নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামসের উদ্যোগে উদযাপিত হলো ‘বাংলাদেশ হেরিটেজ ডে’। বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এতে মেয়রের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন। মেয়রের সরকারি আবাসিক বাসভবন ‘গ্রেসি ম্যানসন’ এ ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। ভবনটি সাজানো হয়েছিল বাংলাদেশি সাহিত্য ও সংস্কৃতির আদলে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।কালা মিয়া, রানু নেওয়াজ ও অনিক রাজে সংগীত পরিবেশন করেন। মেয়র এরিক এডামস নিজ হাতে প্রবাসী বেশ কয়েকজনকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাবেক এমপি ও সাপ্তাহিক ঠিকানার সম্পাদক এম এম শাহীন ও কমিউনিটি একটিভিস্ট নুরুল আজিম। মেয়র এরিক এডামস সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আরও বক্তব্য রাখেন মেয়র অফিসের চিফ এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার বাংলাদেশি মীর বাশার।
অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশী কমিউনিটিকে তাদের অধ্যবসায়, সংহতি ও নেতৃত্বের বিকাশে অনুপ্রাণিত করতে এক জোরালো বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে মেয়র অ্যাডামস বাংলাদেশী অভিবাসীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং নিউ ইয়র্কের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, "বাংলাদেশীরা শুধু ব্রুকলিনের ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউ, ব্রঙ্কস বা কুইন্সেই ব্যবসা গড়েনি, বরং তারা আইন মান্যতা, পুলিশ বিভাগের সহযোগিতা এবং যুবসমাজের নেতৃত্ব দিয়ে শহরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছে।" তিনি তাদের নিউইয়র্কের বৃহত্তম মুসলিম সম্প্রদায় হিসেবে ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণ তুলে ধরেন।
মেয়র অ্যাডামস সম্প্রদায়কে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান: "আপনাদের তরুণদেরকে সরকারি পদে, পুলিশ বিভাগে এবং ব্যবসায় নেতৃত্ব দিতে উৎসাহিত করুন। ভোটার হোন, প্রার্থী হোন। আপনাদের প্রতিনিধিত্ব আপনাদেরই করতে হবে।" তিনি নন-প্রফিট সংস্থা, বয়স্ক সেবা ও যুব কর্মসূচি পরিচালনায় স্বাবলম্বিতা অর্জনের ওপরও জোর দেন।
তিনি বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের COVID-19 মহামারীর সময়ের অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং শহরের পুনর্গঠনে তাদের ভবিষ্যত ভূমিকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। "এই শহর আপনাদেরকে প্রয়োজন," বলেন তিনি, "যেমন আপনাদেরও আমাদের প্রয়োজন। এটি একটি পারস্পরিক সম্পর্ক।"
অনুষ্ঠানের শেষে মেয়র অ্যাডামস বাংলাদেশী তরুণদের প্রতি আশার বাণী শোনান: "আমি যদি নিউ ইয়র্কের মেয়র হতে পারি, আপনিও পারবেন। একদিন এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেউ বলবে, 'আমি এই শহরের প্রথম বাংলাদেশী মেয়র!'" তার এই মন্তব্য উপস্থিত জনতাকে উদ্দীপ্ত করে।
"আসসালামু আলাইকুম," বলে মেয়র তার বক্তব্য শেষ করলে উপস্থিত বাংলাদেশী নেতা, কর্মী ও তরুণদের মধ্যে জোরালো করতালি ধ্বনিত হয়। এই অনুষ্ঠান শহরের বৈচিত্র্য ও অভিবাসী সম্প্রদায়ের শক্তিকে পুনর্ব্যক্ত করে।
নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রায় কয়েক লাখ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিক বসবাস করেন, যাদের বেশিরভাগই ব্রুকলিন, ব্রংকস ও কুইন্সে ব্যবসা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগের মাধ্যমে শহরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। মেয়র অ্যাডামসের এই উদ্যোগ সম্প্রদায়ের সাথে শহর প্রশাসনের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।