র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের তথ্য

বাসে আগুন দিয়ে নেতাদের কাছে ভিডিও পাঠাতেন তারা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
  ২১ নভেম্বর ২০২৩, ২২:০৮

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঢাকার মিরপুরের কালশী এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগুন দেওয়ার পর নিজেদের গ্রুপের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে নিতেন তারা। সেই সঙ্গে যানবাহনে আগুন দেওয়ার পরই ভিডিও ধারণ করে শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠাতেন তারা।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওরান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সোমবার (২০ নভেম্বর) রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় আল মোহাম্মদ চাঁন, মো. সাগর, মো. আল আমিন ও মো. খোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। তাদের দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিদের্শনায় চাঁন রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবীর আশপাশের এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ করার পরিকল্পনা করে।
তিনি বলেন, গত ১৮ নভেম্বর  সন্ধ্যায় চাঁন ও তার সহযোগী সাগর ও আল আমিনসহ রাজধানীর মিরপুর-১১, তালতলা নাভানা, কালশী রোড, সিরামিক রোড এলাকায় সুবিধা জনক স্থানে সুবিধা মতো সময়ে যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য রাত আনুমানিক ৯টা পর্যন্ত রেকি করে।  আল মোহাম্মদ চাঁন যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য তার বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ২৫০ এমএল পরিমাণ পেট্রোল বের করে টাইগার এনার্জি ড্রিংকের বোতলে ভোরে ঐদিন সন্ধ্যায় আল আমিনের কাছে দেয়। ওই দিনই পুনরায় রাত আনুমানিক ১১টায় বাসে অগ্নিসংযোগ করার জন্য রাজধানীর কালশী সড়কে রেকি করে। এ সময় কালশী সড়কে মসজিদের পাশে পার্ক করা বসুমতি পরিবহনের একটি বাস সুবিধাজনক হওয়ায় চাঁনের নির্দেশে সাগর ও আল আমিন বাসের কাছে যায় এবং আল আমিন বাসের মাঝের জানালা খুলে পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে সাগরের সাথে পালিয়ে যায়।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, এ সময় চাঁন রাস্তার আইল্যান্ডের ওপর দাঁড়িয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের নির্দেশনা প্রদান ও ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে। অন্য কোন বিরোধীদলের সদস্যরা যাতে এ ঘটনার ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রেরণ করে কৃতিত্ব নিতে না পারে সেজন্য চাঁন বাসে আগুন দেওয়ার সাথে সাথেই খোরশেদকে ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ধারণ করে তাৎক্ষণিক তাকে পাঠাতে বলে। পরবর্তীতে চাঁন ধারণকৃত ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রেরণ করেছে বলে জানায়।  কাজের জন্য চাঁন প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেলেও সাগর ও আল আমিনকে ৭ হাজার টাকা করে দেয় বলে জানা যায়। মূলত দলের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও দলের প্রতি নিজেদের আস্থার প্রতিদান দিতে তারা এসব নাশকতা ও সহিংসতার ভিডিও ধারণ করে তাদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে প্রেরণ করতো বলে জানা যায়। 
খন্দকার আল মঈন বলেন, নাশকতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে তাদের সমমনা অন্যান্য অনুসারীদের নাশকতা সৃষ্টিতে প্ররোচিত করতো। পরবর্তীতে স্থানীয় শীর্ষ নেতারা চাঁনকে পুনরায় ২১ নভেম্বর  সন্ধ্যায় একইভাবে সুবিধাজনক স্থানে গাড়ি পোড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল বলে জানা যায়।  গ্রেপ্তারকৃতরা গত ২৮ অক্টোবর  রাজধানীর পল্টনে বিরোধী একটি দলের মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করে পল্টন এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহন, সরকারি পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা ও সহিংসতার সাথেও জড়িত ছিল বলে জানা যায়।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, চাঁন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় যানবাহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বে দেয়। এছাড়াও সে নাশকতা ঘটানোর জন্য সমর্থকদের কাজ ভাগ করে দিতো ও টাকা সংগ্রহ করে সবার মাঝে বিতরণ করতো বলে জানা যায়। আর মো. সাগর চাঁনের সহযোগী। সে চাঁনের নির্দেশে নাশকতার জন্য সুবিধাজনক টার্গেট ও স্থান রেকি করে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করে বলে জানা যায়। আল আমিন চাঁনের সহযোগী ও সাগরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে চাঁনের নির্দেশে রাজধানীর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্লবী থানায় মাদক সংক্রান্ত ২টির অধিক মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন
তিনি আরও বলেন, খোরশেদ আলমও চাঁনের সহযোগী। সে চাঁনের নির্দেশে রাজধানীর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে চাঁনকে প্রেরণ করে। এছাড়াও সে রাজধানীর মিরপুর এলাকার যেকোন প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন নাশকতা এবং সহিংসতার ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং এসব ভিডিও চাঁনের মাধ্যমে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের কাছে প্রেরণ করে।