মানবিক বিপর্যয়ে ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশ

মো. বায়েজিদ সরোয়ার
  ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৯

কায়রো থেকে ইসমাইলিয়া হয়ে চলেছি মিসরের সিনাইয়ের দিকে। সুয়েজ খাল ফেরি পেরিয়ে ১৯৭৩-এর আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সিনাই রণাঙ্গণে এসে পৌঁছলাম। ২০১০-এর জুনের সকাল। সিনাই মরুভূমির মধ্য দিয়ে তৈরি সড়ক পথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার যাওয়ার পর স্থানীয় ট্যাক্সিচালক আহমদ জানালেন ‘আরও প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গেলেই সিনাই এর রাফা ক্রসিং।’ সেটিই মিসর-গাজা (ফিলিস্তিন)-এর সীমান্ত। গাজা সীমান্ত ইঙ্গিত করে দীর্ঘদেহী আহমদ আরও বললেন- ‘ছোটবেলায় পরিবারের সাথে শরণার্থী হিসেবে মিসরে এসেছিলাম। গাজা আমার জন্মভূমি’। আমাদের থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে থাকা প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিনের সুপ্রাচীন জনপদ ‘‘গাজা’’ এখন বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত জনপদ। যা ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর আক্রমণে পরিণত হয়েছে ভয়াল মৃত্যুপুরীতে।
ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে আহমেদের মতো হতভাগ্য প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির জনপদ গাজায় এখন কেয়ামতের মতো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। মিডিয়ায় দৃশ্যমান, এমন ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা সাম্প্রতিককালে বিরল। ইতোমধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় প্রায় ৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের সরকার ইসরায়েলকে সমর্থন করেছে। তবে গাজার এই মহাদুর্যোগে, মজলুম ও বিপন্ন ফিলিস্তিনিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এই লেখায় বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন সম্পর্ক ও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ কীভাবে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করেছে, পাশে দাঁড়িয়েছে তা সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করা হবে।
১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল (ইয়ম কিপুর) যুদ্ধের ৫০তম বার্ষিকীর পর দিন অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) কার্যকর নজরদারি প্রযুক্তি এবং চৌকষ ও দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে (অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড) ইসরায়েলের ভেতরে আক্রমণ করে। তাদের হামলায় ২৯৯ জন সৈনিকসহ নিহত হয় প্রায় ১৪০০ জন ইসরায়েলি নাগরিক। আক্রমণের মাত্রা, কৌশলের দিক থেকে হামাস ইসরায়েলকে বিস্মিত ও পরাভূত করেছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রতিরক্ষা বাাহিনী এত দিন যে অপরাজেয় ভাবমূর্তি, এমনকি দম্ভ তৈরি করতে পেরেছিল, এই হামলা তাকে চূর্ণ করে ফেলেছে।
১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গাজার স্বাধীনতাকামী জনপ্রিয় দল হামাসের পুরো নাম ‘হারাকাত আলমুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া’। হামাসের সামরিক সংগঠন ‘ইজ্জুদ্দিন আল কাশাম ব্রিগেড’ যা সংক্ষেপে ‘আল কাশাম ব্রিগেড’ নামে পরিচিত। হামাসের (ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন) এই আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে (অপারেশন সোর্ডস অফ আয়রণ) মাত্র ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজা স্ট্রিপ নামের ক্ষুদ্র উপকূলীয় ছিটমহলটি এখন ধ্বংসস্তূপ। এই বর্বর আক্রমণে সেখানে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় নাকবা বা মহাদুর্যোগ। বৃষ্টির মতো বোমা পড়ছে হাসপাতাল, ঘরবাড়ি, স্কুল মসজিদে। বিশেষত গাজার আল-আহালি আল-আরাবি হাসপাতালের হত্যাযজ্ঞ স্তম্ভিত করেছে বিশ্বকে। গাজায় ইসরায়েলি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এক ভয়ানক শরণার্থী পরিস্থিতির সূচনা হয়েছে। 
