দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

চাঁদপুরের ৫ আসনে আ.লীগের মনোনয়ন ফরম নিলেন ৪৫ জন

চাঁদপুর সংবাদদাতা
  ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২৫

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষ হয়েছে। দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষদিন মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) পর্যন্ত চাঁদপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনে ৪৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। এখন টিকিটের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
এর মধ্যে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ফরম তুলেছেন আট জন, চাঁদপুর-২ (মতলব) আসনে ১১ জন, চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) ছয় জন, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে ১০ জন এবং চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে ৯ জন। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা। এখন নৌকার টিকিট পেতে তদবির-লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
দলের স্থানীয় নেতারা বলছেন, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত দেবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেবেন, তাকেই বিজয়ী করতে কাজ করবেন তারা। কোনোভাবেই এর ব্যত্যয় ঘটবে না। একই কথা বলেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারা পাচ্ছেন নৌকার টিকিট। চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা আগামী ২৭ নভেম্বরের মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা। সে অনুযায়ী, পাঁচটি আসনে কারা হচ্ছেন নৌকার মাঝি, তা জানতে আরও চার-পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

পাঁচটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী যারা
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চাঁদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর এমপি, সাবেক সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণার বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, জাপান আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শিপলু, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আউয়ালের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ও লন্ডনপ্রবাসী সাখাওয়াত হোসেন টিটু। তারা আট জন এই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূরুল আমিন রুহুল এমপি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জেসমিন সুলতানা, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য এম ইসফাক আহসান, মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুস, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, যুবলীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাকিয়া সুলতানা শেফালি, নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক ও পদ্মা সেতু জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রোগ্রামের টিম লিডার অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির, কৃষকলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খোকা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু। এই আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ১১ জন।
চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, মৎস্যজীবী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মো. রেদওয়ান খান বোরহান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য জাকির হোসেন মারুফ। এই আসনে মোট মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ছয় জন।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ড. শামছুল হক ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. হারুনুর রশিদ সাগর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আমির আজম রেজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম রোমান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হারিফ হোসেন সাগর, ফরিদগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুন্নাহার অনি, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মহিউদ্দিন খোকা, শিল্পপতি জালাল আহমেদ, সাবেক ছাত্রনেতা মো. তোফায়েল আহাম্মেদ ভূঁইয়া। এই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১০ জন।
চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি, সাবেক এমপি নূরজাহান বেগম মুক্তা, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাবেক ছাত্রনেতা ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ হোসাইন, দুদকের সাবেক মহাপরিচালক ও এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম এইচ সালাউদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল সমিতির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সফিকুর রহমান, হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মাইনুদ্দিন, ঢাকা কলাবাগান স্পোটিং ক্লাবের সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল হক, আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম, মেহের ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল। এই আসনে মোট মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১০ জন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা থেকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। এজন্য প্রার্থী বেশি। যে কেউ দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। কিন্তু একটি আসনে প্রার্থী হবেন একজন। সেখানে কে নৌকার মাঝি হবেন, তা নিশ্চিত করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশ মেনে দলের প্রার্থীর জন্যই কাজ করবেন সবাই। এতে কোনও বিরোধ তৈরি হবে না। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেলে কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। এটাই স্বাভাবিক।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য, চাঁদপুর-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় ও প্রাচীন দল। যারা এই দলটিতে যারা কাজ করেন, সারা জীবন মানুষের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করেই তারা একটা পর্যায়ে আসে। কাজের প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকেন। তাই সবারই গণতান্ত্রিক অধিকার আছে মনোনয়ন চাওয়ার।
তিনি বলেন, মনোনয়ন কাকে দেওয়া হবে, সেটি তো মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত। অনেক তরুণ ও নারীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন, আমি মনে করি, এটি একটা ভালো লক্ষণ। সবাই জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক। জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে ইচ্ছুক, আমাদের নেতাকর্মীরা। এটিকে ভালো লক্ষণ হিসেবেই দেখছি। মনোনয়ন বোর্ড যাকেই মনোনয়ন দেবেন, নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত এবং দলীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করবে।
চাঁদপুর-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, চাঁদপুর-হাইমচরবাসীর উন্নয়নে নৌকার জয়ের কোনও বিকল্প নেই। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সবাইকে নৌকার সঙ্গেই থাকতে হবে। তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি চাঁদপুর সদর ও হাইমচরবাসীকে নৌকার জয় উপহার দেবেন।
চাঁদপুর-৩ আসনে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব থাকাকালে দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা চালিয়েছি। এখন দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি, দলের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটি মেনে নেবো। কারণ, আমরা নৌকার জয়ের বিকল্প নেই।
চাঁদপুর-৩ ও চাঁদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূইয়া। তিনি বলেন, আমি দুই আসন থেকেই নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। মনোনয়ন চেয়েছি, বাকি সিদ্ধান্ত নেত্রী নেবেন।