৮ বছর ধরে সুন্দরবন থেকে মধুর চাক কাটি। আমরা সবাই সুন্দরবনের মধুর এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। দেশ-বিদেশে সুন্দরবনের মধুর ব্যাপক চাহিদা আছে। জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে মধুর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
সুন্দরবনের গাছ থেকে মৌচাক কেটে ড্রামে ভরে নিয়ে ফিরছেন এক মৌয়াল। ১৫ এপ্রিল খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনের ঝপঝোপিয়া নদী–সংলগ্ন এলাকায়ছবি: প্রথম আলো
কয়রার মধু ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাকবাড়িয়া নদী পেরোলেই ওপারে সুন্দরবন। সাত বছর ধরে সুন্দরবনের মধুর ব্যবসা করছি। এর গুণগত মান নিয়ে কখনো প্রশ্ন ওঠেনি। দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসে আমাদের কাছ থেকে সুন্দরবনের মধু কিনতে। এখন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় সুন্দরবন–সংলগ্ন এলাকায় মৈয়াল, মধু ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে।’
সাতক্ষীরার সুন্দরবন–সংলগ্ন গাবুরা এলাকার বনজীবী আশিকুর রহমান বলেন, ‘সুন্দরবনের মধু আমাদের এলাকার পণ্য। এটি জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা আনন্দিত। এই স্বীকৃতিতে বর্তমান সরকারের প্রতি সবাই কৃতজ্ঞ।’
জাতীয় মৌ মেলায় পুরস্কারপ্রাপ্ত মধু গবেষক সৈয়দ মো. মঈনুল আনোয়ার বলেন, সুন্দরবনের মধুর বেশিভাগ অংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধিসহ সুন্দরবন–সংলগ্ন উপকূলীয় জনপদের অর্থনীতিতে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশ্ববাজারে একদিকে যেমন এর চাহিদা বাড়বে, তেমনি ভালো দামও পাওয়া যাবে।