১৫ নভেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায়, নিউইয়র্ক শহরের জ্যামাইকায় অবস্থিত গ্রীন চিলি রেঁস্তোরায় যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সদস্য ও ডিরেক্টরদের এক যৌথ সভায় কমিটির নতুন তিন বছর মেয়াদী কার্য্যকরী পরিষদ, পরিচালনা পরিষদ, বোর্ড অফ ট্রাস্টি এবং এ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠিত হয়। প্রায় এক শ’ সাধারণ সদস্য ও ডিরেক্টরের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত পাঁচ ঘন্টা স্থায়ী উক্ত সভায় সদস্যপদ নবায়ন ও নির্বাচন ছাড়াও দেশে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ের উপর একটি আলোচনা সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত আর সভাটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ডক্টর দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু গোপ।
নতুন কার্য্যকরী পরিষদে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন ডাক্তার টমাস দুলু রায়, ডক্টর দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য ও রণবীর বড়ুয়া; সম্পাদক পদে বিষ্ণু গোপ; এবং কোষাধ্যক্ষ পদে চন্দন সেনগুপ্ত। নবনির্বাচিত সহসভাপতিরা হলেন প্রদীপ মালাকার, রীণা সাহা ও তপন সেন; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পার্থ তালুকদার, কুমার বাবুল সাহা, ও সুমন মিত্র; এবং, অর্গেনাইজিং সেক্রেটারি পদে সুকান্ত দাস। এছাড়া অন্যান্য সেক্রেটারি পদে নির্বাচিতরা হচ্ছেন: পিয়াস দাস, জলি সাহা, বামেশ রায়, সুজন রায়, রণজিৎ পুরকোয়স্থ, প্রদীপ কুন্ডু, জয়ন্ত চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ দেব, এ্যাডওয়ার্ড হলসানা, রাজীব নন্দী, বিশ্বজিৎ সাহা, রাণা দত্ত, আশীস পাল, ঝলক রায়, বিকাশ সরকার, গৌতম সরকার, রণি দাস, মৈত্রিশর বড়ুয়া, ও বিপ্লব পাল। এগ্জিকিউটিভ মেম্বার পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা হচ্ছেন হিমাদ্রী বণিক, অনিমেষ রায়, অসীম কুমার ধর, শৌমিক চৌধুরী, গোপাল চন্দ্র গোপ, হিরালাল রায়, সুমন দাস, শেখর রঞ্জন পাল, ও স্টিভেন মন্ডল। নতুন সহযোজিত ডিরেক্টর হলেন: ডাক্তার সমীর সরকার, ইন্দ্রজিৎ সরকার, দেবাশীষ দেবনাথ, শ্যামল রুদ্র, অমিত ঘোষ, রমাকান্ত বিশ্বাস, সোমনাথ ঘোষ, শ্যামল চন্দ, ও সমর কৃষ্ণ রায়। বোর্ড অফ ডিরেক্টরর্স এর চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মেম্বার সেক্রেটারি পদে নিয়োগ নির্বচিত হন যথাক্রমে অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত, রূপকুমার ভৌমিক, ও চন্দন সেনগুপ্ত। বোর্ড অফ ট্রাষ্টির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয় সুশীল কুমার সাহাকে। তা’ছাড়া সমাজের একুশজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে এ্যাডভা্ইজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন ইলেকশন কমিশনার মুক্তিযোদ্ধা অবিনাশ আচার্য্য, ডক্টর জিতেন রায়, ও অনুকূল অধিকারী; এবং, সাবজেক্ট কমিটিতে ছিলেন সুশীল কুমার সাহা, অসীম সাহা, ভজন সরকার, সুশীল সিনহা, সুকান্ত দাস, ও ডক্টর দিলীপ নাথ।
উল্লিখিত ব্যক্তিবৃন্দ ছাড়া যেসকল ডিরেক্টর ও সাধারণ সদস্য, উপদেষ্টা ও ট্রাষ্টী উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন তারা হচ্ছেন শিতাংশু গুহ, ডাক্তার প্রভাত দাস, পরেশ সাহা, রণজিৎ ভাদুড়ী, বাপ্পী সেন চৌধুরী, পারিজাৎ দাস, শিবু পোদ্দার, দিলীপ কুমার নাথ, হরিগোপাল বর্ম্মণ, নিতাই নাথ, রবীন্দ্র শীল, আশীষ ভৌমিক, অজিত চন্দ, মতিলাল নাথ, রনেশ চক্রবর্তী, সুভাষ সাহা, দিলীপ চক্রবর্তী, প্রণব রায় রনো, চঞ্চল চক্রবর্তী, বঙ্কিম বৈরাগী, রাজর্ষি নাথ, মানিক চন্দ্র দাস, শোভন লাল রায়, মৃন্ময় ব্যানার্জী, পরেশ ধর, চঞ্চনা চাকমা, মোহনজী বানিয়া, শেখর রঞ্জন পাল, হিরালাল রায়, হিরেন্দ্র চৌধুরী, লুমেন বড়ুয়া, রাজেশ রায়, বিকাশ বড়ুয়া, প্রসেনজিৎ বড়ুয়া, প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত, সিতাংশু গুহ, ডক্টর জিতেন রায়, প্রদীপ মালাকার, রূপ কুমার ভৌমিক, ডক্টর দিলীপ নাথ, চঞ্চনা চাকমা, চন্দন সেনগুপ্ত, ভজন সরকার. সুশীল সিনহা, ডাক্তার প্রভাত দাস, ডক্টর দ্বিজেন ভট্টাচার্য প্রমুখ। বক্তারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরেুদ্ধে অব্যাহত বৈষম্যমূলক আচরন ও সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করেন; তাঁরা বিশেষ করে আ্যডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মত নিরপরাধ সংখ্যালঘু নেতাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মামলা, ও জাতীয় পতাকার অবমাননার কথিত অভিযোগে ৩০ অক্টোবর ১৯ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাগুলো প্রত্যাহার করা এবং হাজারিগলির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত নির্যাতিতদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানান। বক্তাগণ প্রশ্ন তোলেন, ৫ আগস্টের সরকার পতনের সময় থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, উপাসনালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন এবং হত্যা, এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক সহ অসংখ্য সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনার জন্য দায়ি সাপ্রদায়িক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনা-সমর্থিত সরকার কোনো দৃশ্যমান আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন?
একাধিক বক্তা বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন করেন যে, সারা দেশে যখন সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় তখন মেজিস্ট্রেসি ক্ষমতাপ্রাপ্ত সেনাাবহিনী এবং পুলিশ বাহিনী নিশ্চেষ্ট দর্শকের ভূমিকা পালন করে, কিন্তু হাজারি গলিতে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারীকে তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করে ব্যাপারটা সুরাহা করে উল্টো সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারীদের নির্যাতনে লিপ্ত হন কীকরে? তাদের জিজ্ঞাসা যেসকল সেনা কর্মকর্তাদের অবহেলায়, প্রশ্রয়ে বা সক্রিয় অংশ গ্রহনে দেশের সংখ্যালঘু মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে বা মৃত্যু বরণ করছে তারা কোন যোগ্যতায় জাতিসংঘের শান্তি বাহিনীতে চাকরি নিয়ে বিদেশে শান্তি রক্ষা করতে যাবেন?
দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট বিষয়ে বলতে গিয়ে বক্তারা সম্প্রতি অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধান থেকে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' বাদ দেওয়ার যে প্রস্তাব করেছেন এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। ফ্যসিবিাদী বা তাদের দোসর বলে এক ডজনের ওপর দলকে আগামী নির্বাচনের বাইরে রাখা উচিৎ বলে ক্ষমতায় আসীন কোন কোন উপদেষ্টা জোর গলায় যে বক্তব্য দিচ্ছেন এর প্রেক্ষিতে বক্তাগণ বলেন, যেসকল দল সংবিধানেই বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধ বা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, গণহত্যার অপরাধে দোষী এবং যারা নারী-পুরষ, ও সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকারে বিশ্বাস করে না, কিংবা যে দল লোগাং এবং ২০০৪-এর একুশে আগষ্ট ম্যাসাকার করেছে তারাও তো এই মানদন্ডে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের অযোগ্য। বক্তারা বলেন যে তাঁদের মতে এই সমস্ত অপরিপক্ক চিন্তা ভাবনা জাতিকে বিভক্ত করবে এবং দেশে অস্থিরতার সৃষ্টি করবে, যা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকেই ব্যর্থ করে দেবে; তাই,বরং সকল দলকেই নির্বাচন করতে দেওয়া উচিৎ, এবং জনগণ ভোটের মাধ্যমে ঠিক করবে কারা দেশ পরিচালনা করবে।
নবনির্বাচিত কর্মকর্তাগণ সভায় আগতদের এই বলে নিশ্চয়তা দেন যে, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠানটির জন্মের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ যেভাবে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও তাঁদের ওপর সরকার এবং ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী, মৌলবাদী ও উগ্রপন্থীদের নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছে এবং প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কে বিশ্বের সংশ্লিষ্ট সকল সরকার, আইন প্রণেতা, ও সংস্থাকে অবহিত করে এসছে সেটা অব্যাহত থাকবে।
সভার পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর ইউনুসের উদ্দেশ্যে বিনীত প্রশ্ন রাখা হয়, উনি নিজে এবং ওনার সহযোগী “ছাত্র সমন্বয়করা” ন্যায় বিচার, ন্যয্যতা, ও সমতা-ভিত্তিক সমাজের কথা বলছেন, কিন্তু সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন।
সভা আশা ব্যক্ত করে যে, প্রেধান উপদেষ্টা ও শান্তির জন্য নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনুসের তত্বাবধানে সংবিধানের মূল নীতি ধর্ম-নিরপেক্ষ-গণতন্ত্র এবং জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সম-অধিকার, এবং ভাষা-ভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুরক্ষিত থাকবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদ সহ দেশে আন্দেলনরত সকল সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর আট দফা দাবির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে বলা হয় যে, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের একটি ড্রাফট বিল, যা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছিল, শিগগীরই প্রধান উপদেষ্টার কাছ প্রেরণ করা হবে। - প্রেস বিজ্ঞপ্তি।