আমেরিকা ও বাংলাদেশের নির্বাচনের হালচাল

রতন শরীফ
  ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৫:০৯

আগামী ৫-ই নভেম্বর আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। দিন হিসেব করলে সময় খুব কম। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে নির্বাচন নিয়ে কোথাও কোন সাড়া-শব্দ নেই। অথচ বাংলাদেশে ছয় মাস আগে থেকেই নির্বাচন নিয়ে একটা উৎসবের সৃষ্টি হয়। নমিনেশন পাওয়া থেকে নির্বাচন পর্যন্ত চারিদিকে বিরাজ করে অস্থিরতা। সবাইর মুখে থাকে শুধু নির্বাচনী তর্ক-বিতর্ক। মিটিং-মিছিলের যন্ত্রনায় সাধারন মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায়। সারা দেশ ছেয়ে যায় বিভিন্ন দলের পোষ্টার, ব্যানার আর জমকালো নির্বাচনী সাঁজে। চারিদিকে চলে কালো টাকা খরচ করার উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা। আসলে নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করাটা এক ধরনের ইনভেষ্টমেন্ট যা পরে দূর্নীতির মাধ্যমে হাজার গুনে ফেরত আসে। নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের পুরোপুরি বিপরীত চিত্র এই দেশে। মিটিং-মিছিল তো দূরের কথা, রাস্তা-ঘাটে একটা পোষ্টার পর্যন্ত চোখে পড়ে না। আশ্চর্যের ব্যাপার যে নির্বাচনের দিনেও অফিস-আদালত খোলা থাকে। মানুষ ভোট দেয় কাজে যাওয়ার আগে বা কাজের শেষে। অনেকে লান্চ বিরতির সময় ভোট দেয়। আবার অনেকে কাজের সময়ে সামান্য বিরতি নিয়ে ভোট দিতে যায়। নির্বাচনের কারনে মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্মের কোন ছন্দপতন হয় না।
আমি নিজের জন্মভূমির চেয়ে অনেক বেশী বছর কাটিয়েছি প্রবাসে। আমেরিকার নাগরিক হয়েছি বহু বছর আগে। শুরু থেকেই আমি একজন ডেমোক্রেট সাপোর্টার। নাগরিক হওয়ার পর সব সময় ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে ভোট দিয়েছি। এইবারের নির্বাচনে দ্বিধায় ছিলাম যে হয়তোবা ভোট দেয়া হবে না। কারন বাইডেনের কর্মকান্ডের জন্য তাকে পুনরায় ভোট দেয়ার আগ্রহ ছিলো না - বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে তার ইন্ধনে হাজারো মানুষের হত্যা। এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমি এই দেশকে খুব ভালোবাসি। এই দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ আমার নাগরিক দায়িত্ত। কিন্তু এই দেশের ফরেন পলিসি আমার পছন্দ। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির উপড় তাদের পলিসি একেবারে ডাবল স্টান্ডার্ড। বিশ্ব জুড়ে হাজারো মৃত্যুর জন্য আমেরিকা দায়ী। আবার আমেরিকাই বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার নিয়ে খবরদারি করে।
আমাদের টেক্স মানি থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার যাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে। এক ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে সারা বিশ্বের মানুষ ভুক্তভুগী। তার উপড় নতুন করে ইসরাইল-হামাসের যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন সরাসরি ইন্ধন না যোগালে এতো মানুষ নিহত হতো না। আর শুধু ইন্ধন দেয়া নয় - প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজে গিয়ে নেতানিয়াহুকে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা অব্যহত রেখেছেন। উৎসাহ পেয়ে ইসরাইল তার চৌদ্দশত জিম্মির বদলে চল্লিশ হাজারের উপড় প্যালেষ্টাইনীকে হত্যা করে। এতোগুলি মৃত্যুর জন্য দায়ী আমাদের প্রেসিডেন্ট বাইডেন। নির্বিচারে হাজার হাজার প্যালেষ্টাইনীদের হত্যার কারনে এই দেশের বেশীর ভাগ মুসলমান এইবার বাইডেনকে ভোট না দেয়ার পক্ষে। কিন্তু সুইং স্টেটগুলির মুসলমানদের ভোট বাইডেনের জয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। বাইডেনকে একবার ভোট দিয়ে আমি যে ভুল করেছি তার পুনরাবৃত্তি করার ইচ্ছে আর ছিলো না। আমি সব সময়ই বলেছি যে বাইডেনের পরিবর্তে অন্য কেউ নির্বাচন করা উচিত। কিন্তু কমলা হ্যারিসকে নিয়ে ভয় ছিলো যে তাকে দিয়ে সামাল দেয়া যাবে কিনা। কারন প্রথমত আমেরিকা একজন মহিলা প্রেসিডেন্টের জন্য প্রস্তুত নয় - তার প্রমান হিলারী ক্লিনটন। দ্বীতিয়ত কমলার গাত্রবরনও আরেকটা ফ্যাক্টর। এদিকে বিভিন্ন জরীপ অনুযায়ী বাইডেন ক্রমাগত তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিলেন ও ট্রাম্প থেকে পিছিয়ে পড়ছিলেন। যাই হউক ট্রাম্পের সাথে বিতর্কের পর ডেমোক্রেট দলের ডেলিগেটরা বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান। অবশেষে বাইডেনের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়। কমলা হ্যারিস দৃশ্যপটে আসার সাথে সাথেই পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হয়। কমলা সফলভাবে ইয়াং জেনারেশনকে উজ্জীবিত করতে পেরেছেন - যা ট্রাম্প এখনও পারেননি। এই ইয়াং জেনারেশনকে বলে জেন-জি। এরা সমাজ ও রাজনীতির ব্যাপারে খুব সচেতন। এরা অঘটন ঘটনপটিয়সী। তার নমুনা দেখা গেছে সারা আমেরিকা জুড়ে প্রো-প্যালেষ্টাইনী আন্দোলনে। আর বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত স্বার্থক এক বিপ্লবের কৃতিত্বও এই শুধু জেনজি দলের।
ডেমোক্রেট প্রার্থীকে ভোট না দেয়ার অর্থ ট্রাম্পকে জয়ের সুযোগ করে দেয়া। ট্রাম্পের মতো মানসিকভাবে অসুস্থ একজন ব্যক্তিকে কোনভাবেই দ্বীতিয়বার সুযোগ দেয়ার যুক্তি থাকতে পারে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সে একজন সাইকোপ্যাথ। তার কথা-বার্তার লেভেল এখনও মারাত্বক ভাবে নীচু লেভেলের। পুরো ক্যাম্পেইন জুড়ে সে ব্যস্ত তার প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত আক্রমন করা নিয়ে। তার নিজের দল থেকে তাকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে ভবিষৎ পরিকল্পনা ও পলিসি নিয়ে কথা বলার জন্য। কিন্তু সে ব্যস্ত প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ করা নিয়ে। সে কারো উপদেশ শুনতে রাজী নয়, আমেরিকার গনতান্ত্রিক ধারাতে বিশ্বাসী নয়, বিচার বিভাগকে সম্মান করে না, দেশের গোয়েনদা রিপোর্টেও তার আস্থা নেই। রানিংমেট ভেন্সের উদ্ভট কথাবার্তাও ট্রাম্পকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে। অপর দিকে হ্যারিসের রানিংমেট ওয়ালশ্ একজন উপযুক্ত ও স্মার্ট ব্যক্তি যা কমলার ভোট বাড়াবে। আমি মনে করি ট্রাম্পের মতো একজন সাইকোপ্যাথকে থামানোর জন্য কমলা হ্যারিসই এখন একমাত্র ভরসা।
ডেমোক্রেটদের জন্য আশার ব্যাপার যে বিভিন্ন জরীপ অনুযায়ী সুইং স্টেটগুলিতে কমলা তার প্রতিপক্ষ ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছে। জাতীয় পর্যায়ের জরীপেও দেখা যাচ্ছে যে পুরো দেশেও কমলা এগিয়ে। ডেমোক্রেটরা আশা করছে যে শিকাগোর কনভেনশনের পর তাদের পাল্লা আরও ভারী হবে। তবে কনভেনশনে প্রো-প্যালেনষ্টাইনীদের প্রতিবাদ সমাবেশকেও বিচক্ষনতার সাথে সামাল দিতে হবে।