পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে দুশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে হবিগঞ্জে পইল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। গতকাল দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের মাছ উঠেছে মেলাতে। তবে আব্দুল খালেকের বাঘাইড় মাছটিই মেলার প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠেছে। ৫০-৬০ কেজি ওজনের বৃহৎ এ মাছটির দাম চাওয়া হয়েছে দেড় লাখ টাকা। মাছটিকে ঘিরে ক্রেতা ও উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়।
বিক্রেতা আব্দুল খালেক জানান, পইল মাছের মেলায় বিক্রির জন্য সুরমা নদী থেকে তিনি এই বিশাল বাঘাইড় মাছটি সংগ্রহ করেছেন। মাছটি তরতাজা ও খেতে ভাল লাগবে। কমপক্ষে ১ লাখ টাকা হলে তিনি মাছটি বিক্রি করবেন। তবে তা ক্রেতার ওপর নির্ভর করছে, শেষ পর্যন্ত কত টাকায় বিক্রি হয়। 
শাহজাহান মিয়া নামে অপর বিক্রেতা জানান, তিনি ২৬ কেজি ওজনের একটি কাতলসহ বেশ বড় বড় মাছ নিয়ে মেলায় এসেছেন। বড় কাতলটির দাম তিনি চান ৬০ হাজার টাকা। ৪০ হাজার টাকা পেলে তিনি সেটি বিক্রি করে দেবেন। জিলু মিয়া নামে এক মাছ বিক্রেতা বলেন, এখনো কেনা বেচা তেমন হয়নি তবে রাতের বেলায় বিক্রি বাড়বে। 
যুক্তরাজ্য থেকে আসা সদর উপজেলার আলাপুর গ্রামের কামাল আহমেদ মাছের মূল্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মেলার সময় প্রতিবছর দেশে আসি। আমরা তো মাছ কিনতে এসেছি। মূল্য বেশি হাঁকা হচ্ছে। যে কারণে অনেক মাছ অবিক্রীত থেকে যেতে পারে।
সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই হবিগঞ্জের সদর উপজেলার পইল গ্রামের মাঠে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভিড় জমিয়েছেন। প্রায় আড়াইশ মৎস্য বিক্রেতার পাশাপাশি হাজার হাজার ক্রেতা ও দর্শনার্থী মেলায় ভিড় জমিয়েছেন। এবারের মেলায় বোয়াল ও আইড় মাছ সবচেয়ে বেশি উঠেছে।
এছাড়াও বাঘাইড়, রুই, কাতল, চিতল, গজার, গ্রাস কার্প, মৃগেল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড, পোয়া, টেংরা, পুঁটি, শিং, কৈ, শোল, বাইম, চাপিলা, চান্দা, কাকিয়াসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। 
মাছের মেলাকে ঘিরে কৃষি, গৃহস্থালি, ভোগ্যপণ্য, আখ ও শিশুদের খেলনা ছিল উল্লেখযোগ্য। তাই মেলায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের ব্যাপক সমাগম পরিলক্ষিত হয়েছে। এ মেলাকে নিজেদের ঐতিহ্য হিসেবে ধারণ করেন পইল গ্রামসহ এর আশপাশের লোকজন। 
পইল গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি সাবেক ফুটবলার শেখ মহরম আলী বলেন, এই মেলা মানেই মিলন মেলা। এ মেলা ঐতিহাসিক। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এই মেলায় দেশ-বিদেশ থেকে বড় বড় মাছ আসে। এলাকাবাসী এই মেলায় আনন্দ করেন। এই উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। যে কারণে এই কদিন আমরা আনন্দের সাথে কাটাই। 
এ বিষয়ে পইল বাজার কমিটির সভাপতি ও পইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঈনুল হক আরিফ জানান, পইল মাছের মেলা আমাদের জন্য ঐতিহ্যের। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভ‚মি পইল গ্রামে প্রতিবছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।