বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র (খাতা) একজন পরীক্ষকের মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে চায় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রাথমিকভাবে নন-ক্যাডারে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। সেখানে এ পদ্ধতি কার্যকর প্রমাণ পেলে বিসিএস ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষায়ও এ নিয়ম অনুসরণ করা হবে।
পিএসসি বলছে, বর্তমানে দুজন পরীক্ষক দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করা হয়। এতে অনেক সময় দুজন পরীক্ষকের দেওয়া নম্বরে ব্যবধান বেশি থাকলে সেগুলো আবার তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়। এতে বাড়তি সময় লেগে যায়, যা বিসিএসে জট সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুজন পরীক্ষক খাতা দেখতে এমনিতেই বেশি সময় লেগে যায়। তার ওপর তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা গেলে তাতে আরও লম্বা সময় প্রয়োজন হয়। এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও করেছে কমিশন। শিগগির বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদন হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এ কারণে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হয়। বিসিএসের জট না খোলার অন্যতম কারণও এটি। তাই একজন পরীক্ষকের মাধ্যমে খাতা মূল্যায়নের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।’
মাত্র একজন পরীক্ষক খাতা দেখলে মানবিক ভুলের কারণেও প্রার্থী বঞ্চিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে করণীয় কী হবে—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, পরীক্ষক খাতা মূল্যায়ন শেষে যখন পিএসসিতে জমা দেবেন, তখন আমরা সেগুলো যাচাই করে দেখবো। পরীক্ষক নম্বর ঠিকভাবে দিয়েছেন কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই চূড়ান্ত করা হবে।
নন-ক্যাডারের পরীক্ষার মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা নন-ক্যাডারের যে পরীক্ষাগুলো লিখিতভাবে নেওয়া হয়, সেগুলোতে এটি প্রয়োগ করবো। অর্থাৎ, আগে নন-ক্যাডারের খাতা একজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন। নন-ক্যাডারের ক্ষেত্রে সফলতা এলে পরে ক্যাডার পদের পরীক্ষার ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োগ করা হবে।
সবশেষ পাঁচটি বিসিএসের দিকে তাকালে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যায়। প্রতিটি বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করতে সাড়ে তিন থেকে চার বছর সময় লেগেছে। যারা চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন, তাদের গেজেট প্রকাশের জন্য আরও ছয়মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। অর্থাৎ, এক বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চার বছরের নিচে বিসিএসে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারছে না পিএসসি। এক বছরে বিসিএস শেষ করার রোডম্যাপ করেও তাতে ব্যর্থ হয় সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
পিএসসির সবশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী—সাধারণ তিনটি বিসিএসের মধ্যে ৪০তম-তে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে পিএসসির সময় লেগেছে ৩ বছর ৬ মাস ২০ দিন। ৪১তম বিসিএসে সময় লেগেছে ৩ বছর ৮ মাস ৭ দিন, ৪৩তম বিসিএসে চূড়ান্ত নিয়োগ পেতে প্রার্থীদের সময় লেগেছে ৩ বছর ১১ মাস।
বর্তমানে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের প্রক্রিয়া চলমান। ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। সাড়ে তিন বছর আগে এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশে আরও ৬-৮ মাস সময় লাগতে পারে।
৪৫তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা হলেও ফল প্রকাশ হয়নি। দুই বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও কবে এ বিসিএস শেষ হবে তা জানেন না খোদ পিএসসির কর্মকর্তারাও। ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি হলেও লিখিত পরীক্ষা হয়নি। কবে এ পরীক্ষা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়নি।
অন্যদিকে ৩৯তম ও ৪২তম বিসিএস ছিল বিশেষ। ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে সময় লেগেছে ১ বছর ২২ দিন। আর ৪২তম বিসিএসে সময় লেগেছে মাত্র ১০ মাস ৬ দিন।