বাংলাদেশ সোসাইটির নব নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৬ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের বিজয় দিবসের আমেজে মনোরম এক পরিবেশে এ অভিষেক সমাবেশে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয় ৫০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের প্রয়াত সকল কর্মকর্তা এবং সম্মান জানানো হয় জীবিতদেরকে। এদিকে রাজনৈতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আলোচনা সভা চলাকালীন সময়ে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয়। তাতে অভিষেক অনুষ্ঠানের সুন্দর্য ম্লান হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তেলওয়াত করেন অভিষিক্ত সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী। গীতা পাঠ করেন বিদায়ী কমিটির শিক্ষা ও স্কুল সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য। এরপরে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, নিহত করোনায় বাংলাদেশ সোসাইটির সদস্যসহ যারা প্রাণ হারান তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নতুন কমিটির সকল কর্মকর্তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি।
হাজার খানেক প্রবাসীর উপস্থিতিতে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের আগমনে সমাবেশ আরো প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে। অভিষিক্তদের প্রত্যাশার পরিপূরক সকল কাজে সিটির সহযোগিতা অব্যাহত থাকার কথা জানান মেয়র অ্যাডামস। তবে এজন্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সিটি, স্টেট, ফেডারেল পর্যায়ের সকল নির্বাচনে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন কম্যুনিটির প্রিয় ব্যক্তিত্ব স্টেট অ্যাসেম্বলিওম্যান জেনিফার রাজকুমার। কম্যুনিটির আরেক ঘনিষ্ঠ সিনেটর জন ল্যু সামনের দিনগুলোতেও প্রবাসীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সমাবেশের প্রথম পর্বে বাংলাদেশ সোসাইটি পরিচালিত দুই বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা পারফর্ম করে। ওরা অবলিলায় বাঙালির বিজয়ের ইতিহাসের ভিত্তিতে কবিতা, গান ও নাচ পরিবেশন করে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। দ্বিতীয় পর্বে ছিল অভিষেক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদায়ী সভাপতি আব্দুর রব মিয়া। নির্বাচিতদের শপথ বাক্য পাঠ করান নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান এডভোকেট জামাল আহমদ জনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য আব্দুল হাকিম মিয়া, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল মান্নান, মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বাদল, আহবাব চৌধুরী খোকন। অভিষিক্তরা হলেন- সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সহ সভাপতি সিনিয়র মহি উদ্দিন দেওয়ান, সহ সভাপতি কামরুজ্জামান বকুল, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী, সহ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ভুইয়া, কোষাধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম ভুইয়া (রুমি), সাংগঠনিক সম্পাদক ডিউক খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ, জন সংযোগ ও প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী, সাহিত্য সম্পাদক মোহাম্মদ আখতার বাবুল, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক আশ্রাব আলী খান লিটন, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান (জিলানী), কার্যকরি সদস্য মোহাম্মদ সিদ্দিক পাটোয়ারী, হারুন চেয়ারম্যান, আবুল কাশেম চৌধুরী, জাহাঙ্গীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী, মুনসুর আহমদ ও হাছান খান।
অভিষেক অনুষ্ঠানের পরে নতুন কমিটি আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন নতুন কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অভিষিক্ত সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ, নির্বাচন
কমিশনের চেয়ারম্যান এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি, বিদায়ী সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন উদ্দিন দেওয়ান, বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, বিদায়ী কার্যকরি সদস্য ফারহানা চৌধুরী, বিদায়ী সহ সভাপতি ফারুক চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আখতার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল আলম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার।
অনুষ্ঠানে মেয়র অ্যাডামকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে মেয়র বাংলাদেশ সোসাইটিকে একটি সাইটেশন প্রদান করেন। এরপর নবনির্বাচিত কর্মকর্তারা মেয়রের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন। অভিষেক পর্ব শেষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কন্সাল জেনারেল নাজমুল হুদা, কম্যুনিটি লিডার শাহনেওয়াজ, নয়া সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী এবং সিটি মেয়রের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশার।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধান সমন্বয়কারী ফারহানা চৌধুরী, ফারুক চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার, সাবেক সেক্রেটারী মোহাম্মদ হোসেন খান, সাবেক সভাপতি আখতার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, অভিষিক্ত কোষাধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম ভুইয়া রুমী, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ, সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল আলম, নবনির্বাচিত সহ সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল প্রমুখ। অভিষেক ও বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘প্রত্যাশা’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এটি সম্পাদনা করেছেন বিদায়ী কমিটির সাহিত্য সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ। ব্যবস্থাপক সম্পাদক ছিলেন প্রচার ও গণসংযোগ সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ। সহ-সম্পাদক ছিলেন নতুন কমিটির সাহিত্য সম্পাদক মো. আকতার বাবুল।
এদিকে অভিষেক অনুষ্ঠান শেষে আলোচনা সভায় বিজয় দিবসের তাৎপর্যসহ সাংগঠনিক আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য মঞ্চে উপবিষ্ট সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল আলমকে অনুষ্ঠান সঞ্চালক অনুরোধ করলে প্রথমে তিনি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। পুণরায় বক্তব্য প্রদানের অনুরোধ করা হলে বক্তব্যের প্রারম্ভেই বলেন, মহিউদ্দিনের জ্বালাময়ী বক্তব্যের পর আর বলার কিছুই থাকে না। ফখরুল আলম বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলতে থাকেন বিজয় দিবসে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমরা ৩ বার বিজয় অর্জন করেছি ৩ রকমের। তিনি বলেন, কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমাদেরকে সেবা দাসের একটি গোষ্ঠিতে পরিণত করা হয়েছিলো। সেখান থেকেই বিজয় লাভ করেছি। ফখরুল আলম বলেন, অতীতে যারা লুন্টন করেছে, নারী নির্যাতন করেছে, গুম হত্যা করেছে, দেশে অণু বিদেশে পাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের এই বিজয়।
এই সময় হলের বাম কোণা থেকে জনৈক ব্যক্তি ভুয়া, ভুয়া বলে মন্তব্য করতে থাকেন। তার সাথে আরো কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভুয়া ভুয়া বলতে থাকেন, প্রতিবাদ করতে থাকেন। চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন। প্রতিবাদকারীরা মঞ্চের দিকে তেড়ে আসেন। পরিস্থিতি অন্যদিকে চলে যায়। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি- হাতাহাতি। অনুষ্ঠানস্থলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাইক নিয়ে অনেকেই পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করেন, ক্ষমাও প্রার্থনা করেন। মুহূর্তের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিষাদময় হয়ে উঠে। নব নির্বাচিত সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমসহ আয়োজকরা অনুরোধ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এক পর্যায়ে মেয়র এরিক অ্যাডামস আসার খবরে সবাই আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে যান। উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন প্রায় ১৯ হাজার। সবশেষে ডিনারের প্রাক্কালে সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজের সমন্বয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।