গাজার মানুষকে ‘কালেকটিভ পানিশমেন্ট’ দেওয়ার জন্য খাদ্য, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি বন্ধ করে দিয়ে গাজাকে নয়া কারবালা বানিয়েছে ইসরায়েল। প্রায় ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ গাজায় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় পলায়মান মানুষের ওপর বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। পশ্চিম তীরেও আক্রমণ চালানো হচ্ছে। চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে। ইসরায়েল এর গণহত্যামূলক সামরিক অভিযান মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংকটের জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েল আত্মরক্ষার নামে ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে যে হামলা চালাচ্ছে তা নিঃসন্দেহে মানবতাবিরোধী অপরাধ। গাজা উপত্যকা নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পরিকল্পনাকে নাৎসিদের ইহুদি নিধনের সাথে তুলনা করেছেন ইসরায়েলি সংসদ সদস্য ওফার ক্যাসিফ।
১৯৩০ সালে প্যালেস্টাইনের ভবিষ্যৎ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অর্ন্তদৃষ্টিপূর্ণ বক্তব্য :
প্যালেস্টাইনে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে অন্যায়ভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের (১৯৪৮) পর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আরব দেশ ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়েছে ও এখনও হচ্ছে। আশ্চর্য বিষয় হলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩০ সালে অর্থাৎ ৯৩ বছর আগে এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। জ্যুইস স্টান্ডার্ড নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক সাক্ষাৎকার যখন বের হয়, তখন (১৯৩০) প্যালেস্টাইনে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে অস্থিরতা চলছে। তখনও ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হয়নি।
সেই সময়ে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র থেকে দলে দলে আসা ইহুদি অভিবাসিরা ফিলিস্তিনের আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে নতুন বসতি স্থাপন করছিল তাদের ‘প্রতিশ্রুত ভূমিতে’ (প্রমিজ ল্যান্ড)। ধনী ইহুদিরা দরিদ্র আরব সম্প্রদায় থেকে কৌশলে জমি কিনছিল। ইহুদিরা ‘হাগান ’ নামে একটি আধা সামরিক সংগঠনও গড়ে তুলেছিলেন। সেই সময় বৃহৎ শক্তির সমর্থনে গোপনে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চলছিল। এর বিপরীতে এই অঞ্চলে আরব জাতীয়তাবাদও ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ বলেন- ‘জায়নবাদী নেতৃত্ব ফিলিস্তিনে ইহুদিদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে আরবদের থেকে আলাদা করার জন্য জোর দিলে পবিত্র ভূমিতে বিস্ফোরণ ঘটবে।’
আরব ও ইহুদিদের সমস্যা নিরসনে রবীন্দ্রনাথের অভিমত ছিল- এর সমাধান হতে পারে আরব আর ইহুদিদের একে অপরকে বুঝতে চাওয়া এবং এক কমনওয়েলথ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক নতুন ফিলিস্তিন গড়ে তোলার মাধ্যমে। তবে তিনি মনে করতেন, এসবের পূর্ব শর্ত হচ্ছে পশ্চিমের জাতীয়তাবাদের ধারণা থেকে মুক্তি। প্যালেস্টাইন বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের অন্তদৃষ্টিপূর্ণ ও ভবিষ্যৎ-মুখী দৃষ্টি সত্যি বিস্ময়কর। বিষয়টি হয়তো এখনও প্রাসঙ্গিক।
এক নজরে বাংলাদেশ- ফিলিস্তিন সম্পর্ক
ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং আন্তরিক। ‘দুই রাষ্ট্র’ সমাধানের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সমর্থন করে এবং ইসরায়েলের অবৈধভাবে ফিলিস্তিন দখলের সমাপ্তি দাবি করে থাকে।
প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরের ফিলিস্তিনের প্রতি অব্যাহত সমর্থন জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানানোর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ গত ৫২ বছরে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি।
১৯৭১-এর পরে প্রথমদিকে অধিকাংশ আরব রাষ্ট্র সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, কিন্তু এই সম্পর্ক উষ্ণ হতে থাকে যখন ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে আরবদের সমর্থন করে মেডিকেল টিম ও চা পাঠিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সহায়তা করে।
১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসির দ্বিতীয় সম্মেলনের সময় ইয়াসির আরাফাত ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পিএলও-এর মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। পরে এটি ফিলিস্তিনের দূতাবাসে পরিণত হয়।
