সাবেক মেয়র আরিফের আলটিমেটাম

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:৩৩


প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত সিলেটের প্রধান সমস্যা এখন সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের উন্নয়নকাজের করুণ দশা। ৫ ঘণ্টার সড়ক পাড়ি দিতে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগছে। ৬ লেনের মহাসড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে এটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নকাজের ধীরগতি এতটাই মন্থর যে গত চার বছরে মহাসড়ক নির্মাণের অগ্রগতি মাত্র এক-দশমাংশ। কেবল সড়কপথ নয়, রেলপথও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। আকাশপথেও অনিয়ম-বৈষম্য চোখে পড়ার মতো। সিলেট নগরীর অভ্যন্তরীণ রুটের অবস্থাও করুণ। সব মিলি সিলেটের মানুষ ফুঁসে উঠেছে।
দলমতনির্বিশেষে সর্বস্তরের তারা উন্নয়ন বঞ্চনা থেকে নিষ্কৃতি লাভে একাট্টা হয়ে রোববার মাঠে নামেন। দোকানপাট, যানবাহান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সবাই প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে আসেন। এই ‘ডেডলক’ কর্মসূচি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উদ্যোগে পালিত হয়।
কর্মসূচি থেকে ১৫ দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। বলা হয়, সিলেটবাসীর প্রতি এই বৈষম্য যদি অব্যাহত থাকে, তবে সিলেটের জনগণকে সংঘটিত হয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব এবং এর দায় সরকারেরই নিতে হবে।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের মাটিতে পদার্পণের পর নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। বিমান ভাড়ায় যাত্রীরা নাজেহাল হচ্ছেন। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার প্রতীকী ধর্মঘট চলাকালে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এখন আর চুপ করে থাকা নয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, রেল ও আকাশপথে আমরা জিম্মি। ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন দেখতে চাই। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করা, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে পর্যাপ্ত ট্রেন ও বগি দেওয়া, রেলের টিকিট কালোবাজারি রোধ করা এবং সিলেট টু ঢাকা বিমানের ভাড়া যুক্তিসংগত পর্যায়ে আনাসহ অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা টেকসইভাবে পুনর্গঠন করা আমাদের দাবি।
আরিফ বলেন, সিলেটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ২ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট, অথচ সিলেট বিভাগে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী।
সিলেটের আবাসিক ও অনাবাসিক গ্যাস সংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেটের গ্যাস উৎপাদন সাতগুণ বৃদ্ধি পাবে। অথচ সিলেটবাসী আবাসিক ও অনাবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। সিলেটে গ্যাস থাকবে, আর সিলেটের লোকজন গ্যাস পাবে না, তা হবে না।
তিনি বলেন, সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষকের ৫২৬টি পদ এখনো শূন্য। সিটি করপোরেশনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি প্রশ্ন করেন, সিলেটের সঙ্গে এটা কেমন বৈষম্য? এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সপ্তাহজুড়ে মাইকিং, গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি, মতবিনিময় অব্যাহত রেখেছিলেন আরিফ।
সমাবেশ শেষে মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান এবং সরকারপ্রধানসহ উপদেষ্টাদের বরবার স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি গ্রহণ শেষে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে আমরা অবগত। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি, কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে মতপথের ভিন্নতা থাকলেও সিলেটের উন্নয়ন ইস্যুতে সবাই যেন একাট্টা! উন্নয়নের ইস্যুতে তৎপর সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের দল। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অনেক দলই এখন জনদুর্ভোগ-উন্নয়ন নিয়ে সিরিয়াস। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী আজ দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বরে গণ-অবস্থান ও মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এতে বিএনপির নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সিলেটের যোগাযোগব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা সড়ক পরিবহণ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দ্রুত কাজ সম্পন্নের দাবি জানিয়েছেন। এ সময় জামায়াতের প্রতিনিধিদলে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এমন তিনজন প্রার্থীও ছিলেন। সিলেটের উন্নয়নের ২৭ দফা তুলে ধরে প্রেস ব্রিফিং করেছে নতুন দল এনসিপিও।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সিলেট মহানগর আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক দ্রুত সংস্কারের ব্যাপারে জামায়াত অনেক আগে থেকেই কথা বলে আসছে। উপদেষ্টা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সব দায়িত্বশীল শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে আসছে জামায়াত। আমাদের সাক্ষাতের পরই উপদেষ্টা সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরেজমিন পরিদর্শনে যান এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে তৎপর রয়েছেন।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনায়েদ বলেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক এখন সিলেটবাসীর গলার কাঁটার মতো।