হোমকেয়ার সেবা : সিডিপ্যাপ নাকি পিসিএ কোনটা প্রয়োজন?

১ এপ্রিল থেকে নতুন নিয়মে হোমকেয়ার সেবা, ভুল করলে সেবা বন্ধ
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:১৯

নিউইয়র্কের প্রায় ৬ শতাধিক হোম কেয়ার সেবা কোম্পানী ও এজেন্টরা সিডিপ্যাপ সার্ভিস প্রদানের দায়িত্ব হারাচ্ছেন। সম্প্রতি নিউইয়র্ক স্টেটের ডিওএইচে’র নতুন নিয়োগকৃত পিপিএল এর কাছে সিডিপ্যাপ সার্ভিস হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে হোম কেয়ার সিডিপ্যাপ সার্ভিস গ্রহীতাকে পিপিএল এর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পিপিএল তার অধীনে থাকা নির্দিষ্ট কোম্পানী ও এজেন্টরা জানুয়ারি থেকে সিডিপ্যাপ সার্ভিসের আওতাধীন হোমকেয়ার সেবাদাতা ও গ্রহীতাদের মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করবে।
এদিকে এ সিদ্ধান্তের পর অনেক সেবা কনজ্যুমার ও সেবা দাতা সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম এ থাকবেন নাকি পিসিএ-তে স্থানান্তর হবেন এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগছেন। এছাড়াও নতুন কোম্পানি সিডিপ্যাপ প্রোগ্রামে ঘণ্টা প্রতি হোম কেয়ারের বেতন কত দিবে এবং কিভাবে সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম পরিচালনা করবে সেটি নিয়েও দ্বিধাগ্রস্ত। পিপিএল নতুন নিয়মে কিভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং বেতন কাঠামো কি হবে সেটি এখনো স্পষ্ট করেনি।
বাঙালি কমিউনিটির প্রায় কয়েক হাজার পরিবার হোকেয়ার সেবা গ্রহীতা ও সেবা দাতা কার্যক্রমে জড়িত। কমিউনিটির অনেকেই নিজের পরিবারের বয়োবৃদ্ধ পিতা-মাতা কিংবা নিজের আত্মীয় স্বজনের সিডিপ্যাপ হোমকেয়ার দিয়ে আসছেন। এছাড়াও বর্তমানে হোম কেয়ার সেবা কোম্পানী ও এজেন্টদের সাথে কাজ করে তারা অনেকেই অভ্যস্ত। কিন্তু সিডিপ্যাপ সার্ভি থেকে পিসিএ প্রোগ্রামে পরিবর্তন করলে রয়েছে ভিন্ন শর্ত। এমনকি সিডিপ্যাপের নতুন কোম্পানির শর্তে হের ফের হলেই হারাতে পারেন হোমকেয়ার। তাই সিডিপ্যাপ প্রোগ্রামে নতুন কোম্পানীর আধীনে যাবেন নাকি বর্তমান কোম্পানীর সাথে পিসিএ প্রোগ্রামে হোম কেয়ার সেবা পরিবর্তন করবেন এমন চিন্তায় রয়েছেন অনেকেই। তবে সিডিপ্যাপ প্রোগ্রামে ইনকামে
অপরদিকে বর্তমানে হোম কেয়ার সেবা দিচ্ছে এমন একাধিক প্রতিষ্ঠান ও তাদের সংশ্লিষ্ট এসোসিয়েশন এ বিষয়ে কোর্টে মামলা করেছে। তারা চাইছে আগের নিয়মে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত হোমকেয়ার কোম্পানীর মাধ্যমে সিডিপ্যাপের সেবা দেওয়া হোক।
তাদের দাবি, নতুন এ পরিকল্পনায় সিডিপ্যাপ এর সেবায় কোন পরিবর্তন না হলেও সেটার নিয়ন্ত্রণ নির্দিষ্ট কোম্পানীর অধীনে চলে যাওয়ায় এতে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায় ধস নামবে। নিউইয়র্কে ছোট-বড় প্রায় ৬ শতাধিক এজেন্সী দীর্ঘদিন সিডিপ্যাপ প্রোগ্রামের আওতায় হোম কেয়ার সেবা পরিচালনার ব্যবসা করে আসছে। এতে প্রায় কয়েক হাজার কর্মী চাকরি করছেন। হোম কেয়ার সার্ভিসের পরিবর্তনে গভর্ণর এ পরিকল্পনায় ১২০০ নতুন কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসায় জড়িত ৬ শতাধিক এজেন্সীর কর্মরত কর্মীরা চাকরি হারাবেন। তাছাড়া সিডিপ্যাপ এর আড়াই লাখ কনজ্যুমারকে একসাথে হস্তান্তর এবং একটি এজেন্সীর দ্বারা সেবা প্রদানে বেশ জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কমিউনিটির অনেক সেবা গ্রহীতা যারা তারা পুরাতন এজেন্সীর মাধ্যমে সেবা গ্রহণে অভ্যস্ত। এছাড়াও এসব কোম্পানী কিভাবে সেবা দিবে এবং বেতন কাঠামো কি হবে সেটা নিয়ে স্পষ্ট কোন ধারণা পাচ্ছেনা এ খাতে জড়িতরা। অনেকে মনে করছেন ঘণ্টা প্রতি বেতন কমে যেতে পারে। কারণ কোম্পানি যে বেতন নির্দিষ্ট করবে সেই বেতনেই হোমকেয়ার সেবা দিতে হবে।
ট্যাক্স ফাইল বিশেষ্জ্ঞরা বলছেন, সিডিপ্যাপ এর ইনকাম থেকে কাউকে ট্যাক্স দিতে হয়না। নতুন নিয়মেও ট্যাক্স দিতে হবেনা এর আওতায়। তবে পিসিএ এর আওতায় ইনকাম থেকে ট্যাক্স দিতে হবে। এছাড়াও আন ইনকাম ক্রেডিটও পাবেন না।
জানা গেছে, হোমকেয়ার সেবায় অনেকে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সেবা দিয়ে ইনকাম করছেন। এর মধ্যে কিছু মানুষ এ সেবার সুযোগ নিয়ে নানা অপব্যবহার ও অনিয়ম করেছেন। এমন অভিযোগে এবং এ খাতে বিশাল ব্যয় সংকোচনে কর্তৃপক্ষ নতুন করে নির্দিষ্ট একটি সংস্থাকে দিয়ে এ কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নিউইয়র্ক স্টেটজুড়ে পার্টনারশীপ হিসেবে ‘পাবলিক পার্টনারশীপ এলএলসি’ (পিপিএল) কাজ করবে। এই পিপিএল এর নিয়ন্ত্রণে নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক ও উপ আঞ্চলিক প্রায় ২৯ টি এজেন্সী হোমকেয়ার সেবা মনিটরিং কার্যক্রম চালাবে। বেতন কাঠামো কত হবে সেটি স্পষ্ট করেনি পিপিএল। সিডিপ্যাপ এর আওতায় আড়াই লাখ কনজ্যুমার রয়েছেন। এর মধ্যে বাঙালি কমিউনিটির কয়েক হাজার পরিবার নিজের পিতা-মাতা কিংবা আত্মীয় স্বজন এর সেবা দিয়ে আসছেন।
পিপিএল তাদের ওয়েবসাইটে বলছে, প্রতিযোগিতামূলক ক্ষতিপূরণ ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। কনজ্যুমারের অবস্থানের ওপর ও স্থানান্তর প্রক্রিয়ার পর সেবা দাতার বেতন নির্ধারণ এবং বেতন হার ভাগ করা হবে।
ইমিগ্র্যান্ট এল্ডার হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট ও সিইও গিয়াস আহমেদ বলেন, সিডিপ্যাপ সাভির্স এর হোম কেয়ার সেবা বন্ধ হচ্ছে না। এটি নতুন নিয়মে পিপিএল এর অধীনে কোম্পানীর অধিনে পরিচালিত হবে। সেই নিয়ম করা হয়েছে। এটি আগামী মাস থেকে স্টেটে এবং সিটিতে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাযর্কর করার কথা বলা হয়েছে। আমরা চাই বর্তমানে যে নিয়মে আছে সেই নিয়মেই চলুক।
তিনি বলেন,  নতুন নিয়মের পর সেবা গ্রহিতাদেরকে সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম ছেড়ে  পিসিএ প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য বলছে। কিন্তু এটা ঠিক হচ্ছে না। কারণ কেউ যদি সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম থেকে পিসিএ-তে স্থানান্তর হলে বেশ কিছু ভিন্ন শর্ত রয়েছে। যেমন পিসিএ-তে সেবা গ্রহীতাকে তার পরিবারের স্বজনরা সেবা দিতে পারবেন না। অনেকে পিসিএ-তে পরিবর্তন করে ভিন্ন ঠিকানা ও পরিচয়ে নিজের পরিবারের বয়স্কদের সেবা দেওয়ার চিন্তা করছেন। পিসিএ কেবল বাইরের মানুষকে সেবা দিতে পারেন। এটা কখনো করা ঠিক হবেনা। তাহলে মিস ইনফরমেশনে মিথ্যা তথ্য যদি ধরা পড়ে তাহলে সেটা মেডিকেইড ফ্রড হবে। এর জন্য জরিমানাসহ নানা জটিলতায় পড়তে পারেন। পরিবারের সদস্যদের সেবা নিতে ও দিতে হলে সিডিপ্যাপ এ থাকতে হবে।
গোল্ডেন এজ হোমকেয়ারের কর্ণধার শাহ্ নেওয়াজ বলেন, পিপিএল কিভাবে এ কাজ করবে এবং বেতন কাঠামো কি হবে এ বিষয়ে আমরা এখনো স্পষ্ট ধারণা পাইনি। পিপিএল যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই মানতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি আদালতের মাধ্যমে এই নিয়ম বন্ধ করতে।