একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে বাধা কোথায়?

শেরিফ আল সায়ার
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৮

জোসেফ পিলসুডস্কি হলেন পোল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তাকে অনেকেই পোল্যান্ডের জাতির জনক বলেন, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এই উপাধি পাননি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো— পিলসুডস্কির হাত ধরেই দেশটিতে স্বৈরাচারের ভিত্তি শক্তিশালী হয়। তিনি ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজের কব্জায় নিয়ে আসেন, প্রায়ই সংসদ সদস্যদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতেন। এবং যারাই তার সমালোচনা করতেন, তাদেরই স্থান হতো কারাগারে। আর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চালাতেন ব্যাপক নিপীড়ন-নির্যাতন।
বিশ্বব্যাপী স্বৈরাচার সরকারগুলোর একটি বড় অস্ত্র হলো ‘ইমেইজ’— যা নিজের একটি বয়ান তৈরিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এমন একটি ইমেইজ তার অনুসারীরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতে থাকেন, যেন স্বৈরাচার সরকারকে বিকল্পহীনভাবে দাঁড়াতে সহযোগিতা করে। অনেকেই হয়তো বলতে শুরু করেন, ‘আসলে এই দেশের জন্য এমন দীর্ঘমেয়াদী এক ব্যক্তির শাসনই প্রয়োজন’। আর এটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আশেপাশে তোষণকারী একটি শ্রেণি তো থাকেই। যারা সর্বক্ষণ বোঝান— ‘আপনার বিকল্প কেউ নেই’। 
যাই হোক, এই লেখার বিষয় সেটি নয়। এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসা জরুরি গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের যাত্রাটি কেমন হবে? তার আগে একটি দোহাই দিয়ে নেই। এই লেখায় পোল্যান্ডের ইতিহাসবিদ, গবেষক এবং সাংবাদিক অ্যাডাম মিচনিকের “আফটার দ্য রিভ্যুলিউশান” প্রবন্ধ থেকে কিছু তথ্য ধার করে নেবো। ১৯৯১ সালে পোলিশ ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের পক্ষ থেকে ইলিনয় ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রবন্ধটি প্রকাশ করে।
বাংলাদেশে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে সমাজে যা হচ্ছে, সেসব কি শুধু আমাদের দেশেই হয়েছে? নাকি যখনই কোনও দেশে বিপ্লব হয়, তখনই এমন সব ঘটনা ঘটে— যা একটি সমাজে গ্রহণ করা বা মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সরাসরি বললে, যেভাবে ‘মব জাস্টিস’ চলছে, ‘উইচ হান্টিং’ চলছে, একের পর এক উদ্দেশ্যমূলক মামলা, হামলা, কোর্ট-পাড়ায় হামলা, জোর করে পদত্যাগ, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের শত্রু হিসেবে দেখা— এসব ঘটনার কথাই বলতে চাইছি। বিপ্লবোত্তর সমাজে এসব ঘটনা কি নতুন?
অবশ্যই নয়। বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর রাষ্ট্রে ও সমাজে অরাজকতা নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। আমার এর কয়েকটি পড়ার সুযোগও হয়েছে। সেখানে যেসব বিষয় দেখলাম, তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। যেগুলোতে স্পষ্ট বলা আছে, স্বৈরাচার পতনের পর গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা মোটেও সহজ নয়। বরং অত্যন্ত কঠিন এ পথচলা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা মিলিয়ে দেখা যায়।
বিগত আমলে আন্দোলন দেখলেই সরকার আঁতকে উঠতো কেন? অর্থাৎ বিরোধীদের একটা আন্দোলনের ঘোষণা শুনলেই দেখা যেত, যেনতেনভাবে উচ্চ পর্যায়ের বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করে ধরে নিয়ে যেত সরকারের পুলিশ বাহিনী। এটা তারা কেন করতো?