১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভের পর প্রথম যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়, ইসরায়েল তাদের অন্যতম। ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েল বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ সরকার সে স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করে। ইসরায়েলের দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জনকে সমর্থন করা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। ১৯৬৭ সালে নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে সমর্থন করে বাংলাদেশ। একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য, প্যালেস্টাইনবিষয়ক বাংলাদেশের নীতি সকল সরকারের সময়ই প্রায় এক রকম থেকেছে। কোনো একটি বিষয় নিয়ে প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের এমন মতৈক্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিরল ঘটনা।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের চতুর্থ ন্যাম সম্মেলনে, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার প্রথম ভাষণে এবং ১৯৭৪ সালে ওআইসির দ্বিতীয় সম্মেলনে ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রাম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।
বাংলাদেশ সরকার ফিলিস্তিনি ছাত্রদের বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ফিলিস্তিনের কিছু সামরিক সদস্যদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সামরিক সম্পর্কও তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান বলেছেন, ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের যে আন্তরিকতা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা, তা বিশ্বে বিরল। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও এর জনগণের অধিকারের পক্ষে বাংলাদেশ সব রকম সরব আছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান ফিলিস্তিনের পক্ষে।
ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক কেবল ধর্মের ভিত্তিতে নয়। এর সঙ্গে রয়েছে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত একটি জাতির জন্য বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের সহমর্মিতা, মমত্ববোধ, মানবতা। ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের অসাধারণ আন্তরিক সমর্থন ও আবেগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সব সময় ইসরায়েলের দখলদারির নিন্দা এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে জোরাল সমর্থন জানিয়ে আসছে। ১৯৭৪ সালে লাহোরের ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াসির আরাফাত প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছিলেন। ইয়াসির আরাফাত বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফরে আসেন। প্রতিবারই তিনি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম, রাজনীতিবিদ ও সাধারণ জনগণের থেকে ঊষ্ণ অভ্যর্থনা পান। ইয়াসির আরাফাত একবার বলেছিলেন- ‘বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় দেশ।’
বাংলাদেশের ১০ম স্বাধীনতা বার্ষিকী উদযাপিত হয় ১৯৮১ সালে। এই স্বাধীনতা দিবসের উৎসবে বিশ্ব মুসলিম উম্মার দুই দিকপাল ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত ও গিনির প্রেসিডেন্ট আহমদ সেকুতুরে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের ২৫তম স্বাধীনতাবার্ষিকী উৎযাপিত হয়। সেই অনুষ্ঠানেও ইয়াসির আরাফাত অংশ নিয়েছিলেন। সেই অনুষ্ঠান আলোকিত করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সফর করেন। ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণার পর থেকে জাতিসংঘের যে ১৩৮টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ একটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করে যেখানে একজন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাকে দেখা যায়, যার পেছনে রয়েছে কাঁটাতারে ঘেরা আল-আকসা মসজিদ। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), জাতিসংঘেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশ সরব।
সিরিয়ার রণাঙ্গণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম (১৯৭৩)
ইসরায়েল অধিকৃত ভূমি উদ্ধারের জন্য ১৯৭৩ সালে মিসর ও সিরিয়া যৌথভাবে ৬ অক্টোবর ১৯৭৩ তারিখে ইসরায়েল আক্রমণ করে, যা ইতিহাসে ‘আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ অক্টোবর ১৯৭৩’ নামে খ্যাত।
মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অধিকাংশ আরব দেশ তখনো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। এ সময় এক বিস্ময়কর কূটনৈতিক অভিযানে অবতীর্ণ হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরবদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে ঘোষণা করলেন ‘আরবরা আমাদের স্বীকৃতি দিক না দিক, তারা আমাদের ভাই। তাদের ন্যায্য সংগ্রামে আমরা তাদের পাশে আছি।’ এই পটভূমিতেই সিরিয়ার রণাঙ্গনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি মেডিকেল টিম ও মিসরের বাহিনীর জন্য চা পাঠানো হয়েছিল।
কর্নেল খুরশিদ উদ্দিন আহমেদের (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, প্রয়াত) নেতৃত্বে ২৮ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম ১৯৭৩-এর ১৯ অক্টোবর সিরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরুণ ও চৌকশ কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির (পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূত) কূটনৈতিক যোগাযোগ ও সমন্বয়ের জন্য লিবিয়া পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
সৈন্যবাহী বিমানটির যাত্রা বিরতি হলো বাহরাইনে। এরপর বিমানটি তুরস্ক-গ্রিস মাল্টার আকাশ হয়ে অবশেষে সন্ধ্যায় ল্যান্ড করল লিবিয়ার বেনগাজি বিমানবন্দরে। বেনগাজিতে মিসরের প্রতিনিধির কাছে মিসরীয় বাহিনীর জন্য বাংলাদেশের চায়ের প্যাকেটগুলো হস্তান্তর করা হলো। ২১ অক্টোবর, লিবিয়া সরকারের বন্দোবস্তে বাংলাদেশের সেনাদল মিডল ইস্ট এয়ারলাইনসের একটি বিমানে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে পৌঁছে।
বৈরুত থেকে রাতের বেলায় সড়কপথে সিরিয়ার রাজধানীর দিকে সেনাদলটি এগিয়ে চলে। অবশেষে ২২ অক্টোবর ভোররাতে দামেস্ক নগরীতে পৌঁছাল মেডিকেল টিম। এর কিছুক্ষণ পরই দামেস্ক নগরী ভয়াবহ ইসরায়েলি বিমান আক্রমণে কেঁপে ওঠে।
বাংলাদেশের মেডিকেল টিমটি দামেস্ক নগরীর পশ্চিম দিকে দারেস সালাম নামক স্থানে মোতায়েন করা হয়। সেখানে মেয়েদের একটি স্কুলে ইতোপূর্বে সিরিয়ার চিকিৎসকরা একটি প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই চিকিৎসাকেন্দ্রটিকে বাংলার মেডিকেল দল একটি ক্ষুদ্র তবে কার্যকর ফিল্ড হাসপাতালে পরিণত করে। ওই হাসপাতালে মূলত সিরিয়ার আধাসরকারি বাহিনী ও প্যালেস্টাইনি যোদ্ধাদের চিকিৎসা দেয়া হতো।
বাংলাদেশের সেনাদল ২২ নভেম্বর পর্যন্ত (৩০ দিন) দামেস্কে দায়িত্ব পালন করে। মেডিকেল টিমটি এক মাসে ওয়ার সার্জারিসহ শতাধিক ব্যক্তির চিকিৎসা প্রদান করে। মেডিকেল টিমের সদস্যরা তাদের পেশাগত দক্ষতা, দেশপ্রেম, আন্তরিকতা ও মমত্ব সহকারে অসুস্থ ও আহত আরবদের সেবা প্রদান করেছিল। সিরিয়ার রণাঙ্গনে বাংলাদেশের এই মেডিকেল টিম ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে অআরব দেশ থেকে আসা প্রথম সৈন্যদল।
৩০ দিনের এই মেডিকেল মিশনটি ছিল ঘটনাবহুল ও নাটকীয়তায় ভরা। এর তাৎপর্যও ছিল ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। তখন সমগ্র আরব জাহানে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়ে পড়ে। তারা বাংলাদেশকে বন্ধু ও মুসলিম দেশ হিসেবে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে ও স্বীকৃতি দেয়। এই মিশনটি ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতে অনেক পরিবর্তন আসে। এর মাধ্যমেই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কূটনীতিরও সূচনা।
১৯৭৩ এর আরব- ইসরায়েল যুদ্ধ চালাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু- সরকার আরবদের মুক্তিসংগ্রামে সহায়তার জন্য একদল মুক্তিযোদ্ধা পাঠানোর ঘোষণা দেন। সে ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয় দেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম এ তাহের, বীর উত্তম, সেখানে যুদ্ধে যোগ দিতে চেয়ে বঙ্গবন্ধুকে ১৩ অক্টোবর ১৯৭৩ তারিখে একটি চিঠি লিখেছিলেন। উল্লেখ্য, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহের তখন বিআইডাব্লিউটিসি এর ‘সি-ট্রাক ইউনিটের’ ম্যানেজার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
লেবাননে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম- ১৯৮১
