দেশের পর এবার দেশের বাইরে মঞ্চস্থ হয়েছে নাট্যজন আবুল হায়াতের লেখা নাটক ‘শোধ’। গত ২২ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় নাটকের দল ‘শিল্পাঙ্গন’–এর উদ্যোগে এই নাটক মঞ্চস্থ হয়। আবুল হায়াতের লেখা এই নাটকের মঞ্চায়নে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিপাশা হায়াত ও তৌকীর আহমেদ। শিল্পাঙ্গনের পক্ষে প্রথম আলোকে খবরটি জানিয়েছেন নাটকটির নির্দেশক নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, এটি শিল্পাঙ্গনের ৩৫তম প্রযোজনা।
নজরুল ইসলাম বলেন, শিল্পাঙ্গন হচ্ছে নিউইয়র্কের বাংলা সৃজনশীল চর্চার একটি কেন্দ্র। বাংলা শিল্প ও সাহিত্যের সব ধারায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সাধনার মাধ্যমে পেশাদার মানের পরিবেশনায় ব্রত রয়েছে সংগঠনটি। শিল্পাঙ্গনের একটি শক্তিশালী শাখা হচ্ছে নাটক বিভাগ, যা বছরজুড়ে কর্মশালা ও মহড়ায় ব্যস্ত থাকে এবং মঞ্চে নিয়মিত নাটক উপস্থাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় শিল্পাঙ্গন তাদের ৩৫তম প্রযোজনা হিসেবে ‘শোধ’–কে বেছে নিয়েছে।
সমরেশ মজুমদারের ‘বড় পাপ হে’ গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আবুল হায়াত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লিখেছেন ‘শোধ’ নাটকটি।
এই নাটকের নির্দেশক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসে শিল্পাঙ্গনের নাট্যপ্রয়াসে উদ্বুদ্ধ হয়ে নাট্যজন আবুল হায়াত তাঁর লেখা নাটকটি আমাদের মঞ্চায়নের সুযোগ করে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছিল, মুক্তিসংগ্রামী মানুষকে যারা হত্যা করেছিল, তারা ও তাদের বংশধর বারবার আক্রমণ করে আমাদের স্বাধীন দেশ ও নিরীহ জনগণের ওপর। ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা তাদের সব সময়। কিন্তু সত্যকে যেমন চাপা দেওয়া যায় না, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে সরিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে কখনো ভিন্নপথে ধাবিত করা যায় না। স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ যুগে যুগে মুক্তিযুদ্ধের জয়গান গেয়ে যাবে। এমনি এক আহ্বানের শৈল্পিক প্রতিচ্ছবি তৈরি করেছেন আবুল হায়াত তাঁর “শোধ” নাটকে। তাই আমরা বিজয়ের মাসে এমন একটি পটভূমির নাটক প্রবাসে মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পাঙ্গন প্রবাসে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে চর্চা ও প্রসারে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সর্বোচ্চ ঐতিহ্য মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এর আগেও নাটক এবং এ–সংক্রান্ত সৃজনশীল চর্চার উদ্যোগ নিয়েছে। শিল্পাঙ্গনের সেই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় “শোধ” নাটক মঞ্চায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি সমাজে শ্রেণিবৈষম্য, নারীর অবমাননা, দুঃশাসন ইত্যাদি বিষয়ও এ নাটকে প্রকটভাবে দৃশ্যায়িত হয়েছে। ফলে “শোধ” নাটক সব সময়ের সব পটভূমিতে সমসাময়িক। প্রবাসেও নাটকটির বক্তব্য সমান উপযোগিতা বহন করে।’
‘শোধ’নাটকে অভিনয় করেছেন রাফিয়া খান, শফিউল আলম, আহসান উল্লাহ, এবং নজরুল ইসলাম। প্রবাসে নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতার মাঝে ‘শোধ’এর মত একটি শক্তিশালী গল্পের নাটকের সার্থক মঞ্চায়নে তৌকির সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং শিল্পাঙ্গনকে অভিনন্দন জানান। বাবার নাটকের মঞ্চায়নে বিপাশা আবেগাপ্লুত হন। অভিনয়শিল্পীদের দক্ষতায় তিনি মুগ্ধ হন এবং সাধুবাদ জানান। মিলনায়তনপূর্ণ দর্শক পিনপতন নীরবতার মাঝে এক শ্বাসে নাটকটি উপভোগ করেন।
‘শোধ’ নাটকটি এর আগে ঢাকার মঞ্চে ‘স্টেইজ ওয়ান ঢাকা’ তাদের দ্বাদশ প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চস্থ করেছিল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছিল নাটকটি।