যেসব সরকার অন্যায়ভাবে জনতার ম্যান্ডেট ছাড়া ক্ষমতার গদিতে বসে থাকতে চাইতো, তাদের মূল সমস্যাই ছিল— সব সময় সব কিছুতে ‘সন্দেহ’ করা। ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়াই তাদের বৈশিষ্ট্য। কোনও কিছু হলেই তারা মনে করে, নিশ্চয়ই সরকার উৎখাতের একটা চক্রান্ত বিরোধীরা করছে। অতএব, উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের গাড়ি পোড়ানো মামলায় জেলে পুরে দাও। এছাড়া এলাকাভিত্তিক নেতাদের তো ভয়ভীতি এবং প্রয়োজনে গ্রেফতারের বিষয় তো আছেই। এই সন্দেহ তাকে নির্মম অপরাধ করতেও প্রলুব্ধ করে। যেমন- ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নির্মমভাবে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের দিকে গুলি ছুড়েছিল পুলিশ বাহিনী।
অ্যাডাম মিচনিক এ জায়গাটি নিয়ে বলতে চেয়েছেন, স্বৈরাচার সরকারদের যে সন্দেহ-বাতিক, এটি নিচের দিকে, অর্থাৎ জনতার দিকেও প্রবাহিত হয়। এটি অনেকটা জন্মচিহ্নের মতো উত্তারাধিকার সূত্রে পাওয়া। স্থায়ীভাবে মানুষের মাঝে এই সন্দেহের মানসিকতা গড়ে ওঠে, যার প্রভাব ব্যাপক।
এখন সরকার পতনের পর নিশ্চয়ই সবাই দেখতে পাচ্ছেন— সবার মধ্যে এই সন্দেহ বাতিকটি ঘুরপাক খাচ্ছে। যখনই কোনও ঘটনা ঘটছে অনেকেই সন্দেহ করছেন— এটি আসলে বিদায়ী সরকারের পরাজিত দল অরাজকতা সৃষ্টির জন্য করছে। যখন আনসার তাদের দাবি নিয়ে আসছে, তখন সবাই বলছেন, ছাত্রলীগ আনসার হয়ে ফিরে এসেছে, কিংবা যখন রিকশাচালকরা দাবি করছেন,  তখনও সন্দেহ করা হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবার রিকশাচালক হয়ে  চলে এসেছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি গার্মেন্টকর্মীদের নিয়ে একজন উপদেষ্টা পর্যন্ত বোঝাতে চেয়েছেন, যারা সেখানে দাবির নামে জড়ো হচ্ছে, তাদের দেখে  নাকি গার্মেন্টকর্মী মনে হচ্ছে না। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে এটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবেই তিনি সন্দেহ করলেন।
এখন আগের সরকারের বয়ানের সঙ্গে বর্তমান সময়ের বয়ানগুলোকে মিলিয়ে নিতে পারেন। আগে যাই হতো আমরা শুনতাম, সবাই বিএনপি-জামায়াত। এবার শুনতে হচ্ছে, সব আওয়ামী লীগ।
তার মানে হলো সন্দেহের যে চক্র, সেখানেই আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি। আমরা কোনও সমস্যার মূলে গিয়ে সেটাকে সমাধানের পথে না হেঁটে সন্দেহের পথে চলছি। যা একনায়কতন্ত্রের অসুখ থেকে নিস্তার পেয়ে গণতন্ত্রের পথে যাত্রাটাকে কঠিন করে তুলবে। দেশকে সুশৃঙ্খল করতে গেলে প্রথমেই বিশ্বাস আনতে হবে। আস্থার জায়গায় সবাইকে একসঙ্গে নিতে হবে। ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব বলে সবকিছুকে উড়িয়ে দিলে কোনও সমস্যার সমাধান আসবে না। এছাড়াও সন্দেহের মানসিকতা সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের। মানুষকে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা রাখতে, গঠনমূলক সংলাপে অংশ নিতে বা রাজনৈতিক বিভাজন দূর করতে বাধা দেয়।
দ্বিতীয় একটি অন্যতম আচরণ হলো— প্রতিশোধের আগুনে নিজেকে জ্বালিয়ে ফেলা। যা গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় বাধা। অনেক সময় বিপ্লব বেহাত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। অনেকেই নিশ্চয়ই  ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস জানেন।
ফরাসি বিপ্লবের পর জ্যাকোবিনদের নেতৃত্বে বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়। এরপর বিপ্লবের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও শুদ্ধি অভিযান চালায়। হাজার হাজার মানুষকে গিলোটিনে শিরশ্ছেদ করা হয়, যাদের মধ্যে রাজপরিবার, অভিজাত, পুরোহিত, এমনকি বিপ্লবী সরকারের ভেতরেই থাকা বিরোধীরাও ছিল। এই সময়টি (১৭৯৩-১৭৯৪) ‘রেইন অব টেরর’বা ‘জেকোবিন টেরর’ নামেও ইতিহাসে পরিচিত। ফরাসি বিপ্লবের শুরুর দিকে মুক্তি ও সাম্যবাদের আদর্শ সামনে রেখে বিপ্লব শুরু হলেও শিগগিরই ক্ষমতার লড়াই, নিরাপত্তার হুমকি এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চরমপন্থী নীতির উদ্ভব ঘটে— যা তাদের পরবর্তী সময়ে নেপোলিয়ান যুগে প্রবেশ করায়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই চরম নিপীড়ন আর বিশৃঙ্খল অবস্থার চক্র থেকে তারা আর বের তো হতেই পারেনি, বরং আবার রাজতন্ত্র ফিরে আসে।
এবার বাংলাদেশে নজর নিয়ে আসা যাক। গণ-আন্দোলনের পর ছাত্র-জনতার সমর্থনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এখন দেশে নানান সমস্যা চলছে, চলছে অরাজকতা। চারদিকে ‘মব জাস্টিস’। জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে, জোর করে চাকরি থেকে অবসরে, কিংবা বরখাস্ত করানো হচ্ছে, জোর করে পরীক্ষা বাতিল করা হচ্ছে, হয়রানিমূলক মামলায় যার-তার নাম যুক্ত করে দিচ্ছে, এমনকি সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী সবাই রয়েছেন মামলার তালিকায়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ারও একটা আলোচনা দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ একটা ধর্ম, তাদের সংস্কৃতি আছে, পোশাক আছে, চিন্তা আছে— এসব কিছু উপড়ে ফেলতে হবে।
এটিকেই বলা হয় প্রতিশোধ চক্র। একটি প্রশ্ন করি, রাজনীতির মাঠে কোন দল কীসের ওপর ভিত্তি করে টিকে থাকে? মানুষের ওপর? একটু ভাবলেই উত্তরটি সহজ। প্রতিটি দলের নিজস্ব আদর্শ থাকে। যখন নির্বাচন হয়, তখন দলগুলোর দর্শন কিংবা আদর্শের লড়াই হয়। কোন আদর্শকে জনগণ গ্রহণ করবে, সেটি তারা ভোটের মাধ্যমে জানায়। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সেই দল তার আদর্শ বা দর্শন নিয়ে ক্ষমতায় বসে। এখন আমরা যদি রাজনৈতিক কোনও দলের ওপর দমন-নিপীড়ন করে ভাবি, তাদের আদর্শ বা দর্শন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, কিংবা মুখ থুমড়ে পড়বে, তাহলে ধারণাটি সঠিক হবে না। 
গত ১৫ বছরে বিএনপি, জামায়াতের ওপর তো কম নিপীড়ন হয়নি। যেনতেনভাবে গুম, গ্রেফতার, মামলা, হামলা, গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, ‘আয়নাঘরে’ নিয়ে রেখে দেওয়া, সব কিছুর বাইরেও দল ভেঙে ফেলারও চেষ্টা আমরা দেখেছি। তাতে কি এরা কেউ মুখ থুবড়ে পড়েছে?