ইসরায়েল বাহিনী ১৯৮১ সালে লেবাননে অবস্থিত ফিলিস্তিন শরণার্থীদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ পরিচালনা করেছিল, যার ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ও লেবানিজ নাগরিক হতাহত হয়। ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে হতাহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহবান জানায়। এই আহবানে সাড়া দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। লেবাননে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি মেডিকেল টিম লেবাননে পাঠানো হয়। তৎকালিন লে. কর্নেল এইচ কে এম গোলাম মুরতোজার (পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) নেতৃত্বে ৬ সদস্যের এই মেডিকেল টিম ১৯৮১ সালের ২৩ আগস্ট লেবাননে যায়। দায়িত্ব পালন শেষে দলটি ১৯৮১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে। মেডিকেল টিমটি দক্ষিণ লেবাননের সিডনে অবস্থিত সাইদা হাসপাতালে আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা প্রদান করে। সিডন ছাড়া ও এই মেডিকেল টিম ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালিত কয়েকটি হাসপাতালে যায়।
২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ তারিখে প্যালেস্টাইনি নেতা ইয়াসির আরাফাত বৈরুতে অবস্থিত আন্ডারগ্রাউন্ড সদর দপ্তরে সেনা মেডিকেল টিমকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিকিৎসকদের (আর্মি মেডিকেল কোর) পেশাগত দক্ষতা, আন্তরিকতা ও মমত্ববোধ আহত ফিলিস্তিন ও লেবাননের নাগরিকদের মুগ্ধ করেছিল।
লেবাননে ফিলিস্তিনির পক্ষে তরুণ বাংলাদেশিদের যুদ্ধ (১৯৮০-১৯৮২)
ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি উদ্ধারের সংগ্রামে বাংলাদেশের সংহতি অতীতে শুধু মৌখিক ছিল না। জীবন দিয়েও ফিলিস্তিনিদের হারানো ভূমি উদ্ধারের লড়াইয়ে সামিল হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রাজনীতি সচেতন শত শত তরুন। ১৯৮০-১৯৮২ সালে লেবাননে অবস্থান নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল কয়েকশত মতান্তরে কয়েক হাজার বাংলাদেশি তরুণ।
ইয়াসির আরাফাত যখন ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমি গড়ার সংগ্রামে লিপ্ত তখন সেই সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশি অনেক তরুণ। তারা লেবাননের অবস্থান নিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৭০-১৯৮০ দশকে লেবাননে প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্গানাইজেশন (পিএলও) এর সদর দপ্তরসহ (বৈরুতে) শক্তিশালী অবস্থান ছিল। ১৯৮২-এর জুনে ইসরায়েল লেবাননে আগ্রাসন পরিচালনা করলে ফিলিস্তিনি গেরিলাদের সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধারা লেবাননে প্যালেস্টানিদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল।
এদের সবাই অবশ্য যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি। কেউ কেউ ছিলেন সহায়ক-যোদ্ধা। চরম গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়া থেকে শুরু করে অস্ত্র- রসদ বহন ও পাহারার কাজও করেছেন ।
জানা যায় যে, লেবাননের প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন। লেবাননের হাই রক ক্যামেলের যুদ্ধে বাংলাদেশি যোদ্ধা শহিদ কামাল মোস্তফা আলির কবর রয়েছে দক্ষিণ লেবাননের সাতিলা রিফিউজি ক্যাম্পের পাশে। যুক্তরাষ্ট্রর লাইব্রেরি অব কংগ্রসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৮ হাজার বাংলাদেশি অংশ নিয়েছে। উল্লেখ্য, লেবাননের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের বড় অংশ ছিল বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সদস্য। বিশেষত তারুণ্য নির্ভর একটি বামপন্থি দলের। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে লেবাননে সম্মুখ সারির গেরিলা ছিলেন নরসিংদীর আতাউর রহমান ফারুক। তিনি নিজের যুদ্ধ- অভিজ্ঞতার রোমাঞ্চকর ঘটনা নিয়ে ‘ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধের গেরিলা আমি’- নামে একটি বই লিখেছেন।
লেবাননের যুদ্ধে বাংলাদেশি যোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। পিএলও লেবানন শাখার সূত্রমতে, বাংলাদেশি যোদ্ধাদের সংখ্যা এক থেকে দেড় হাজার হতে পারে (দৈনিক আল- আখবার)। ১৯৮২ সালে লেবাননে জাতিসংঘের বাহিনী মোতায়েনের পর তারা লেবানন ছাড়তে শুরু করেন। এরপর অধিকাংশ যুবক ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেয়।
