মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

মেয়ের কফিনে চুমু দিয়ে শেষ বিদায় বাবার

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২২ জুলাই ২০২৫, ২২:৫৩

বাবার কপালে চুমু দিয়ে প্রতিদিন ক্লাসে যেত মেহেনাজ আফরি হুমায়রা (৯)। তবে আর কখনো বাবার হাত ধরে স্কুলে যাবে না মেহেনাজ। কখনো মেয়েকে আদর করতে পারবেন না বাবা। তাই চিরবিদায় দেওয়ার আগে মেয়ের কফিনে বারবার চুমু খাচ্ছিলেন বাবা দেলোয়ার হোসাইন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়া নিহত মেহেনাজের গ্রামের বাড়িতে দেখা যায় এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
এর আগে সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল শাখার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মেহেনাজ আফরির মৃত্যু হয়।
মেহেনাজ ওই এলাকার দেলোয়ার হোসাইনের একমাত্র মেয়ে। দেলোয়ার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের সরকারী অধ্যাপক। তবে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেলোয়ার হোসাইন ও তার স্ত্রী সুমি আক্তার প্রাণে বেঁচে গেছেন।
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় মেহেনাজের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বিকেলের দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বাবা দেলোয়ার হোসাইন মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। এরপর মেহেনাজের মৃত্যুর খবরটি বিকেলেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামের বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন স্থানীয় লোকজন। সবাই মরদেহের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন। রাত ২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে গ্রামের বাড়িতে আসে মরদেহ। এসময় ওই বাড়িতে স্বজনদের আহাজারিতে রাতের আকাশ ভারী হয়ে ওঠে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার হতেয়া গ্রামের আব্দুল বাছেদের ছেলে দেলোয়ার হোসাইন ১৫ বছর আগে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১১ বছর আগে টাঙ্গাইলের মেয়ে সুমি আক্তারকে বিয়ে করেন দেলোয়ার। তাদের একমাত্র মেয়ে মেহেনাজ আফরি হুমায়রা বাবার স্কুলেই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো।
বাবা দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘মেহেনাজের ছুটি হয়েছিল। তাকে বলেছিলাম, ‌‘অপেক্ষা করো—তোমার মা নিতে আসবে’। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে—আমার স্ত্রী শ্রেণিকক্ষের কাছে যাওয়ার আগেই ওর সামনে দিয়ে বিমানটি আমার মেয়ের শ্রেণিকক্ষের ভেতর ঢুকে পড়ে। সব ঘটনা আমার স্ত্রীর চোখের সামনেই ঘটেছে। তাকে কীভাবে সান্ত্বনা দেবো?”
গত কোরবানি ঈদের ছুটিতে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে এসেছিল মেহেনাজ। দাদা-দাদির সঙ্গে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছে। নাতনির সেই স্মৃতি ভুলতে পারছেন না দাদা আব্দুল বাছেদ। তিনি বলেন, ‘আমার দাদু আর কোনোদিন আসবে না! আর আমাকে দাদু বলে ডাকবে না।’