ইউরোপের এমন দেশের উদাহরণ দেওয়া যায়, যারা স্বৈরাচারী বিপ্লবের প্রথম ধাপের পর সুশাসন কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিল। যেমন, স্পেন। তারা স্বৈরাচারী শাসককে উৎখাত করার পর প্রতিশোধের চক্রে আটকে না থেকে, গণতন্ত্রের পথে সফলভাবে হাঁটতে পেরেছে। তারা প্রতিশোধের পরিবর্তে স্থিতিশীল গণতন্ত্র গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অপরাধীদের তারা সুবিচারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কোনও মতকে হত্যা না করে, বরং তারা একটি বহুমতের সমাজে একসঙ্গে বসবাসের পথ খুঁজে পেয়েছিল। তারা মনে করেছে, প্রতিশোধ ও সহিংসতা আরও একটি স্বৈরাচারি পদ্ধতি।
মিচনিক তার লেখায় বলেছেন, এই ধরনের প্রতিশোধ-পরায়ণ মনোভাব একটি উগ্র জাতীয়তাবাদ তৈরিতে সহায়তা করে। যেটি বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা এবং প্রতিহিংসায় পরিণত হয়। যেটি শুধু বিপ্লবের মূল্যবোধকে দুর্বল করে না, বরং উদীয়মান গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলাকেও হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
তৃতীয় বিষয়টি হলো, বন্ধুকেও শত্রু ভেবে ফেলা। এর অর্থ হলো, একটি গণআন্দোলন কিংবা গণঅভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লবে সবাই একই আদর্শের থাকে না। প্রত্যেকের দর্শন কিংবা আদর্শ ভিন্ন থাকে, কিন্তু লক্ষ্য থাকে একটি। সেটি হলো স্বৈরতন্ত্র কিংবা একনায়কতন্ত্রের পতন। যখন বিজয় অর্জিত হয়, তখন নানানভাগে বিপ্লবীরাও বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই যে প্রতিশোধ কিংবা আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া— এসবের বিরুদ্ধে একটি পক্ষ কথা বলা শুরু করে। কিংবা এই প্রতিশোধকে অনেকে সমর্থন করতে চায় না। তারা বরং একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার কথা বলতে চায়। কিন্তু বিপ্লবীরা এটিকেও ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করতে শুরু করে।
যেটি উদাহরণ হিসেবে দেওয়া যায়— অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের ঘটনাটি। তিনি সাংবাদিকদের সামনে ‘আওয়ামী লীগে অনেক ভালো নেতা আছেন’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি এও বলেন, দলটির প্রধান যেন দেশে এসে দলের জন্য কাজ শুরু করেন। বিচারের মুখোমুখী হন। কিন্তু সেদিনই দেখা গেলো— ছাত্ররা সন্দেহ প্রকাশ করে বলে ফেললেন, উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ফ্যাসিস্টদের আবারও পুনর্বাসনের কথা বলছে। এমনকি তারা প্রয়োজনে উপদেষ্টাকে গদি থেকে নামিয়ে দেওয়ারও কথা বলেন। ফলস্বরূপ কয়েকদিন পরই দেখতে পেলাম, সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করা হয় এবং পরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও যুক্ত করা হয়। অথচ আন্দোলনের সময় সাবেক সেনা কর্মকর্তারা যখন আলোচনা সভা করে ছাত্রদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন, এই সাখাওয়াত হোসেনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং সমর্থন জানিয়ে বক্তব্যও দিয়েছিলেন।
অর্থাৎ গণতন্ত্রের পথে মিত্রকে শত্রু ভাবাও একটি বড় বাধা।
মিচনিক তার প্রবন্ধে বলতে চান,  নিপীড়নমূলক শাসন যখন ভেঙে পড়ে, তখন জাতির সামনে নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর তখনই সামনে চলে আসে কিছু চ্যালেঞ্জ। বাস্তবতায় দেখা যায়, পুরোনো কাঠামো এবং মনোভাবগুলো নতুন রূপে ফিরে আসা শুরু করে। যেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
লেখাটি শেষ করতে চাই কিছু কথা বলে— আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, নব্বইয়ে স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর আবারও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, সঠিক পথে না থাকলে স্বৈরতন্ত্র তার চেহারা বদল করে ফিরে আসতে পারে।  তাই আমরা সবাই একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কার দেখতে চাই। যেখানে সব মত ও পথ একসঙ্গে একটি সুষ্ঠু ধারায় দেশকে সুন্দরভাবে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাবে। তাই আমাদের ঠিক করতে হবে— আমরা কি পলিটিক্যাল কালচার বা রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার চাই, নাকি সুনির্দিষ্ট কোনও পলিটিক্স বা রাজনীতিকে শেষ করে দিতে চাই।
লেখক: হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড প্ল্যানিং, বাংলা ট্রিবিউন