আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ছয় মাসের একটু বেশী সময় বাকী। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো এ সময়ে নিজেদের অর্জন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, নির্বাচন কৌশল নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য গালমন্দ তো নিত্য ব্যাপার। ফক্স নিউজ, সিএনএন ইত্যাদি প্রচার মাধ্যমগুলো পছন্দনীয় প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে আলোচনার ঝড় তুলছে। সবচেয়ে বড় যে কাজ তা হলো জনসমর্থন আদায় করা। এ কাজে টাকার বড়ো প্রয়োজন। সিংহ ভাগ ব্যয় হয় প্রচারণার পেছনে। নামীদামী মাধ্যমগুলো এ মরসুমে দেদারসে রোজগার করছে। প্রার্থিরা আয়োজন করছেন ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানসহ নানান কৌশলের।
বিরাট বিরাট ধনীজনের অনেকেই প্রধান দুই দলের সাথে সখ্যতার বন্ধনে আবদ্ধ, আদর্শ বা স্বার্থের নিরিখে। প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট এমনিতেই ধনী মানুষ। দলে তার অবস্থান, গ্রহণযোগ্যতা এসব বহুবিধ কারণে তিনি শক্তিমদমত্ত, প্রবল ক্ষমতাবান এবং রিপাবলিকান দলের নিয়ন্ত্রণ মূলত তার হাতেই। রিপাবলিকান জাতীয় কমিটি তার অঙ্গুলি হেলনে রদবদল হয়েছে। তার এক পুত্রবধূ এর প্রতাপশালী ভাইস প্রেসিডেন্ট।
ট্র্যাম্পের কেসগুলোর আইনজীবীদের ফী এবং অপরাপর অনেক খরচের বড়ো অংশ আরএনসি বহন করে। অন্য দিকে জো বাইডেন ক্ষমতাসীন এ কারণে তার নির্বাচন তহবিলে দলীয় সমর্থক ছাড়া ও গণতন্ত্র রক্ষার সপক্ষ শক্তির অনেকেই উদার হস্তে দান করছেন। প্রাক্তণ প্রেসিডেন্টের মামলা মোকদ্দমায় খরচ হচ্ছে প্রচুর টাকা-পয়সা, তবে তার নির্বাচনী তহবিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে কম হলেও অনেকেই দান করার জন্য বসে আছেন ধারনা করা হচ্ছে। ক্রিমিনাল অপরাধের মামলাগুলোর অগ্রগতি ও বাতাস কোন দিকে বইছে তা অবলোকন করে সিদ্ধন্ত নেওয়ার অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ তারা।
প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউ ইয়র্কে পর্নোস্টার ক্রিমিনাল মামলায় কোর্টে হাজিরা বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হচ্ছে। এ কারণে তার প্রচারণা অভিযান দারুণভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তারপরেও তিনি জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে আছেন। দিন দশেক পূর্বে ৪-৫ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিলেন জো বাইডেন।
বিগত ৩০ এপ্রিলের সীমিত সংখ্যক জনমত যাচাই করে সিএনএন বলেছে ট্রুাম্প বাইডেনের চেয়ে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। বাইডেন যে আট বেশী ব্যবধানে নেমে গেলেন তার পেছনে দক্ষিণের সীমান্তে প্রায় বাধাহীন ভাবে অনুপ্রবেশ, অভিবাসন নীতি, ইসরায়েল-গাঁজা যুদ্ধ, বিদেশ সাহায্য, বিশেষত ইউক্রেনকে অর্থ ও যুদ্ধ সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা প্রদান ছাড়া ও সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েল- হামাস ও প্যালেস্তাইন ইস্যুতে লাগাতার হরতাল ও ঘেরাও ঘটনাগুলো জোরালো ভাবে কাজ করছে। বাইডেরের মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতি সুফল বয়ে না আনতে পারলে ডেমোক্রেট পার্টি নির্বাচনে বেশ বেকায়দায় পড়বে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।
প্রার্থী বাইডেন নিশ্চিতভাবে লাভবান হবে যদি নিউ ইয়র্কের পর্ণো কেসটি ত্বরায় শেষ হয় এবং জুরীরা ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়। এদিকে,জ্যাক স্মিথ ২০২৪ সালের নির্বাচনের পূর্বেই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ মামলায় রায় দেয়ার অনুরোধ করে সুপ্রিম কোর্ট থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া পাননি।
জ্যাক স্মিথের বিরুদ্ধে একটি প্রভাবশালী মহল আদাজল খেয়ে লেগেছে। রিপ্রেজেন্টটেটিভ স্টেপানি (Elise Stefani-RNY) ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে এথিকস ভায়োলেশনের (Ethics Violation) অভিযোগ এনেছেন এই যুক্তিতে যেস্মিথ ২০২৪ নির্বাচনে ইচ্ছাকৃত ভাবে হস্থক্ষেপ করার পায়তারা করছেন যাতে ট্রাম্প নির্বাচিত হতে না পারেন। জনপ্রতিনিধি স্টেপানি বোধ করি ভুলে গেছেন যে জ্যাক স্মিথ বিষয়টি তাড়াহুড়ো করে নয়, নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখের ১৫ মাস পূর্বেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন।