পার্বত্য চট্টগ্রামের সবুজ পাহাড়ের ভিতর দিয়ে আবার বইছে হিংসার প্রবল ঝরনাধারা। গত ১৮, ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর, দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘাত-সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনাগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক ও গভীর উদ্বেগের। পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘটিত সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ সময়ে সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত করতে হবে। না করা গেলে সেখানে বড় ধরনের সংঘাতের রূপ নিতে পারে। এই লেখায়, বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে করণীয় কিছু বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করব।
১৮ সেপ্টেম্বর, বুধবার খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঊচ্ছৃঙ্খল জনতার গণপিটুনিতে মো. মামুন নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন বৃহস্পতিবার বিকালে দীঘিনালা কলেজ থেকে বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পাহাড়িদের সঙ্গে বাঙালিদের সংঘর্ষ বাধে। এ সংঘর্ষের একপর্যায়ে, লারমা স্কয়ারে দোকান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। ১০২টি দোকান পুড়ে যায়। যার মধ্যে পাহাড়িদের ৭৮টি ও বাঙালিদের ২৪টি দোকান রয়েছে।
ওই দিন রাতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং তিনজন পাহাড়ি যুবক নিহত হয়। শুক্রবার আইএসপিআর এক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে ‘গোলাগুলি’তে তিনজন নিহত হয়েছে। এ পরিস্থিতির জন্য পাহাড়িদের সংগঠন ইউপিডিএফকে (মূল) দায়ী করছে সেনাবাহিনী। তবে ইউপিডিএফ (মূল) বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
দীঘিনালার ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে রাঙামাটি স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বিক্ষোভ-মিছিল বের করে পাহাড়িরা। মিছিলটি বনরূপা বাজারে গেলে গুজব ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এতে দোকানপাট, বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘাতে একজন পাহাড়ি তরুণ নিহত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেনা, পুলিশ ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল শনিবার রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি সফর করে। উদ্ভূত সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে পাহাড়ের বাসিন্দাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সৃষ্ট সংকট নিরসনে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর গণপিটুনি ও পরবর্তী সময়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানিতে সরকার গভীরভাবে দুঃখিত ও ব্যথিত। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দ্রুত নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সহিংসতা পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সম্পর্ক, সামাজিক সংহতি, শাসন ব্যবস্থা, নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রভাবগুলো মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি পরিবেশ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে একেবারেই ভিন্ন। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের ঘটনা দুঃখজনকভাবে আগেও অনেক ঘটেছে। বিভিন্ন কারণে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক ক্ষোভ রয়েছে। আবার বাঙালিদের মধ্যেও রয়েছে ক্ষোভ। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আস্থার অভাব। এর ফলে যে কোনো ঘটনা উভয় সম্প্রদায় তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ নিয়ে দৃঢ় অবস্থানে চলে যায়। উদাহরণস্বরূপ ঢাকার গণপিটুনির ঘটনা একভাবে দেখা হয়। অন্যদিকে খাগড়াছড়ির ঘটনাটি মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক ঘটনা হিসেবে পাহাড়ে প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সামাজিক সংহতি যেন ভেঙে না পড়ে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পাহাড়ের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিবর্গকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্র যেন কারও প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট না হয়।
দীর্ঘদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সুবাদে বর্তমানে আলোচিত তিনটি স্থান অর্থাৎ দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি আমার অত্যন্ত পরিচিত। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের (১৯৯৭) পরবর্তী সময়ে ২০০৩-২০০৫ সালে, রাঙামাটি এলাকায় আমাদের পদাতিক ব্যাটালিয়ন মোতায়েন ছিল। সেখানে তখন এক নতুন বাস্তবতা। সে সময়ের দুটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনের পাশাপাশি বিশেষত রাঙামাটি শহরে পাহাড়ি-বাঙালি সহাবস্থান রক্ষা আমাদের জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হতো, যেন বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা না ছড়ায়।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন খুবই জরুরি কাজ। পাহাড়ের এই সংঘাতে এবারও সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালিরাই সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। পাহাড়িদের অনেকে আতঙ্কে বাড়িঘর ছাড়া হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দেওয়া উচিত। এসব ঘটনায় প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। সরকার আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার কথা বলেছে। যাদের বাড়িঘর ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন। এর জন্য সরকারি ও এনজিওর সহায়তা প্রয়োজন হবে। এবারের সংঘাতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা পাঁচজন তরুণকে হারিয়েছি। আশা করি, সরকার ও সমাজ এসব পরিবারের পাশে থাকবে।
এ ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আশা করি, তদন্ত কমিটি অত্যন্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। পরবর্তীতে দোষীদের যেন শাস্তির আওতায় আনা হয়।
