এরিক কোর্টেলেসা
গত ১২ এপ্রিল ফ্লোরিডার পাম বিচে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রমোদভবন মার-এ লাগোতে ছিলাম। সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে আমার এক ঘণ্টার বেশি কথা হয়েছে। সেসব কথাবার্তা এবং তাঁর সাবেক ও বর্তমান উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি প্রেসিডেন্ট হলে কী নীতি গ্রহণ করবেন, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছি।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প যথেষ্ট অকপট ছিলেন। প্রায় প্রতিটি প্রশ্নের জবাব তিনি সোজাসাপটাভাবে দিয়েছেন। ট্রাম্পকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যেখানে আপনার নিজের একসময়কার ঘনিষ্ঠ লোকজন বলছেন, আপনাকে ভোট দিলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, সেখানে ভোটাররা আপনাকে ভোট দেবেন, সে আশা আপনি কেন করছেন?
এর জবাবে ট্রাম্প বললেন, ‘(প্রথম দফায়) আমি সেই কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করার সুযোগ দিয়েছিলাম। কারণ, আমি একজন হৃদয়বান মানুষ। তবে এখন আমি ভাবছি, এবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এ ধরনের লোকদের আর সেই সুযোগ দেব না। তাদের সরাসরি বরখাস্ত করব।’
আপনি যদি দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে কী করবেন? এর জবাবে ট্রাম্প ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এক ডজনের বেশি উপদেষ্টা আমাকে যা বলেছেন, তার সারমর্ম হলো, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে একটি রাজকীয় প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি চালু করবেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা, এমনকি বিশ্বব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দেবে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসী তাড়ানোর জন্য একটি শুদ্ধি অভিযান চালাবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসীকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। অভিবাসীদের আটক করে রাখার জন্য আটককেন্দ্র খোলা হবে এবং অভিবাসীদের ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ও বাইরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।
ট্রাম্প নারীদের গর্ভধারণের বিষয়টি নজরদারি করবেন এবং যে নারীরা গর্ভপাতের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করবেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনবেন।
ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টারা আমাকে নিশ্চিত করেছেন, তিনি গদিতে বসলে কংগ্রেসের তহবিল বরাদ্দের এখতিয়ারকে স্থগিত করার ব্যবস্থা করবেন। কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেওয়ার পরও যে সরকারি কৌঁসুলি তাঁর আদেশ পালনে গড়িমসি করবেন, ট্রাম্প সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেবেন।
এর মাধ্যমে আইন প্রয়োগের স্বাধীনতা সুরক্ষার যে শতাব্দীপ্রাচীন রেওয়াজ আছে, তা তিনি ভেঙে দেবেন। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের যে সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছিলেন, তাঁদের প্রায় ৮০০ জনকে একজন জুরি দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ট্রাম্প গদিতে বসলে তাঁদের সবাইকে সাধারণ ক্ষমা করার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
ইউরোপ ও এশিয়ার যে দেশগুলো নিজেদের রক্ষায় যথেষ্ট খরচ করছে না বলে ট্রাম্পের মনে হবে, সেসব দেশের প্রতিরক্ষা–সহায়তায় অর্থ খরচের বিষয়টিকে ট্রাম্প নাকচ করে দেবেন।
ট্রাম্প যে শহরে মনে করবেন, সে শহরে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করবেন। হোয়াইট হাউসের মহামারি মোকাবিলাসংক্রান্ত অফিস বন্ধ করে দেবেন এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টাকে যে কর্মকর্তারা মিথ্যা বলে মনে করেন, তাঁদের সবাইকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনবেন।
ট্রাম্প এবং তাঁর উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, তিনি আগের মতোই আছেন। তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আগের মতো আছে। সেই আগের উগ্রতা একটুও কমেনি। তবে ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও মারমুখী মনে হচ্ছে।
ট্রাম্প আমাকে বলেছেন, ‘আমি যখন ওয়াশিংটনের চেয়ারে বসেছিলাম, তখন আমি খুব কম লোককে চিনতাম। আমাকে লোকের ওপর নির্ভর করতে হতো।’ কিন্তু এখন তিনি মনে করেন, তিনি এখন চালকের আসনে আছেন। রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে তাঁর দেনদরবার শেষ হয়েছে এবং এখন দলের মধ্যে কার্যত বিরোধিতা করার মতো তেমন কেউ আর অবশিষ্ট নেই।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ট্রাম্প এমন সব অনুগত ও বাধ্যগত নেতা-কর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে দ্বিতীয় দফায় গদিতে বসতে পারেন, যাঁরা ট্রাম্পের চরমপন্থী অ্যাজেন্ডাগুলো বাস্তবায়নে তাঁর মতোই আগ্রাসী আচরণ করতে থাকবেন।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা কেলিয়ানি কোনওয়ে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের অ্যাজেন্ডা নিয়ে কোনো রাখঢাক আছে বলে আমি মনে করি না। তবে তিনি যে ধরনের তৎপরতা নিয়ে তাঁর পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করবেন, তা দেখে লোকেরা হয়তো ধাক্কা খাবে।’
আদালত, সংবিধান ও কংগ্রেস—সব স্তরেই ট্রাম্পের নজর থাকবে। ট্রাম্পকে সহায়তা করার জন্য ওয়াশিংটনের প্রশাসনযন্ত্রের বড় ধরনের ব্যবস্থা সক্রিয় থাকবে। মুক্ত গণমাধ্যমের কাছে সরকারি নথিপত্র ফাঁস হওয়া ঠেকানো ও হুইসিল ব্লোয়ারদের প্রতিহত করায় সরকারের জোর তৎপরতা থাকবে।