বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে এবং প্রিয় দলের দুর্দিনে জীবন বাজি রেখে পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য করেন না যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা। বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রবাসে রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিশ্ববাসীর কাছে বার্তা পৌঁছে দেন। হোয়াইট হাউজ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু বিনিময়ে তারা প্রাপ্য সম্মানটুকু পান না। সম্মান দূরে থাক, নানাভাবে অসম্মান করা হয়। এসব কারণে ক্ষোভ, দুঃখ ও হতাশা পেয়ে বসেছে তাদের।
কোনো প্রকার আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি ছাড়াই ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দলটির অগণিত নেতা-কর্মী আছেন। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় কোনো কমিটি দেওয়া হচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বেড়েইে চলেছে। কমিটি না থাকায় দলীয় নানা কর্মসূচি তাদের আলাদাভাবে পালন করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা-মামলা, গুম, খুন, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বিদেশের মাটিতে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু তাতেও মন গলেনি দলের হাইকমান্ডের। ফলে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এক ধরনের স্থবিরতায় আক্রান্ত।
সর্বশেষ আবদুল লতিফ সম্রাট ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুলের নেতৃত্বাধীন কমিটি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ভেঙে দেওয়ার পর আর নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার কমিটি গঠনের দাবি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে জানালেও তাতে কর্ণপাত করেননি শীর্ষ নেতারা।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতারা বলছেন, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানের নির্দেশে স্টেট কমিটির মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে। সে লক্ষ্যে ১৩ টি স্টেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনের ওপর। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত আনোয়ার হোসেন খোকনের নির্দেশ ও পরামর্শে ১৩টি স্টেট কমিটি পরিচালিত হচ্ছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে অনুষ্ঠান হতো। কিন্তু সেটিও এ বছরের শুরুতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার বিএনপির কেন্দ্র থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নামে কোনো কমিটি নেই। কেউ নাম ভাঙালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়েছে, ‘নির্দেশিত হয়ে জানাচ্ছি যে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নামে কোনো কমিটি নেই। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নামে কেউ কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে বিএনপি এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীকে নিজ নিজ স্টেট ও মহানগর কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’
এই চিঠি ইস্যু করা হয়েছে লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনের নামে। চিঠির কপি দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাহিদুল এইচ খান শাহেল, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ সম্রাট, জিল্লুর রহমান, গিয়াস আহমেদ এবং মিজানুর রহমান ভূইয়া মিল্টনকে।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকানাকে বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছে। তার আগমনের সময় বিমানবন্দরে হাজারের বেশী নেতা-কর্মী সমবেত হতেন। এখন একশোর বেশী হয় না। অন্যদিকে সমন্বয় করারও কেউ নেই। যে কারণে ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার বিমানবন্দরে যে স্বাগত সমাবেশ হয়েছে তা অনেকটা শোনা কথায় ৮ নম্বর টারমিনালে। অথচ প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপি মহাসচিব অবতরণ করেছেন ৪ নম্বর টারমিনালে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন না। যুক্তরাজ্যে বসে তিনি কর্মসূচির সমন্বয় করেছেন। ফলে বিমানবন্দরে মহাসচিব আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। এটা এই গ্যাপের কারণেই হয়েছে বলে মনে করেন এই নেতা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সামনে আরো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকা দরকার। কিন্তু কোনো সমন্বয় নেই। ধীরে ধীরে নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র। ১৩টি স্টেট কমিটি হয়েছে। ১৩জন লোকও বিমানবন্দনে আসেননি। অথচ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি থাকাকালে বিভিন্ন স্টেট থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। এখন তারা নিজ নিজ স্টেটে সীমাবদ্ধ থাকছেন। কিছু স্টেট আছে যেখানে দুইশ লোক নেই। কিন্তু কমিটি আছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।