এবার সহিংস ঘটনার পর ‘বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র’-এর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা, এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা বার্তা দিতে চাই, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে থাকব’। স্মরণে রাখা দরকার, বিগত সরকার পতনের পর দেশ এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই তা করতে হচ্ছে। ফলে, কোনো সহিংস পরিস্থিতির পেছনে কোনো দুষ্টচক্রের ইন্ধন রয়েছে কিনা, জাতীয় স্বার্থে তা-ও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
এ সময় সব পক্ষকে ধৈর্য ধরতে হবে। সরকারকে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাহাড়ি ও বাঙালি দল ও সংগঠনগুলো থেকে দায়িত্বশীল ও পরিপক্ব আচরণ কাম্য। এবারের সহিংস ঘটনায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার। পাহাড়ের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এই মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ও অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছিল।
সংঘাত এড়ানোর জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা ও মধ্যস্থতার ব্যবস্থা করা উচিত। এই প্ল্যাটফরমে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, বাঙালি, সরকারি চাকরিজীবী, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি থাকতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে ও সেখানে শান্তি ফেরাতে পাহাড়ি ও বাঙালি দুই সম্প্রদায়ের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
যদি সহিংসতার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি কারণগুলো মোকাবিলা না করা হয়, যদি উভয় পক্ষের ঐতিহাসিক ক্ষোভগুলো মীমাংসা না হয়- তাহলে প্রতিশোধমূলক হামলার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তখন সহিংসতার একটি ঘটনা অন্য সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে। ফলে প্রতিশোধের চক্র শুরু হতে পারে, যা জাতিগত বিভেদকে আরও গভীর করবে। ভারতের মণিপুর এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ।
আইএসপিআরের আশঙ্কা, চলমান উত্তেজনার জেরে তিন পার্বত্য জেলা ভয়াবহ দাঙ্গাকবলিত হতে পারে। এজন্য এ সময়ে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতি সর্বশক্তি দিয়ে শান্ত করা। যে কোনো মূল্যে পাহাড়ে স্থিতিশীল পরিবেশ ও শান্তি ফেরাতে হবে।
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৭ বছর চলছে। এর অনেকগুলো ধারার বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে বেশ কিছু ধারার বাস্তবায়ন হয়নি। পাহাড়িরা শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন চাইছে। অন্যদিকে চুক্তির বেশ কিছু বিষয়ে বাঙালিদের আপত্তি রয়েছে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে উভয় পক্ষের গ্রহণযোগ্য সমাধান প্রয়োজন। অন্যদিকে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আর একটি বার্নিং ইস্যু। এরও সমাধান প্রয়োজন। বিষয়গুলো অত্যন্ত জটিল, তবে অসম্ভব নয়। সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ পূর্বক ১৩টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। বর্তমানে পাহাড়ে ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে অর্ধেক হলো বাঙালি। এদের ৮০% এর জন্ম পার্বত্য চট্টগ্রামে। কেন যেন ঢাকার মিডিয়ার আলোর রশ্মি গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী অবহেলিত বাঙালির ওপর পড়ে না। পাহাড়ে বাঙালি একটি বাস্তবতা। উভয় সম্প্রদায়কে নিয়ে কীভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা এই অঞ্চলের তরুণ প্রজন্মকে ভাবতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। এর পূর্বদিকে ভারতের মিজোরাম, উত্তরে ত্রিপুরা, পূর্বদিকে মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন প্রদেশ। এই পুরো অঞ্চলটি সংঘাতপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। জটিল এক জাতিগত সমীকরণে ঢুকছে এই পুরো অঞ্চল।
পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রধারী আঞ্চলিক দলের সংখ্যা ৬টি। উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অস্ত্র থাকলে সরকারের পক্ষে শান্তিচুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন মোটেই সম্ভব নয়। ২০২২ সালে কেএনএফ একটি কঠিন বার্তা দিয়ে গেল। এই সেপ্টেম্বরের ঘটনাগুলোও দেখিয়ে দিল পাহাড়ের নাজুক পরিস্থিতির কথা।
পাহাড়ের কৌশলগত গুরুত্ব, কৌশলগত অবস্থা, স্পর্শকাতরতা, ভঙ্গুরতা, ভূ-রাজনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বদা বিবেচনায় রাখতে হবে। সেনাবাহিনীসহ সব নিরাপত্তা বাহিনীকে শক্তিশালী, সদা সতর্ক, চৌকশ ও প্রস্তুত থাকতে হবে। এখানে গোয়েন্দা সংস্থারও বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। মণিপুর, চিন ও রাখাইনের ঘটনাপ্রবাহ ও চাঞ্চল্য যেন পাবর্ত্য চট্টগ্রামে বিস্তার না করতে পারে সে জন্য রাজনৈতিক, সামরিক ও কৌশলগতভাবে পূর্ণ সজাগ থাকতে হবে।
পাহাড়ের পরিস্থিতি এখন প্রায় শান্ত হয়ে এসেছে। এখন সবুজ পাহাড়ে জুমের ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত পাহাড়ি জুমিয়ারা। সবার হয়তো ভালো ফসল হয়নি। তবুও তাদের মুখে কি অনাবিল হাসি। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে পাহাড়ের সমতল ভূমিতে হালচাষ প্রচলনে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছিলেন সমতল থেকে আসা বাঙালি কৃষকরা। এখন পাহাড়ি-বাঙালির চেষ্টায় কখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম ফলে ফসলে প্রায় উপচে পড়ে। গত আগস্ট মাসের এই সময়ে খাগড়াছড়িতে প্রবল বন্যা হয়েছিল। বন্যার্তদের উদ্ধারে ও ত্রাণ তৎপরতায় সেনাবাহিনী কাজ করেছিল। তখন কে পাহাড়ি, কে বাঙালি কোনো ভেদাভেদ ছিল না। দারিদ্র্য, হত্যাকাণ্ড, বঞ্চনা, অপমান, দাঙ্গার দুঃস্বপ্নময় স্মৃতি পেরিয়ে পাহাড়ের সবার মুখে হাসি ফুটুক।
আমাদের জনগণ এখন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। এর অন্যতম স্পিরিট হলো- রিকনসিলিয়েশন ও ইনক্লুসিভনেস। পাহাড়ের পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সবাইকে সমমর্যাদায় অভিষিক্ত করে আমরা একত্রে হাঁটব। কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে। বহুত্ববাদ, সম্প্রীতি ও সহনশীলতা হোক বাংলাদেশের আত্মা। উদার বাংলাদেশের বৈচিত্র্যের মধ্যে আমাদের সব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও জনজাতির সুরভিত ফুল ফুটুক। শান্তি নামুক সবুজ পাহাড়ে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, গবেষক
[email protected]
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন