ফেনীর বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। সব কয়টি গ্রামের পানি নেমে গেছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে।
বন্যার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ সড়ক, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও মানুষের ঘরবাড়ি। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, জেলায় ১২৬টি গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, টাকার অংকে যার পরিমাণ ৯০ কোটি টাকা। শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন হাজার ৪৭০ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। প্রাণিসম্পদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৫ লাখ। ভেসে গেছে দুই হাজার ৩৩০টি পুকুর, দীঘি ও খামার।
পরশুরামের ধনীকুন্ডা এলাকার কৃষক গোলাম রহমান বলেন, ‘বন্যার পানিতে পাঁচ বিঘা জমির বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। বছর না ঘুরতেই আবারও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। বারবার এরকম হলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, ‘এখনো অনেক এলাকায় পানি রয়েছে। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র ও আর্থিক পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে। আমরা এরইমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব নিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাবনা দেওয়া হবে।’
ফুলগাজীর দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মাছ চাষি মহি আলমগীর। তার তিনটি পুকুরের আয়তন প্রায় তিন বিঘা। এবারের বন্যায় সবগুলো পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পরশুরামের অলকা গ্রামের মাছ চাষি আরিফুর রহমান বলেন, ‘বন্যার কারণে পুকুরের চারপাশে নেট জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছিলাম।তবে বাঁধ ভেঙে পানির তীব্র স্রোতে তা কাজে আসেনি। সবকিছু পানিতে ভেসে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের পাশে না দাঁড়ালে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব।’
ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতে কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের প্রণোদনা দিতে সরকারের কাছে তালিকা পাঠানো হবে।
বিজয়পুরের বিসমিল্লাহ পোল্ট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী আবুল হাসান জানান, বন্যায় তার খামারের দেড় হাজার মুরগি মারা গেছে। তার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম আর স্বপ্ন এক মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেছে।
ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, বন্যায় জেলার প্রাণিসম্পদ খাত এবারও মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। দাপ্তরিকভাবে কোনো ধরনের প্রণোদনা বা সহায়তা বরাদ্দ হলে তা ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও প্রান্তিক খামারিদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার জানান, সবগুলো ভাঙন মেরামতে প্রাক্কলন তৈরি করা হয়নি। তবে দেবপাড়াসহ কযেকটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন মেরামতে কাজ শুরু করেছে পাউবো।
এর আগে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪১টি স্থানে ভেঙে জেলায় বন্যা হয়। প্লাবিত হয় ১৩৭টি গ্রাম।