রাহাত আপা, এক সংগ্রামী মায়ের প্রতিচ্ছবি, যিনি ৩২ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের এককভাবে বড় করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি সন্তানদের শুধু ভরণ-পোষণ নয়, শিক্ষা-দীক্ষায় স্বাবলম্বী করে তোলেন। রাহাত আপার সন্তানরা এখন প্রতিষ্ঠিত, আর তিনিও জীবনের এই অধ্যায়ে নিজের সাফল্যের গল্প বুনছেন। বর্তমানে তিনি কানাডার টরন্টোয় বয়স্কদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সময় কাটান।
পারুল আপা বাংলাদেশে এনজিওতে কাজ করতেন, টরন্টো এসে নিজের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। ১২ বছরের কঠোর পরিশ্রম শেষে তিনি অবসরে যান এবং বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নেন। রাহাত আপার মত তিনিও বাঙালি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ধরে রাখতে চেষ্টা করছেন।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে টরন্টোর বাংলা টাউনের রেডহট রেস্টুরেন্টে আয়োজিত আলোচনা সভায় জীবনের নানা খণ্ডচিত্র তুলে ধরেন নবীন ও প্রবীণ বাঙালিরা। কানাডিয়ান সেন্টার ফর ইনফরমেশন অ্যান্ড নলেজের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ইমাম উদ্দিন। নবীন-প্রবীণের এই গল্পের সন্ধ্যায় বাঙালির জীবনের খণ্ডচিত্র উঠে আসে। অনুষ্ঠানে ৩২ জন নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন, যারা বিভিন্ন পেশা ও প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই তাদের জীবন সংগ্রাম, বন্ধুত্ব, ব্যর্থতা ও সাফল্যের গল্প শেয়ার করেন। বিটিভির প্রাক্তন সংবাদ পাঠিকা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আসমা আহমেদ পারিবারিক মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। উন্নয়ন কর্মী রীণা সেন গুপ্তার গল্পে উঠে আসে মেয়ের জন্য ভালবাসার গল্প ও কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের গল্প। মুক্তিযোদ্ধা নিত্য গোপাল দেবনাথ তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে বলেন, ‘কীভাবে কানাডায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নতুন জীবনের পথ খুঁজে নিয়েছেন।’ আর নবাগতদের ইংরেজি শেখানোর মাধ্যমে নিজের অবস্থান তৈরি করার কথা বলেন গুলনাজ আজাদ।
অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা তুলে ধরা। বিশেষত নবীন ও প্রবীণের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করার প্রচেষ্টা। এই আয়োজন শুধু একটি গল্প বলার অনুষ্ঠান নয়; এটি বাঙালি সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ও জীবনের বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতার উদযাপন। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে আমাদের কাছে বলার মত গল্প থাকে, যা অনুপ্রেরণা জোগায় ও আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।