সাম্প্রতিক ঘটনা ও বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ তার সৃষ্টির সময় থেকেই ফিলিস্তিনের নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের পাশে আছে এবং তাদের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। ইসরায়েলের চলমান নৃশংস মানবতাবিরোধী এই হামলায় শিশু, নারী ও সাধারণ ফিলিস্তিনিরা মারা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক গাজাবাসীর উপরে ইসরায়েলের নির্লজ্জ হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকায় ইসরায়েলের আগ্রাসী হামলার নিন্দা জানান। একইসাথে তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশ ও এর জনগণের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলের হামলায় আহত ও বাস্তুচ্যুতদের সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে সাধারণ জনগণের পক্ষে ওষুধ ও নগদ অর্থ সংগ্রহ করে ফিলিস্তিন দূতাবাসের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এবারও এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে ও আইসিভুক্ত ১৪ দেশের রাষ্ট্রদূতরা সাক্ষাৎ করতে এলে এসব কথা বলেন তিনি। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদানের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের পক্ষে আছে। ফিলিস্তিন ও গাজায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর চলমান হামলা ও এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশসহ ও আইসির অন্যান্য দেশগুলোর অবস্থান ও করণীয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ প্রস্তাব, আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ও কোয়ার্টেট রোডম্যাপের আলোকে স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিলিস্তিন সংকটের একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
গত ২০ অক্টোবর শুক্রবার বাংলাদেশের সব মসজিদে ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া পড়ানো হয়। গত ২১ অক্টোবর গাজার নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য রাষ্ট্রিয়ভাবে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। ২২ অক্টোবর তারিখে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতীয় সংসদে শোক জানানো হয়। গাজা উপত্যকার যুদ্ধ বিধ্বস্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা চালানের প্রথম কিস্তি ২৩ অক্টোবর বিকেলে ঢাকায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের জন্য একটি কবিতা
ইসরায়েলের এই বর্বর আক্রমণের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। খাদের কিনারায় এখন মধ্যপ্রাচ্য। যুদ্ধ ছাড়াতে পারে পুরো অঞ্চলে। এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের ওপর কি প্রভাব পড়তে পারে ও কি প্রস্তুতি প্রয়োজন- এসব নিয়ে ভাবতে হবে।
গাজায় হামলার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করেছে। গাজায় যুদ্ধ বিরতির দাবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিরা সে দেশের কংগ্রেসে বিক্ষোভে করেছে।
এত ধ্বংস, রক্তপাতের মধ্যেও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। প্রায় ভুলে যাওয়া স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ইস্যুটি আবার আলোচনায় আসা। ভবিষ্যতে এটি হয়তো আরও গতি পাবে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে শান্তি স্থাপনের একমাত্র পথ ফিলিস্তিনিদের অধিকার স্বীকার করে নেয়া।
ইসরায়েলের শিশু, নারী, বেসামরিক মানুষের মৃত্যু দুঃখজনক। ফিলিস্তিন শিশু, নারী, বেসামরিক মানুষের মৃত্যুও একই রকম দুঃখজনক। সব মানুষের রক্তের রং লাল। কোন মৃত্যুই কাম্য নয়।
বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের পক্ষে রয়েছে ও থাকবে। ২০২১ সালে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের প্রতিবাদে বাংলাদেশের একজন কবি লিখেছিলেন।
‘‘দুনিয়ার মানচিত্র থেকে ফিলিস্তিনকে প্রায় মুছে দেওয়া হচ্ছে
কিন্তু ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের চেয়েও দ্বিগুণ ফিলিস্তিন জেগে উঠছে
আমারই বুকের মধ্যে। (ফিলিস্তিন) ।
এই কবি যেন বাংলাদেশের মানুষের মনের কথাই বলেছেন। 
এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যুদ্ধ বন্ধ করা। বিপন্ন ফিলিস্তিনিদের জীবন রক্ষা করা। বাংলাদেশ যুদ্ধ বিরতির জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলের এই বর্বর আক্রমণ বন্ধ করতে এগিয়ে আসুক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। শান্তি নামুক গাজায়।
 লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, গবেষক