তারেক রহমানই পারফেক্ট লিডার  

এ এম এম বাহাউদ্দীন 
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৯ জুলাই ২০২৫, ২৩:৫৫
আপডেট  : ১৯ জুলাই ২০২৫, ২৩:৫৬

এখনই লিখতে হবে ভাবিনি। বিবেকের তাড়নায় লিখতে হচ্ছে। প্রায় ১৮ বছর ‘অন্ধকার যুগ’ অতিক্রমের পর ২০২৪ সালের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা আলোর পথে এসেছি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ১১ মাস পরও জনজীবন এবং অর্থনীতিতে স্বাভাবিকতা ফিরে আসেনি। এখন সব শ্রেণী পেশার মানুষের ‘ঝলমলে আলোয়’ থাকার কথা; অথচ দেশে চলছে ক্রান্তিকাল। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর এখনো হিন্দুত্ববাদী ভারতের ষড়যন্ত্র থামেনি। ব্যবসা-বাণিজ্যের বেহাল দশা। বেকারত্ম বাড়ছে। ত্রাহিদশায় ছোট-বড় সব শ্রেণির ব্যবসায়ী। ব্যাংকিং সেক্টর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। সমাজ জীবনে সর্বত্রই অস্থিরতা-অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনীতিকে গতিশীল করতে যোগ্য রাষ্ট্রনায়কের নেতৃত্ব অপরিহার্য। নেতৃত্বের অভাবে সফল অভ্যুত্থানের ১১ মাসের মধ্যেই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে স্পষ্ট বিভেদ দেখা দিয়েছে। হাজারো মানুষকে হত্যা করে যে রাজনৈতিক শক্তি (আওয়ামী লীগ) বিদেশে পালিয়ে গেছে; সংখ্যানুপাতি পদ্ধতির নির্বাচনের নামে তাদের সংসদে ফিরে আনার চেষ্টা চলছে। দিল্লির এই ফাঁদে বুঝে না বুঝে পা দিয়েছে অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া কিছু দল। এমনটা হচ্ছে কার্যত যোগ্য নেতৃত্বের অভাবেই। রাষ্ট্রনায়কত্ব ও নেতৃত্ব একটি শিল্প। রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল এবং সমাজের প্রত্যেকটি বিষয়ের সঙ্গে নেতৃত্বের সম্পর্ক ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, বাণিজ্যিক সকল ক্ষেত্রে দক্ষ এবং নৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য। লিডারশিপ একটি দেশকে খাতের কিনার থেকে উন্নয়নের শিখরে নিতে পারে; আবার সমৃদ্ধশালী দেশকেও ধ্বংসের দিকেও ঠেলে দিতে পারে। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে যখন দেশের ১৮ কোটি মানুষ খুশি, তখন হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া ভারত আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘কল্পিত মৌলবাদ’ অপপ্রচার করছে। তখন দেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক ও চিন্তক বদরুদ্দীন উমরের মতো ব্যাক্তিত্ব বলেছেন, ‘ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা পালানোর পর দেশে দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উত্থান হয়েছে। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারাও রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করতে জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ছে’।
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা প্রায় ১৬ বছর দেশের নেতৃত্বে ছিলেন; ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিভাজনের রাজনীতি চর্চা করেছেন এবং উন্নয়নের নামে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নিন্দিত এবং গণহত্যা করে পালানোয় তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায়। তিনি বিশ্বজুড়ে সুখ্যাতি ব্যাক্তিত্ব। তার সদিচ্ছা, সততা, কর্মস্পীহা সকলেই অবহিত। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাকে সমর্থন ও অভিনন্দিত করেছিল। তবে তার উপদেষ্টাদের কয়েকজনকে নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক ওঠে। গ্রামীণ ও সামাজিক উদ্যোগের জন্য খ্যাত ড. ইউনূস রাজনীতিক নন, দেশ পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতা তার নেই। একথা তিনি অকপটে স্বীকারও করেন। তার এই সরলতা-দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাম-লীর কেউ কেউ নিজ নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। কোন উপদেষ্টা কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের তা বোঝা সত্যিই মুশকিল।
অভ্যুত্থানের আন্দোলনে মানুষ শান্তি আর স্বস্তির জন্য জীবন দিয়েছে; অথচ দেশের সর্বত্রই অশান্তি-অনিশ্চয়তা। রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচনের বার্তা দেয়া হলেও সেটা যথাসময়ে হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, আইনশৃংখলা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় পতিত। অনেকেই অভিযোগ করছেন আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পরিকল্পিতভাবেই করা হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তাও ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। সবাই যেন বিরোধ-বৈরিতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। গণঅভ্যুত্থানের স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে অনাখাঙ্খিত এই বিরোধ ও সংঘাতময় সম্পর্ক পতিত আওয়ামী লীগের অলিগার্কদের উৎসাহিত করছে। যার পরিণতি দেখা গেল গোপালগঞ্জে রক্তক্ষয়ী ঘটনায়।
পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ বিগত ১৫ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার নামে নির্বিচার লুণ্ঠন ও পাচারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। ব্যাংকিং সেক্টরসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, শেয়ার মর্কেট মাফিয়া চক্রের কবলে নিপতিত করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পুনর্গঠন ও গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েও তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি। প্রধান উপদেষ্টা নিজে অর্থনীতিবিদ, অর্থ উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সবাই অর্থনীতিবিদ। এরকম একটি টিম থাকার পরও কেন অর্থনীতি গতি পায়নি সেটা বিস্ময়কর। রেমিট্যান্স ছাড়া রফতানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রাজস্ব আদায়, বৈদেশিক সহায়তা-কোনো ক্ষেত্রেই সুখবর নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ গার্মেন্টস শিল্পে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। ভিয়েতনাম আলোচনার মাধ্যমে গার্মেন্টস পণ্যে মার্কিন শুল্ক ২০ শতাংশে নামাতে পারলেও আমরা কেন পারলাম না তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। আমরা কি যোগ্য লোকদের নিয়োগ দেইনি? এফবিসিসিআই, বিজেএমইএ, বিকেএমইএ নেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দেশের সার্বিক অর্থনীতি। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।
আমার ৪০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে অনেক দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং নিয়মিত উঠাবসা। সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশ এবং চীনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। তারা জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য তাদের দেশের ব্যবসায়ীরা মুখিয়ে রয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। বিনিয়োগকারীরা চাচ্ছেন স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা। আর ওই স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন দেশের ক্ষমতায় কমপক্ষে ৫ বছর মেয়াদী নির্বাচিত সরকার। দু’মাস আগে ঢাকায় যে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন হয়ে গেলে সেখানে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। কিন্তু তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিনিয়োগে করতে পারবেন না বার্তা দিয়ে গেছেন। ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা স্বীকার করেন বাংলাদেশ শ্রমসংস্থান, বিনিয়োগবিধি সন্তোষজনক এবং বন্দর ও অন্যান্য অবকাঠামোসুবিধা বিনিয়োগের জন্য অনুকূল। শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনাল, চট্টগ্রাম, পায়রা, মংলা, মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর এবং উপকূলজুড়ে শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা দেশকে শিল্প-বাণিজ্যের ‘হাবে’ পরিণত করতে পারে। অথচ বিদেশি বিনিয়োগ না আসায় পায়রা বন্দরের মতো সম্ভামনাময় বন্দর কোনো কাজে আসছে না। শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনালও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কাজে লাগাতে না পারলে ওগুলো সরকারের জন্য শ্বেতহস্তি হবে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ড. ইউনূস-তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের পর ‘রমজানের আগে নির্বাচন হতে পারে’ যৌথ ঘোষণা দেয়ার পর আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ঋণের টাকা ছাড় করাতে রাজী হয়। কোনো কারণে নির্বাচন ঝুলে গেলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বেঁকে বসতে পারে।

দুঃখজনক হলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, আন্তর্জাতিক মহলের যে কাম্য ছিল সেখানে বড় রকমের চির ধরেছে। ‘ইউনূস ম্যাজিক’ তেমন কাজ করছে না। ড. ইউনূস ও তার সরকারের নানা ভুল-ভ্রান্তি, সীমাবদ্ধতা, সমন্বয়হীনতাই এর জন্য দায়ী। স্মরণ রাখা দরকার, গণঅভ্যুত্থানের প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থন ‘নতুন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রজনতার মধ্য থেকে স্লোগান উঠেছিল, ‘এ মুহূর্তে দরকার, সেনা বাহিনীর সরকার’। সে সময় সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করলে মানুষ ওয়েলকাম জানাতো। কিন্তু সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ওই স্লোগানে প্ররোচিত হননি। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শতভাগ অনুগত দেখিয়ে প্রথমে বলেছেন, ‘দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে’। পরে একাধিক বার বলেছেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে’। সেনাবাহিনী এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তারা নির্বাচন চাচ্ছেন রোজার আগেই। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে নির্বাচন চাচ্ছেন। একটি কুচক্রী মহল, যাদের মধ্যে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা রয়েছে তারা জেনারেল ওয়াকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ গোপালগঞ্জের ঘটনার পর পলাতক হাসিনার সেনাবাহিনীকে নিয়ে তীব্রভাষায় আক্রমণই বলে দেয় তিনি সেনাপ্রধানের উপর চরম বিক্ষুব্ধ।
ড. ইউনূস ও তার সরকারের ব্যাপারে যতই নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হোক না কেন, গণঅভ্যুত্থানোত্তরকালে তার বিকল্প ছিল না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধিকাংশ উপদেষ্টার গণআন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তাদের কেউ পশ্চিমাদের অর্থে এনজিও পরিচালনা করেছেন কেউ বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে সে দেশে বসবাস করেছেন। ফলে বেশির ভাগ উপদেষ্টার সঙ্গে দেশের রাজনীতি, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষের সম্পর্ক নেই। অদৃশ্য শক্তির বদৌলতে হঠাৎ ‘উড়ে এসে প্রশাসনে জুড়ে বসা’ উপদেষ্টারা মানুষ কি চায় বুঝতে পারছেন না। মানুষ ১৫ বছর ধরে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে সেটা উপদেষ্টাদের স্পর্শ করছে না। বরং সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের অভিযোগ উপদেষ্টারা সরকারের কাছাকাছি অবস্থান করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতের প্ররোচনায় ‘সংস্কারের বাহানায়’ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার ফিকির করছেন। জামায়াত-এনসিপির পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবির প্রতি পরোক্ষভাবে সমর্থন দেয়ার কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কার সুরাহা করতে পারছে না। বিদেশিরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বার্তা না পাওয়ায় আর দেশে বিনিয়োগ না আসায় বেকারত্ম বাড়ছে। অর্থনৈতিক সংকটে দেশে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেছে, তরুণরা ড্রাগে আসক্ত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা হতাশ; নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠা দূরের কথা পুরনোগুলোর চাকা ঠিকমতো ঘুরছে না। নির্বাচনের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে না এলে সামনে আরো অস্থিরতা বাড়বে। দেশ বিপন্ন হলে বিদেশ থেকে হায়ারে আসা উপদেষ্টারা বিদেশে ফিরে যাবেন; তাদের সমস্যা হবে না। কিন্তু ১৮ কোটি মানুষকে বিপাকে পড়তে হবে। শুধু সাধারণ ব্যবসায়ীরা নয়, প্রধান উপদেষ্টার বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটলে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীও বেকার হয়ে পড়বে।
হাসিনা পালানোর প্রায় এক বছর হলেও হিন্দুত্ববাদী ভারতের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ভারত নানাভাবে ড. ইউনূসকে হেনস্তা এবং বাংলাদেশকে বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারত চিকিৎসা ও ভিসা দেয়া বন্ধসহ নানা অপরাধ করছেন। অবশ্য বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চীন এগিয়ে এসেছে। বিদেশি বিনিয়োগ নেই, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক, প্রশাসন থেকে পতিত হাসিনার অলিগার্ক আমলাদের সরানো যায়নি। এর মধ্যে সংস্কার ইস্যু নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মাসের পর মাস জুড়ে ম্যারাথন সংলাপ করছে। অথচ ওই সংলাপে অভ্যুত্থানের স্টেক হোল্ডার শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, কৃষক, শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব নেই। এনসিপি সংলাপে থাকলেও তারা সব শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করেন না।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে দেশে কার্যত অরাজকতা চলছে। সর্বমুখি অনিশ্চয়তা গ্রাস করছে। এ থেকে উত্তরণে আগামী দিনের রাষ্ট্রের নেতৃত্বে উপযুক্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যোগ্য নেতাকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। যার দেশ-জাতিকে স্বপ্ন দেখানোর সৃজনশীলতা, দেশ পরিচালনার যোগ্যতা, সততা, রাজনীতি চর্চার ধারাবাহিকতা এবং ঐতিহ্য আছে। সর্বপরি জনগণের প্রতি রাজনৈতিক কমিটমেন্ট আছে। একই সঙ্গে আছে সাহস, সহিঞ্চুতা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা। নেতৃত্বের এসব গুণাবলির বিচারে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় বর্তমানে তারেক রহমানই একমাত্র নেতা, যার মধ্যে এসব গুণাবলি বিদ্যমান। তারেক রহমান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান। রাজনীতির মধ্যদিয়ে বেড়ে উঠেছেন। পিতা-মাতার সততা, নিষ্ঠা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, লক্ষ্য, দূরদর্শিতা, দেশ পরিচালনায় কৌশল প্রত্যক্ষ করেছেন। রাজনীতিচর্চা ও দেশ পরিচালনার দুর্লভ শিক্ষা তিনি তার পরিবার থেকেই পেয়েছেন। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে তিনি বিদেশে থাকেন অথচ দেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের সব শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ঢাকায় বসবাস করা নেতারা গ্রামের মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারেন না; অথচ তারেক রহমান লন্ডনে থেকে ভার্চ্যুয়ালি গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখের কথা প্রতিদিন শোনেন; মানুষকে বোঝার চেষ্টা করেন। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে তিনি সব শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব। দেশের কৃষক-শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর কাছেও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন তারেক রহমান। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে দেশ-বিদেশ ঘুরে-বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে আগামীতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে নেতৃত্বে তারেক রহমান পারফেক্টম্যান। বাতাসে কান পাতলেই বোঝা যায় নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে এবং তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের রাজনীতি ও গণমানুষের এ বার্তা বুঝতে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার দরকার পড়ে না।

তথ্য সূত্র: ইনকিলাব