নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানের প্রাণকেন্দ্রে জনবহুল লয়ার ইস্ট ভ্যালিতে সাইডওয়াকের একপাশে দেয়া হচ্ছে আজান। আজানে সাড়া দিয়ে মুসল্লীরা সারিবদ্ধভাবে সেখানে দাড়িয়েছেন নামাজে। বাইরে তখন তাপমাত্রা মাইনাস থ্রি। ফিলিংয়ে যা মাইনাস সেভেন। এত কনকনে ঠান্ডার মাঝেও, আল্লাহর আনুগত্যে সবাই আদায় করছেন নামাজ। এটি নিউইয়র্ক সিটিতে বাঙালি কমিউনিটির ল্যান্ডমার্ক হিসেবে পরিচিত প্রায় ৫০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মদিনা মসজিদের বর্তমান চিত্রের বিবরণ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ওজুখানা, বেইজমেন্ট, প্রথম ও দুই তলায় চলছে নির্মাণ কাজ। বেইজমেন্টে এবং প্রথম ফ্লোরে ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। মিস্ত্রিরা ব্যস্ত, খুব দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষের জন্য। আর এডিসেম্বর মাসের দুই তারিখ থেকে মসজিদের ভিতরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জুম্মার নামাজ ম্যানহাটানের সেন্ট মার্ক চার্চে তিন জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে সবার সহযোগিতায়, আবার মসজিদে জুম্মাসহ প্রতি ওয়াক্ত নামাজের কার্যক্রমে ফিরতে চায় মসজিদ কমিটি। সে লক্ষ্যে প্রথমেই খুব দ্রুত দুই মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এই অর্থ পেলে রমজানের আগে মসজিদটি আবার নামাজের জন্য চালু করা সম্ভব হবে। আর এ অর্থ সহায়তার জন্য নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদের জন্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন বলে আশাবাদ মসজিদ কর্তৃপক্ষের।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন জালাল জানান, ইসলামিক কাউন্সিল অব আমেরিকা মদিনা মসজিদ ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর থেকেই শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বব্যাপী মসজিদটি সুপরিচিতি পায়। ইসলামী কাউন্সিল অব আমেরিকা মদিনা মসজিদ, বাঙালি মুসলমানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রথম মসজিদ এবং নিউইয়র্ক সিটির দ্বিতীয় মসজিদ। গত রমজানে মসজিদটির পুন:নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এখন ভিতরের সংস্কার কাজ শেষ করতে পারলে আবার মসজিদের ভিতরে নামাজসহ মসজিদের সকল কার্যক্রম শুরু করা যাবে দ্রুত। এজন্য প্রাথমিকভাবে দ্রুত এ কাজ শেষ করতে প্রয়োজস ২ মিলিয়ন ডলার। বাকিটা সংস্কারে আরো প্রায় ৫ ডলার মিলিয়ন প্রয়োজন।
জানা গেছে, পাঁচ তলা এই মসজিদেও কনস্ট্রাকশন কাজ শুরু হয় গত মার্চ মাসে। এখানে মসজিদেও মুসল্লিদের জন্য রয়েছে ১৬টি রেস্ট রুম, ২২টি ওজুখানা, একটি গোসলখানা, মৃত ব্যক্তির গোসলখানার ব্যবস্থা ছাড়াও মৃতদেহ রাখার জন্য হিমায়িত লাশ রাখার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত, জনবহুল নিউইয়র্ক সিটিতে মদিনা মসজিদকে একটি দৃষ্টিনন্দন ল্যান্ডমার্ক মসজিদ হিসেবে নির্মাণে প্রয়োজন সাত মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে চলতি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মসজিদটির ভিতরে নামাজসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বেসমেন্ট, ১ম তলা ও ২য় তলার কাজ সম্পন্ন করে মুসল্লিদের ব্যবহারের সুবিধার্থে সাময়িকভাবে খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কন্ট্রাক্টরকে অনুরোধ করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। কন্ট্রাক্টর দুই মাসের মধ্যে উল্লিখিত কাজ শেষ করার লক্ষ্যে দ্রুত কাজ করে যাচ্ছেন। এজন্য মসজিদের এ কাজ সম্পন্নে আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইবোনদের কাছে মুক্ত হস্তে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে মদিনা মসজিদে দান করার অনুরোধ জানান। মসজিদে যারা নামাজ আদায় করতে আসেন, তাদের কাছেও অর্থ সহায়তা চাইছেন।
নিউইয়র্ক সিটিতে একমাত্র মদিনা মসজিদ যেখানে সিটিতে কর্মজীবি মানুষ নামাজ আদায়ের পাশাপাশি সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রামও নেন। এজন্য এ মসজিদটি মুসলিম কমিউনিটির জন্য এক প্রশান্তির স্থান।
জরুরী ভিত্তিতে, মদিনা মসজিদ নির্মাণ কাজের জন্য, মোট সাত মিলিয়ন ডলারের মধ্যে, দুই মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। মুক্ত হস্তে আপনার দান পাঠাতে www.nycmadinamasjid.org ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। অথবা Zelle করুন 470-772-8323 নম্বরে।
বর্তমানে মুসল্লিরা প্রতি ওয়াক্ত নামাজ প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে মসজিদের সামনে খোলা রাস্তায় আদায় করছেন। নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ ম্যানহাটনের ২য় এভিনিউয়ের সেন্ট মার্ক চার্চ ১৩১ ইস্ট ১০ম স্ট্রিটে সাময়িকভাবে তিনটি জামাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে ১ম জামাত ১২টা ১৫ মিনিটে, ২য় জামাত ১টায় ও ৩য় জামাত ১টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এই চার্চে অজুও রেস্ট রুমের ব্যবস্থা নেই। এজন্য মুসল্লিরা কিছুটা দূর্ভোগে পড়েন। মসজিদ কর্তৃপক্ষ আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে নিজ নিজ ব্যবস্থায় অজু ও রেস্ট রুমের কাজ সেরে জুমার জামাতে শরিক হওয়ার জন্য মুসল্লিদের অনুরোধ করেছেন।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানান, মদিনা মসজিদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর দুজন কোরআনে হাফেজ দ্বারা খতমে তারাবির নামাজ নিয়মিত পড়ানো হচ্ছে। এ বছরও দুজন হাফেজ দ্বারা তারাবির নামাজ পড়ানো হবে। বর্তমানে মদিনা মসজিদে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাফেজ দ্বারা সুমধুর কণ্ঠে তেলাওয়াতের মাধ্যমে নামাজ আদায় হচ্ছে। এ ছাড়া আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী একজন বিজ্ঞ হাফেজ আলেম মুফতি মাহদি চৌধুরী বর্তমানে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন। গত বছরও ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ বছরও সবার সহযোগিতা নিয়ে ইফতারের ব্যবস্থা করা হবে মদিনা মসজিদে।