যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি। নিকট অতীতে কোনো নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার মানুষকে এতোটা উৎকণ্ঠিত আর দেখা যায়নি। ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের উভয় প্রার্থীই নিজেদের দলের প্রথম পছন্দের প্রার্থী নন। গত বৃহস্পতিবারের বিতর্কের পর ডেমোক্র্যাটদের প্রকাশ্যেই বলতে শুনা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দিয়ে আরেকদফা হোয়াইট হাউসে যাওয়ার স্বপ্ন আর সম্ভাবনা আর তাদের নেই। হতাশ উচ্চারণে তাদের বলতে শুনা যায়, উই ডোন্ট হ্যাভ আ চয়েস।
ইতিহাসের সব নজীর ভেঙ্গে দিয়ে আদালতে দণ্ড পাওয়া একজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের প্রার্থী। রিপাবলিকান দলের সাথে দীর্ঘদিন থেকে আছেন, আমেরিকার রাজনীতিতে রক্ষণশীল ভাবাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এমন লোকজনের পছন্দের প্রার্থী নন ডোনাল্ড ট্রাম্প। উগ্র আমেরিকান জাতীয়তাবাদকে উস্কে দিয়ে ট্রাম্প রক্ষণশীল রাজনীতিকে এর মধ্যেই চরম মেরুকরণে নিয়ে গেছেন। যারা দীর্ঘদিন থেকে রিপাবলিকান দলের সাথে আছেন, তাদের পছন্দের তালিকায় না থাকলেও ট্রাম্প রিপাবলিকানদের একমাত্র মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন অনেক আগেই। বিরক্ত রিপাবলিকানদের হতাশার উচ্চারণে বলতে শুনা যায়, উই ডোন্ট হেব এ চয়েস!
দলের প্রার্থীকে নিয়ে উভয় দলেই সংকট চরমে। আমেরিকার যেসব নাগরিক, বিশেষ করে যুব প্রজন্ম রাজনীতির এতো গভীরে না গিয়ে আমেরিকার অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করার বাসনা লালন করে, তাদের মধ্যেও হতাশা এখন চরমে। এমনিতেই আমেরিকার যুব প্রজন্মের মধ্যে ভোট দেয়ার হার সব সময়য় কম। এমন বহু ভোটারের কাছে দল নিরপেক্ষ বিবেচনায় বাইডেন বা ট্রাম্প দুইজনই অপছন্দের তালিকায়। একজন বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া এবং রাজনৈতিক সমস্যা ছাড়াও তাঁকে দিয়ে আর হবে না, এমন কথাই সবার মুখে মুখে। অন্য কোনো সমালোচনা না করেও ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অরাষ্ট্রনায়কোচিত কথাবার্তা, বিদ্রুপ, তাচ্ছিল্য, নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা, তথ্যহীন অসত্য প্রচারে বেপরোয়াত্বের কারণে বিরক্ত আমেরিকার বিপুল সংখ্যক লোকজন। রাজনীতির আলাপে এদের চোখে-মুখে এখন চরম হতাশা। কাঁধ ঝাঁকি দিয়ে এসব ভোটারদেরও বলতে শুনা যায়, আই ডোন্ট হ্যাভ এ চয়েস !
যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচনে আমেরিকান মুসলমানরা বেশ জোরালো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিল। মিশিগানের মতো সুইং স্টেট বা অন্য যেসব রাজ্যে সামান্য ভোটে ট্রাম্প হেরেছিলেন, সেসব ক্ষেত্রে এ আমেরিকান মুসলমান ভোট পড়েছিল জো বাইডেনের বাক্সে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে মুসলমানদের বৈরিতা স্পষ্ট। সেই ২০১৬ সাল থেকে মুসলমানদের ইমিগ্রেশন নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, সরাসরি বা ইঙ্গিতে মুসলমানদের নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান ও বক্তব্য একই। আসছে নির্বাচনে আমেরিকার মুসলমানরা কোন পক্ষে যাবে? ইসরাইল আর হামাসের লড়াইয়ে রক্তাক্ত গাজা নিয়ে আমেরিকান মুসলমানরা বাইডেন প্রশাসনের উপর চরম অসন্তোষ। ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের হামলা বন্ধে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিছু তো করেনই নি। উপরন্তু ইসরাইলের পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন ঘোষণা করেছেন, হামলার জন্য ব্যবহারের অস্ত্র পাঠিয়েছেন। এ নিয়ে আমেরিকার মুসলমানরা এখনো বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন। আমেরিকার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে জোরালো আন্দোলন এখনো চলমান। এমন বাস্তবতায় মুসলিম আমেরিকানদের অবস্থান প্রকাশ্যেই জো বাইডেনের বিপক্ষে। তাহলে তারা কি ভোট দেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে? জিজ্ঞেস করা হলে মুসলিম আমেরিকানদের একটাই উত্তর, উই ডোন্ট হ্যাভ এ চয়েস!
ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া বা ভোট প্রদান না করাও কোন চয়েস হতে পারে না। এ ভোটের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে আমেরিকার আগামী দিনের সমাজ, অর্থনীতি। কাজকর্ম থেকে শুরু করে, স্বাস্থ্য , শিক্ষা , বাসস্থানের মতো মৌলিক বিষয়ে আমেরিকার চলমান নীতিমালার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। এমন আবশ্যকীয় সময়ে দাঁড়িয়ে নাগরিক হিসেবে কেউ ঘরে বসে থাকলে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজের মতামতটাই অদেয় থেকে যাবে। গণতন্ত্রের মৌল ভাবাদর্শে কোন পক্ষে ভোট প্রদান না করাও একটা কৌশল হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়। যদিও এবারে যে পক্ষের ভোটার ভোট দানে বিরত থাকবেন, ফলাফল হবে অন্যপক্ষের লাভের। ফলে এবারের গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনে ভোট প্রদানে বিরত থাকাও কোনো বিকল্প হতে পারে না। যারা ভোট প্রদানে অনীহ , তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হলেও একই উত্তর, ' উই ডোন্ট হ্যাভ এ চয়েস ! '
যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্ঞীটিতে এমন অচলায়তনের সৃষ্টি আর কখনো হয়নি। গত সপ্তাহের বিতর্কের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রার্থীতা থেকে সরে যাওয়া নিয়ে কথা উঠেছে। আমেরিকার রাজনৈতিক কাঠামোতে বিষয়টি প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছে। সমস্ত দেশ জুড়ে নতুন প্রার্থীর নির্বাচনি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার এখন আর সময় নেই। নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য এখানে নির্বাচন কমিশনে আগে থেকেই ফাইল করতে হয়। রাজ্য ও ফেডারেল নির্বাচন কর্তৃপক্ষের কঠোর আইনের কাঠামোতে পরিচালিত এখানকার প্রতিটি নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এখন ডেমোক্র্যাট দল ইচ্ছে করলেই প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারবে না। জো বাইডেন সরে দাঁড়ালে বিকল্প হিসেবেও কে আসতে পারেন? ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে আমেরিকার লোকজন গ্রহণ করেনি। তিনি না সমর্থন পেয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গদের, না পেয়েছেন ভারতীয়দের। আমেরিকার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে অজনপ্রিয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি শুধু প্রেসিডেন্ট বাইডেনের একান্ত বিশ্বস্ত সহকারী হিসেবেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
বিকল্পহীন এমন ত্রাহি বাস্তবতায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে নজিরবিহীন আর কী ঘটতে পারে তা দেখার অপেক্ষায় শুধু আমেরিকান নয়, সারা বিশ্বের মানুষ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে আরেকদফা আমেরিকা কেমন হবে , এ নিয়েও কথা চলমান রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে