এখন আলোময় সকাল। মিরপুর ডিওএইচএসের ‘জোৎস্না সরোবর’ পার্কে হাঁটছি জুগলে। চোখে পড়ে বর্ষায় ফোটা সাদা রঙের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল। হঠাৎ আমার মনে হলো- ফুলগুলো এখন যেন সব লাল রঙের। ওরা যেন ২০২৪-এর শহীদ আবু সাইদ, মুগ্ধ, ইয়ামিন, আহনাফ, রাফি, আলভি, নাফিজ, রুদ্র সেন, রিয়া গোপ, এর পবিত্র রক্ত মেখেছে...। আমাদের শত শত শহীদ এখানে ফুল হয়ে ফুটে আছে। ১৯৭১-এর শহীদদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশকে আমরা সুন্দরভাবে গড়তে পারিনি। কিন্তু ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান-বিপ্লবে শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বপ্নের ‘নতুন বাংলাদেশ’ সুন্দরভাবে গড়তে শুরু হয়েছে সব বাংলাদেশির ঐক্যবদ্ধ পথচলা। নতুন বাংলাদেশ গঠনে এই শহীদরা আমাদের পথ দেখাবে...।
এই লেখায় সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের কিছু বিশেষ দিক- ছাত্র ও সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকা, জাতিয় ঐক্য, আরব বসন্ত ও সরকারের কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব।
বিপ্লবের নায়ক নতুন প্রজন্ম- স্যালুট টু জেন জেড:
‘‘৫ আগস্ট ২০২৪ তথা ৩৬ জুলাই’’, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব এক বিজয় অর্জিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার ২৩ দিনের দেশ কাঁপানো আন্দোলনে অবশেষে পতন হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। ঐদিন শেখ হাসিনার ভারতে পলায়নের মধ্য দিয়ে তার টানা প্রায় ১৬ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হয়েছে। এই আন্দোলনের নায়ক হলেন নতুন প্রজন্ম।
আমাদের অলক্ষ্যে একটি নতুন প্রজন্ম ‘‘জেন জেড’’ জন্ম নিয়েছে। ‘পরিবর্তন সম্ভব’- এটাই তাদের স্লোগান। এই প্রজন্মের হাতেই ঘটল অভাবিত এক বিপ্লব। কোটা আন্দোলন পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে এক পর্যায়ে সম্পৃক্ত হয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও সাধারণ জনগণ। এই বীর তরুণ বিভিন্ন রাষ্ট্রিয় বাহিনী বিশেষত পুলিশ বাহিনীর ভয়াবহ গুলিবর্ষণের (জুলাই হত্যাকাণ্ড) মধ্যেও নিজেদের জীবন বিপন্ন করে রাজপথে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিল। স্যালুট টু ইউ জেন জেড...। প্রাউড অফ ইউ।
যে বিপ্লবের অনেক নাম:
এই গণঅভ্যুত্থান নানা অভিধায় অভিহিত হচ্ছে : ‘‘জুলাই বিপ্লব’’, “বাংলা বসন্ত”, “বর্ষা বিপ্লব” (মনসুন রেভোলিউশান), “ছাত্র-বসন্ত”, “দ্বিতীয় স্বাধীনতা”, “দ্বিতীয় বিপ্লব”... ইত্যাদি। এখানে হয়তো কিছু আবেগ ও অতিশয়োক্তি থাকতে পারে। সদ্য নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একে “দ্বিতীয় স্বাধীনতা’’ ও ‘‘দ্বিতীয় বিপ্লব” বলে আখ্যায়িত করেছেন। কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনকে ‘‘ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের বিজয়’’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
জনগণের পাশে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী:
দেশের ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী অসাধারন ভূমিকা পালন করে দেশকে চরম বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগনের সঙ্গেই একাত্ব থাকে। ১৯৭১ সালে এই সেনাবাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছিল। ১৯৯০ এর গনঅভ্যূত্থানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে না গিয়ে জনগনের সঙ্গে একাত্ব হয়েছিল। সেই সংকটময় সময়ে সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন লে. জেনারেল মোহাম্মদ নুর উদ্দিন খান। ৩৪ বছর পর আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। জেনারেল ওয়াকার আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর গুলির নির্দেশ না দিয়ে জন আকাংখার সম্মান দেখিয়েছিলেন। এটা ছিল বাঁক বদলকারী এক সিদ্ধান্ত। আবার প্রমানিত হলো, এই সেনাবাহিনী বাংলাদেশের জনগণের সেনাবাহিনী।
গত ৩ আগষ্ট, সেনাপ্রধান সেনাসদরে বিভিন্ন স্তরের সেনাকর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। সেখান থেকে সেনাপ্রধান উপলদ্ধি করেন যে, সেনা কর্মকর্তাগণ সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য কোন হত্যাকান্ডে অংশীজন হতে চায়না। এছাড়াও ৪ আগষ্ট, আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে রাওয়াতে। সেদিন সেনাবাহিনীর কিছু অবসরপ্রাপ্ত জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এ খবর দ্রুত দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
সরকার পতনের পর ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতা যেভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান দেখিয়েছে ও একাত্ব করে নিয়েছে তা অভূতপূর্ব। পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত হয়ে একজন ছাত্রকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। কিছুটা সুস্থ্য হওয়ার পর ছাত্রটি ‘আর্মি’ (সেনাবাহিনীর সদস্য) দেখতে চেয়েছিল। আমার দীর্ঘ সৈনিক জীবনে, এমন অনুপ্রেরণাময় ঘটনা আগে শুনিনি। সেনাবাহিনীকে তাই ভবিষ্যতেও জনগণের এই আবেগ, ভালোবাসা ও আকাংখার সম্মান রাখতে হবে।
ভাটিয়ারীর বন্ধুত্ব ও অতপর...:
সেনাপ্রধানের সঙ্গে সঙ্গে নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন দেশের ক্রান্তিলগ্নে পট পরিবর্তনকারী ভূমিকা রেখেছেন। এটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, একটি বিবেচনায় এই তিন বাহিনীর প্রধানগণ সবাই ১৩ তম লং কোর্সের কর্মকর্তা। ভাটিয়ারিস্থ বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীতে (বিএমএ) ১২ তম লং কোর্সের সঙ্গে (১৯৮৩) প্রথমবারের মতো নৌ ও বিমান বাহিনীর ক্যাডেটবৃন্দ যৌথ প্রশিক্ষনে (মূলত তিন মাসের প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ) অংশগ্রহণ করেছিল। এর পর নৌ ও বিমান বাহিনীর ক্যাডেটবৃন্দ নিজ নিজ একাডেমিতে ফিরে যান। তিন বাহিনীর যৌথতা, পরিচিতি, সমন্বয়, ভ্রাতৃত্ববোধ ও একাত্বতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই যৌথ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই প্রশিক্ষণ এখনও চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ তম সেনাপ্রধান বিএ-২৯০২ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১৩ তম লং কোর্সের সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে কমিশন লাভ করেন (১৮ জানুয়ারি ১৯৮৪ - ২০ ডিসেম্বর ১৯৮৫)। তাঁদের সঙ্গে নৌবাহিনীর ক্যাডেট (৮৩ ব্রাভো) ও বিমান বাহিনীর (১২ তম জিডিপি) ক্যাডেটবৃন্দ বিএমএতে যৌথ প্রশিক্ষণে (১৯৮৪) অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এই কোর্স (১৩ তম লং কোর্স) থেকেই তিন বাহিনীর প্রধানগন নিযুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে এটি একটি অনন্য ঘটনা।
জানা যায়, ৫ আগষ্ট তারিখে সকাল ১০ টার দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানদের নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। সেনাপ্রধান তখন, প্রধানমন্ত্রীকে আন্দোলনরত ছাত্র-জনগণের উপর গুলি চালানোর অপারগতা ও পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন। বলা যায় যে, প্রায় ৪০ বছর পর ভাটিয়ারীতে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বের সেই অনন্য রসায়ন, একটি বাঁক বদলকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণে দারুণ সাহায্য করেছিল...।
যখন মধ্যপ্রাচ্যে- ‘আরব বসন্তের’ মাঝে:
২০১১ সালে আরব রাষ্ট্রগুলোতে (৯টি) একটা গণজাগরণ বিস্ফোরনমুখ হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল। পশ্চিমা সাংবাদিকরা এই গনতান্ত্রিক বিদ্রোহকে নাম দিয়েছিল “আরব বসন্ত”। এই গনজাগরন ছিল আরব রাষ্ট্রগুলোর শাসক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জনগণের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস। আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল আসলে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে তিউনিশিয়ার সরকার বিরোধী আন্দোলনের (জেসমিন বিপ্লব) মধ্য দিয়ে। তিউনিশিয়ার এক গরিব সবজি-বিক্রেতা (যুবক) ‘বু-আজিজি’ চরম হতাশা বুকে নিয়ে প্রকাশ্যে রাজপথে নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বেলে দিয়েছিল। মুহুর্তের মধ্যে স্ফুলিঙ্গের মতো খবরটি ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র দেশে। শুরু হয় সরকার বিরোধী আন্দোলন। পতন হয় তিউনিশিয়ার সরকারের। বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে সেই স্ফুলিঙ্গ ছিল রংপুরের সাহসী বীর আবু সাঈদ।
এই সময় আমি মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীতে প্রেষনে কর্মরত থাকায় “আরব বসন্তের” ঘটনাসমূহ ও ফলাফল/পরিনতি বেশ কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ ও জানার সুযোগ হয়েছিল। দুঃখজনকভাবে ‘‘আরব বসন্ত’’ তেমন সফল হয়নি। অনেক দেশের সরকার পরিবর্তন হলেও ৫/৬টি দেশ বরং অধিক বিপর্যয়ে পতিত হয়েছে। লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনে এখনও গৃহযুদ্ধ চলছে। এই বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিক আনিস আলমগীর (যুদ্ধ-সাংবাদিক হিসেবে খ্যাত) লিখেছেন ‘‘ট্রাজেডি অব আরব স্প্রিং’’ (২০০৬)।
লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান লিখেছেন- “আহমেদ ছফার মতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ফলাফল দেশের জনগণ বা জাতি নয়, অপরে আত্মসাৎ করেছে”। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী এই দুঃখজনক বাস্তবতা নিয়ে সলিমুল্লাহ খান সম্পাদনা (২০০৭) করেছেন “বেহাত বিপ্লব ১৯৭১” (আহমদ ছফা মহাফেজ খানা ১)। উল্লেখ্য, সলিমুল্লাহ খান বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছেন- ‘‘বাংলাদেশ এখন স্বৈরতন্ত্রের খোলা থেকে অজানাতন্ত্রের আগুনে পড়েছে।’’
২০১০ সালে, মিশর ভ্রমনকালে কায়রোর বিখ্যাত ‘তাহরির স্কোয়ার’ এলাকায় যুগলে বেশ কয়েকদিন হেঁটেছি। কাছেই বিখ্যাত নীল নদের হাতছানি। তখন কল্পনাও করিনি যে, এর কয়েকমাস পরেই সেই প্রানবন্ত ‘তাহরির স্কোয়ার’ মিশরে আরব বসন্তের (বিপ্লবের) কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হবে। সেই সময় আমার দেখা মিশর (মূলত শহরগুলো) ছিল বেশ ঝঁলমলে। অবকাঠামোগত দিক দিয়েও উন্নত। তবুও তাশের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়লো (২০১১) দোদন্ড প্রতাপশালী মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক এর ২৮ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসন। তার আগেই অবশ্য জনগণের বিক্ষোভ প্রতিবাদে তিউনিশিয়া ছেড়ে পালান (২০১১) স্বৈরাচারী শাসক বেন আলী। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, কম্বোডিয়ায় শান্তি মিশনে (১৯৯২-১৯৯৩) কর্মরত আমাদের সহকর্মী তিউনিশিয়-সেনাকর্মকর্তাগণ প্রেসিডেন্ট বেন আলীর উন্নয়নের প্রসংশা করতেন।
একটি সরকার যত শক্তিশালী হোক, প্রযুক্তিতে যত উন্নতই হোক, মানুষের মন মাপা কিন্তু এত সহজ নয়। মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত দমিয়ে রাখা যায় না। সকল কর্তৃত্ববাদী শাসকের একসময় পতন হয়। শুধু ‘উন্নয়ন’ দিয়ে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানুষের আকাংখা ঢাকা যায় না। বাংলাদেশের জুলাই-আগষ্ট এর গণ-অভ্যুত্থানও সেটাই আবার জানান দিলো।
বিজয় উৎসবের পর নৈরাজ্যের অন্ধকার:
শেখ হাসিনার সরকার পতনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার রাজপথ উৎসব মুখর হয়ে ওঠে। কিন্তু এরপরই দুঃখজনকভাবে, দেশে এক ধরনের নৈরাজ্য নেমে আসে। লুটপাট হয় গণভবন। আক্রান্ত হয় সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রির কার্যালয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত বিশেষ করে মুক্তিসংগ্রামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ‘‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘর’’ (৬৬৭ নং বাড়ি) বাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কিছু হিন্দু মন্দির ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও সংখ্যালঘুর ঘরবাড়ি আক্রান্ত হয়। গণমাধ্যমের অফিস ভাঙচুর হয়েছে। অনেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। হামলা হয় থানায় থানায়। সব পুলিশ সদস্য তাদের কর্মস্থল থেকে সরে পড়ে। আধুনিক বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল। মূলত এই অবস্থায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। এই সব অনাকাংখিত, দুঃখজনক ও নিন্দাজনক ঘটনা গৌরবজনক গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবের স্পিরিটকে ম্লান করে দিয়েছে।
তবুও আশাবাদের উজ্জলতা:
গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী কিছু নৈরাজ্যমূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি ছাত্রদের দেশগঠন মূলক কর্মকান্ড দারুণ প্রশংসিত হয়েছে ও আশাবাদ তৈরী করেছে। পুলিশ কাঠামো- প্রশাসন ভেঙ্গে পড়ায় ও পুলিশ সদস্যগণ কর্মবিরতি পালন করায় ছাত্ররা রাস্তায় শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বগ্রহন করে। তাদের বাজার নিয়ন্ত্রন করতেও দেখা যায়। মাদ্রাসার ছাত্রসহ কয়েকটি ইসলামিক দলের সদস্যগণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির রক্ষায় আন্তরিকভাবে পাহারা দিয়েছে। ডাকাতদের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন স্থানে পরিস্কার, পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছে তরুনরা। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের দেয়ালে গ্রাফিতি বা দেয়াল চিত্র ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সাম্প্রতিককালের বন্যায় দেশের তরুনরা ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে। তরুনদের এই ধরনের পরিকল্পিত গঠনমূলক কর্মকান্ড বাংলাদেশের মানুষ আগে দেখেনি....।
আমরা জাতিকে বিভক্ত করেছিলাম- আমাদের সন্তানরা এক করলো:
গত ৫৪ বছরে, বিশেষত বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্ষমতা ও রাজনীতির জন্য শাসকদল জনগণকে ধর্ম, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয়তা ও রাজনীতির বিবেচনায় (মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ, মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার, জঙ্গি-নাস্তিক, ভারত-পাকিস্তান পন্থী, বাঙালি-পাহাড়ী ইত্যাদি) সুকৌশলে জঘন্যভাবে বিভক্ত করেছে। বানোয়াট ও মনগড়া বয়ান বা ন্যারেটিভ তৈরি করে ক্ষমতাসীন দলগুলো মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছে।
তবে আমাদের জেনারেশন জেড এর সাহসী ও উদার মনের সন্তানরা বিভেদের দেয়াল ভেঙে চুরে সবাইকে একত্রিত করেছে। এ বিষয়ে ফরহাদ মজহার বলেন- ‘‘ধর্মবাদ ও সেক্যুলারদের বিভাজন তরুনেরা ভেঙ্গে দিয়েছেন। এটাই এই বিপ্লবের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক’’। ড. ইউনুস বলেছেন- ‘‘বাংলাদেশের সবাই এক পরিবার’’। ‘‘জেনারেশন মি’’ বইয়ের লেখক গবেষক জেন মারিয়া টুইয়েঞ্জ লিখেছেন- ‘‘জেনারেশন জেড এর একটা বড় গুন হলো তারা কোন প্রকার বিভাজনে বিশ্বাসী নয়’’। তাই গত ১৫ বছরে, বহুল প্রচলিত ‘মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার’ বাইনারিও সশব্দে প্রত্যাখান করেছে আমাদের নতুন প্রজন্ম।
ঢাকার রাজপথে হাঁটতে হাঁটতে শিক্ষার্থীদের গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র দেখে বিস্মিত ও রোমাঞ্চিত হই। এখানে রয়েছে প্রতিবাদের ভাষা, প্রতিরোধের প্রতীক আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন সম্ভাবনার কথা। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আঁকছেন তারা। সবচেয়ে আশা জাগানিয়া হলো ঐক্য, সংহতি ও একত্রে এগিয়ে যাওয়ার কি অনুপম আকাংখা। দেখলাম মাদ্রাসার একদল ছাত্র লিখেছে- ‘‘ধর্ম যার যার বাংলাদেশ সবার’’। ‘‘জেন জেড’’ সঠিকভাবেই বুঝেছে- জাতীয় ঐক্য ছাড়া দাঁড়াতে পারবে না ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। অপরূপ এই সব দেয়াল চিত্র দেখে প্রতীতি জন্মে- ভবিষতে পথ হারাবেনা আমাদের বাংলাদেশ।
নতুন সময়, পরিবর্তনের নতুন সুযোগ:
বাংলাদেশে এখন নতুন সময়। নতুন সুযোগ। ১৯৭২, ১৯৯০, ২০০৭-২০০৮ সালে এই ধরনের কিছুটা বৈপ্লবিক পরিস্থিতি ছিল। পরিবর্তনের প্রবল জন-আকাংখাও ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক দলগুলো কাংখিত পরিবর্তন ও সংস্কার করেনি। গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ আমরা আবার পেয়েছি। এই সুযোগ এবার আমাদের কাজে লাগতেই হবে। শত শত মানুষের জীবনের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই বিপ্লবও কি ব্যর্থ হবে? আবার কি ফিরবে অন্য কোন দলের ‘‘নির্বাচিত স্বৈরাচার’’? এটাই এখন বিলিয়ন ডলার প্রশ্ন! যে যায় লংকায় সেই হয় রাবন। তাই লংকাকেই পরিবর্তন করা খুব জরুরী। যেন নব্য রাবন তৈরী না হয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্র, সেক্টরে ব্যাপক সংস্কার এখন সময়ের দাবী, বিশেষত রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান সমূহে। খোল নলচে বদলে দেবার সময়। রাষ্ট্রিয় সংস্কারের মধ্য দিয়েই আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক ও মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব। প্রয়োজন একেবারে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এর জন্য সময়েরও প্রয়োজন। অন্তবর্তী সরকারকেই এই কাজগুলো করতে হবে। এই স্বপ্নের দিনগুলো যেন আবার পুরোনো চক্রে ঘুরপাক না খায়। একটি ভাষণের অপেক্ষা ও জরুরী কিছু পদক্ষেপ:
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৫ আগষ্ট জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। এখানে তিনি তাঁর কিছু স্বপ্নের কথা বলেছেন। এই বক্তৃতায় ড. ইউনূস বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এই সরকারকে আগামী দিনে অনেক কাজ করতে হবে। তবে এই সময়ের জরুরী ও ক্ষিপ্র গতিতে কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করছি।
সরকারের এখন প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরানো। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কঠোরতা একান্তভাবে দরকার। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য নিরাপত্তা হতে হবে সরকারের আরেক অগ্রাধিকারের বিষয়। ২০২৪ এর সাম্প্রতিক আন্দোলনে শহীদদের একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রণয়নে সরকারকে কাজ করতে হবে। আহতদের চিকিৎসা, পূর্নবাসন ও ক্ষতিপূরণ জোরদার করা প্রয়োজন।
অত্যন্ত জরুরীভাবে পুলিশ বাহিনীর পুঃনগঠন করতে হবে। সে অবধি সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখা উচিৎ। রাষ্ট্রীয় বিধিবদ্ধ কমিশনসমূহ যেমন- নির্বাচন কমিশন, দুদক, ইউজিসি, পিএসসি পুঃনগঠন ও সংস্কার করা এখন সময়ের দাবী। গত ১৬ বছরে রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলোর সংস্কার দ্রুত শুরু করতে হবে। প্রশাসন কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকারের সচিবালয়, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান/দপ্তর দ্রুত দলীয়করণ মুক্ত করা দরকার। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কর্মরত বিতর্কিত কর্মকর্তাদের দ্রুত পরিবর্তন করা উচিত। প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাংকিং খাত পুঃনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বৃদ্ধি করাও প্রয়োজন। সাম্প্রতিক কালে প্রধান উপদেষ্টার অফিসের সামনে কিছু সংগঠন/গোষ্ঠি দাবী আদায়ের নামে বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা সরকারের জন্য একটি অগ্রাধিকারের বিষয়। প্রশাসনিক শূন্যতা দ্রুত কাটাতে হবে।
নতুন স্বপ্ন-নতুন বাংলাদেশ:
ছাত্র-জনতার স্বপ্নের “নতুন বাংলাদেশ” এর কথা এখন বহুল আলোচিত। এই নতুন বাংলাদেশ হবেঃ অসাম্প্রদায়িক, সুশাসিত, শোষনহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক। এখানে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার, দূর্নীতি, ও উগ্রপন্থার স্থান থাকবে না। আইনের শাসন, সুশাসন, সরকার ও প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা ও মুক্ত-গণমাধ্যম-জনগণের পরম আরাধ্য বিষয়। বাংলাদেশের প্রায় ৯১% মানুষ মুসলমান। ৯৯% মানুষ বাঙালি। একই সঙ্গে রয়েছে প্রায় ৫০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির লক্ষ লক্ষ মানুষ। ভবিষ্যত বাংলাদেশ হয়ে উঠুক এই সকল মানুষের আকাঙ্খা, সকল ধারার স্রোতের, মতের ও ঐতিহ্যের অপরূপ এক সম্মিলনী। নানা বর্ণের অপরূপ ফুলের বাগান। এই মহাযাত্রায় কোন দল বা গোষ্ঠি যেন বাইরে না থাকে। বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বময়, পরিপক্ক, ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায়। নতুন বাংলাদেশ কাউকে কুর্নিশ করে না।
বিপ্লবের যত সাফল্য, বিপ্লবের ব্যর্থতা:
ঢাকায় এখন একটি জনপ্রিয় আলোচনা হলো ‘‘বিপ্লব ও প্রতি বিপ্লব...’’। আগে এধরণের আলোচনা হয়নি বললেই চলে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক- সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী লিখেছেন- ‘‘বিপ্লব কেন ব্যর্থ হয়’’। বিপ্লবের পর প্রতি বিপ্লব নতুন ঘটনা নয়। দেশে দেশে বারবার এমনটাই ঘটেছে। এই জন্য সতর্কতা প্রয়োজন। মিশর ও তিউনিশিয়ার বিপ্লবের সাফল্য-ব্যর্থতা থেকে বাংলাদেশ শিক্ষা নিতে পারে। এখানে কিছু প্রাসঙ্গিকতা ও মিল রয়েছে। গণ-অভ্যূত্থানের পরের শ্রীলঙ্কা থেকেও কিছু শেখার আছে।
বাংলাদেশে বর্তমানের বিপ্লবের সাফল্য ধরে রাখতে ছাত্র ও সামাজিক শক্তিগুলোকে ওয়াচ ডক ও অদম্য প্রহরীর কাজ করতে হবে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে-বিপ্লব শেষ হয়ে যায়নি। বিপ্লব পূর্ণ করার জন্য তাদের সামনে আরো অনেক পথ রয়ে গেছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও জনগণকেও সতর্ক থাকতে হব। প্রধান উপদেষ্টার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। ছাত্র-জনতা অসীম সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের সামনের পথে অনেক বাঁধা। পথও বিপদসংকুল। তাই এগিয়ে যেতে হবে খুবই সতর্কভাবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন- ‘‘আমরা যেন ভুল পথে হেটে এই সুযোগ না হারাই’’।
অস্থিরতা, সংশয় তবুও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ:
রক্তাক্ত একটি অধ্যায় পেরিয়ে ক্রমশ শান্ত হয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে দেশে এখনও স্থবিরতা কাটেনি। দেশ এখনও সংকট মুক্ত হয়নি। এখন ও জানা অজানা কিছু অশুভ শক্তি, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে নসাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাই সরকার ও সংগ্রামী ছাত্র-জনতাকে রাষ্ট্রের পরিচালনা ও সংস্কারের বেশ সাবধানী ও কুশলী হতে হবে। গুজব মেশিন সক্রিয়। এক ধরণের অস্থিরতা তৈরীর চেষ্টা হচ্ছে। প্রশাসনে এখনও একধরণের শৈথিল্য দৃশ্যমান। এর বাইরে সংখ্যালঘু ইস্যুটি সামনে আনার চেষ্টা করছে কেউ কেউ। ৮ আগষ্টে সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও দেশে বিদেশে সরকার বিরোধী অপতৎপরতা থামেনি।
আন্তঃজেলা নৈশডাকাতি, ব্যাংক ও আদালতে কূটচাল সৃষ্টি, মিডিয়া প্রপাগান্ডা, জুডিশিয়ারী ক্যু, বিচ্ছিন্ন নাশকতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ঢাল বানিয়ে এক ঢিলে বহু পাখি মারা এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক পকেটে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে অস্বীকার করার মতো কাজ এখনও চলমান। বিভিন্ন সংগঠন, গোষ্ঠি দাবী আদায়ের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে- এমন আলোচনা আছে। তবে সরকার, ছাত্র-জনতা এবং সামাজিক শক্তি একের পর এক এসব ষড়যন্ত্রের পর্দা ছিন্ন করে সফল হয়েছে।
ভবিষ্যতে সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার, সরকারের চ্যালেঞ্জ, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে সবিস্তারে আলোচনার ইচ্ছা রইলো।
এ যেন নুহের প্লাবন:
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থান এখন যেন ‘‘প্লাবন ভূমি’’। এ যেন নুহের প্লাবন। উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে দেশের ১২ টি জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ফেনী জেলার। সেখানে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লায়ও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্ট গার্ড, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস ব্যাপকভাবে কাজ করছে। একই সঙ্গে এই বিপদের দিনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ছাত্রসহ সাধারণ মানুষ। গণত্রান কার্যক্রমে মানুষের ঢল নেমেছে।
গত ৫ আগষ্ট, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থানের পর গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকারের এটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ছাত্রসহ তরুন প্রজন্ম, সাধারণ মানুষের ঐক্য, উদ্যম ও সহযোগিতামূলক মনোভাব বন্যা মোকাবিলায় ব্যাপক আশাবাদ তৈরি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে উঠেছে জাতিয় ঐক্য, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ‘‘ক্ষুদ্র বাংলাদেশ’’। সমগ্র জাতি আজ যেন ফেনীর বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। গণঅভ্যূত্থান বা বিপ্লবের পর নতুন এক বাংলাদেশ বেশ দৃশ্যমান।
‘‘মানুষ কাঁদছে, তুমি পাশে দাঁড়াও’’
এই সময় সরকারের প্রধান কাজ হলো- বন্যাদূর্গত মানুষগুলোকে বাঁচানো। প্রয়োজন উদ্ধার ও ত্রাণ তদারকিতে অধিকতর সমন্বয়। ছাত্র-জনতার প্রচেষ্টাকে সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে হবে। জানা যায়, ফেনীর কোন কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও ত্রাণ পৌছায়নি। দেশের অন্য জেলাও বন্যা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে বিষয়েও প্রস্তূতি ও সতর্কতা প্রয়োজন। বন্যা পরবর্তী পূনর্বাসন পরিকল্পনা এখনই করতে হবে।
বন্যায় সর্বস্ব হারিয়ে ফেনী, কুমিল্লার হাজার হাজার মানুষ এখন কাঁদছে। এই অবস্থায় বিপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়ালে, সহায়তা সহানুভূতির হাত বাড়ালে তাদের দূর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে। ‘‘মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও’’ (শক্তি চট্টোপধ্যায়)।
‘‘তোমার পতাকা যারে দাও...’’
বাংলাদেশের একমাত্র গ্লোবাল ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের নতুন পথচলা। রবীন্দ্রনাথ স্মর্তব্য ‘‘তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি’’। এগিয়ে যাক আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রাণের বাংলাদেশ।
মো. বায়েজিদ সরোয়ার: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, গবেষক
(কালবেলা থেকে সংগৃহীত)