ডাক্তার হয়ে দেশে ফেরার অপেক্ষায় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩০
সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন

দুইবছর আগে বাংলাদেশে পড়াশোনার জন্য এসেছেন গাজার তরুণ ইব্রাহিম কিশকো। উদ্দেশ্য, চিকিৎসক হয়ে নিজ দেশে ফিরে মানুষের সেবা করবেন, যে দেশটি ইসরায়েলের আগ্রাসনে এখন প্রায় বিধ্বস্ত।
বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বৃত্তি নিয়ে ১০০ জন্য ফিলিস্তিনি এ দেশে পড়ছেন। তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসাশাস্ত্রের শিক্ষার্থী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ইব্রাহিম কিশকো বললেন, আমার পড়াশোনার আরও তিনবছর বাকি। তারপর আমি ফিলিস্তিনে ফিরে যাব, যেন সেখানে আমার স্বজনদের সেবা করতে পারি। আমার প্রিয় জন্মভূমিতে এখন হাহাকার। আমার ভেতরেও হাহাকার। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো সক্ষমতা আমার নেই। অন্তত পড়াশোনাটা শেষ করতেই হবে, তারপর আমি নিজেকে উজাড় করে দেবো। এই দায়িত্ববোধ ভেতরে নিয়েই আমি অপেক্ষা করছি।
ইসরায়েলের হামলার কারণে পৃথিবীর চোখ এখন গাজার দিকে। বোমায় বিধ্বস্ত গাজার ভবনগুলোর নিচে চাপা পড়ে আছে শিশু-নারী-বৃদ্ধ-যুবার লাশ। ফিলিস্তিনের যেসব তরুণরা জন্মভূমি থেকে দূরে আছেন, তাদের প্রাণটাও যেন সেখানেই পড়ে আছে। দাঁতে দাঁত চেপে তাঁরা অপেক্ষা করছেন দেশে ফেরার।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় মারা গেছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ। অন্তত ২০০ চিকিৎসক, প্যারামেডিক ও নার্সও মারা গেছেন। ২২টি হাসপাতালসহ ৩৬টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
এমন কোনো পরিবার নেই, যারা স্বজন হারায়নি। এমনকি ইব্রাহিম কিশকোর ক্ষেত্রেও। গত ৩০ অক্টোবর ইসরায়েলের এক হামলায় ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়, সেখানে অন্তত ১৫ জন ছিলেন কিশকোর চাচাতো-ফুপাতো ভাইবোন ও আত্মীয়। কিশকোর আরেক সহপাঠী আইজ্যাক নামুরার গল্পও প্রায় একই। তাদের এখন জীবনে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। স্রেফ নিজ দেশে ফিরে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান তাঁরা। পড়াশোনাও করছেন মন দিয়ে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন যেন সময়মতো এমবিবিএস সম্পন্ন হয়।
নামুরা বললেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা শেষে খুব দ্রুত লাইসেন্স অর্জন করতে চান তিনি। এরপর গাজায় ফিরে নিজেই ক্লিনিক চালু করবেন। সেখানে একটা কাঠের বাক্স থাকবে। যারা নিজেদের ট্রিটমেন্টের ফি জমা দিতে পারবে, দেবে। বাকিরা বিনাপয়সায় চিকিৎসা পাবে।
তাদের চোখমুখে ভবিষ্যত নিয়ে আলাদা কোনো স্বপ্ন নেই, উচ্চাকাঙ্খা নেই। জন্মের পর থেকে জন্মভূমির মানুষের ওপর হামলা আর অনাচার দেখতে দেখতে তাদের চোখের চাহনিও নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। এখন শুধু একটাই প্রত্যাশা, অন্তত নিজেদের জীবনটা যেন প্রিয়জনদের সেবায় আর প্রয়োজনে বিলিয়ে দিতে পারেন তাঁরা।