আমিরাতে ধরপাকড়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন বাংলাদেশিরা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:১২

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় বেড়েছে। গত বছর দেশটির সাধারণ ক্ষমার সুযোগ যারা কাজে লাগাতে পারেননি, তারা বিপাকে পড়েছেন। আমিরাতের সরকার আটক করার পর নির্দিষ্ট কারাভোগ শেষে নিজ দেশে নির্বাসনে পাঠাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক বাংলাদেশি এক কাপড়ে দেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
দেশে ফেরা কর্মীদের অভিযোগ, দেশীয় স্পন্সরকে পর্যাপ্ত টাকা দেওয়ার পরও তাদের ভিসা নবায়ন করা হয়নি। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা অবৈধ হয়ে পড়েন।
শারজাহ শহরে একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মীর কাজ করতেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মোহাম্মদ কামরুল। দুই বছর অবৈধভাবে বসবাসের পর আটক হন তিনি। প্রথমে রাখা হয় শারজার একটি কারাগারে। সেখান থেকে আবুধাবির সুইহান কারাগারে আট দিন থাকার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন কামরুল। একই ফ্লাইটে তাঁর সঙ্গে আরও ১৭ বাংলাদেশি ফেরেন বলে জানান তিনি।
বুধবার সমকালকে কামরুল বলেন, প্রায় সাত বছর আমিরাতে কাজ করেছি। শেষবার ভিসা নবায়নের জন্য বাংলাদেশি স্পন্সরকে সাত হাজার দিরহাম (প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা) দিই। কিন্তু তারা ভিসা নবায়ন করেনি। আটক হয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে ফিরে এসেছি। আবুধাবি প্রবাসী বরিশালের মোহাম্মদ শাহীন এক বছর অবৈধ থাকার পর আটক হন। তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশি স্পন্সর দীর্ঘদিন ধরে তাঁর ভিসা নবায়ন করেননি। আবুধাবি প্রবাসী বগুড়ার বাবুল মিয়াও বাংলাদেশি স্পন্সরকে প্রায় সাত হাজার দিরহাম দিয়ে ভিসা নবায়ন করতে পারেননি। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কারাভোগ শেষে ফিরে এসেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের জাকির হোসেন, চাঁদপুর মতলবের ছমির উদ্দিন ও সিলেটের মোহাম্মাদ মিজান।
মোহাম্মাদ মিজান জানান, বৈধ ভিসা না থাকায় আবুধাবির সুইহান কারাগারে বহু বাংলাদেশি আটক। কেউ কেউ ভিজিট ভিসায় গিয়ে দীর্ঘদিন অবৈধ থাকার পর আটক হয়েছেন। তাদের কাউকে এক সপ্তাহ, কাউকে ১৫ দিন কিংবা এক মাস কারাভোগ শেষে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে।
আবুধাবি দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মোহাম্মদ উল্লাহ খান জানান, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দূতাবাসের আউটপাস নিয়ে ৫০২ জন দেশে ফিরেছেন। আগস্টে ফেরেন ১৮৪ জন। আর সর্বশেষ ৯ দিনে আউটপাসের মাধ্যমে নির্বাসিত হয়েছেন ৭৯ বাংলাদেশি। নির্বাসিতদের মধ্যে যাদের সঙ্গে পাসপোর্ট ছিল, তাদের তথ্য দূতাবাসে নথিভুক্ত হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুবাই ও উত্তর আমিরাতে ছয়টি প্রদেশ। সেখান থেকে নির্বাসিত বাংলাদেশির সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে গত তিন মাসে দেওয়া আউটপাসের বিষয়ে জানতে প্রথম সচিব (প্রেস) আরিফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কনসাল জেনারেল মো. রাশেদুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তথ্যের বিষয়ে জানানো হয়েছে। তারা এখনও তথ্য দেননি।
আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ সমকালকে জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধ বাংলাদেশিদের সঠিক পরিসংখ্যান দূতাবাসে নেই। সংখ্যাটি পরিবর্তনশীল। অধিকাংশ প্রবাসী যোগাযোগ করেন না। তিনি বলেন, ভিসা শেষ হওয়ার পর কেউ কেউ অভিযোগ করেন। তবে তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে ভিসা নবায়নের ব্যবস্থা করি। অনেকে নিজেরা ব্যবস্থা করেন।
বাংলাদেশ মিশনের তথ্যে, আমিরাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসের দেওয়া সাধারণ ক্ষমায় প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি নিজের বৈধতা নিশ্চিত করেন। বৈধতা পেতে দুটি বাংলাদেশ মিশন থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন প্রায় ৬১ হাজার বাংলাদেশি। এমআরপি পাসপোর্ট নিয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার। একই সময় ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করে দেশে ফিরেছেন পাঁচ হাজার ৬৫৭ বাংলাদেশি।
সূত্র: সমকাল