কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

শুধু শিক্ষার্থী নয়, মানসিক ট্রমায় ভুগছেন শিক্ষকরাও 

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৩

কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়েই মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। এরইমধ্যে সরকার পরিবর্তনের পর কিছু কিছু জায়গায় শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগে বাধ্য করেছে। শিক্ষকদের এভাবে হেনস্থার কারণে সেই ট্রমা ভিন্ন রূপ নিয়েছে। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা বলছেন, সহিংসতার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে শ্রেণি কার্যক্রম ফেরাতে হবে। তাদের কাউন্সিলিং করাতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা দূর করতে সরকারকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষকদের আশ্বস্ত করতে হবে।
কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সৃষ্ট সহিংসতায় গুলিতে শিক্ষার্থীদের নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ট্রমার মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। 
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীকালে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সহিংসতায় গত ২৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, শিশু-কিশোর নিহত হয়েছে ৮৯ জন। এছাড়া ৭৯ শিশু-কিশোর শরীরে ছররা ও প্রাণঘাতী গুলিতে আহত হয়েছে। আর স্থাপনা ও যানবাহনে দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছে ৯ জন শিশু-কিশোর। নিহত শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী শিশুটির বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর।
আন্দোলনের  নির্মমতা নিজ চোখে দেখেছে শিশু-কিশোর, যারা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ট্রমা দেখা দিয়েছে, তার জন্য কাউন্সিলিং করানোর সুপারিশ করেছেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা। শ্রেণি শিক্ষক ও অভিভাবকদের এই ট্রমা কাটাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, চোখের সামনে সহপাঠীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা তাদের সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি, প্রতিষ্ঠানে কিংবা নিজের বাসাতেও অনিরাপদ বোধ করার বিষয়টি শিশুদের মনে দীর্ঘ প্রভাব ফেলবে, যদি তাদের দ্রুত ট্রমা কাটিয়ে তোলার উদ্যোগ না নেওয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে, শ্রেণি পাঠদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তাদের স্বাভাবিক করে তোলা যাবে। তবে কাউন্সিলিং সবচেয়ে জরুরি। তবে যারা এই ট্রমা দূর করতে পারেন, তারা হচ্ছেন শিক্ষকরা।
এদিকে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। কেউ পদত্যাগ করতে দেরি করলে বা অস্বীকৃতি জানালে তাদের লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। শিক্ষক লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শিক্ষককে জুতার মালা পরানো, চেয়ার থেকে জোর করে উঠিয়ে নির্যাতন করা, থাপ্পড় মেরে উল্লাস করার মতো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় শিক্ষকরাও ট্রমার মধ্যে পড়েছেন। 
বল প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ করানোর ঘটনায় গত ২৫ আগস্ট শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কারও বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত অভিযোগ থাকলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন করে পদায়ন ও নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে প্রশাসন ভেঙে পড়তে পারে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পেতে অসুবিধা হবে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ম-বিধি অনুযায়ী পদায়ন ও বদল করা হয়। তাদের বলপূর্বক পদত্যাগ করানোর সুযোগ নেই।’
সংশ্লিষ্টদের দাবি, শিক্ষা উপদেষ্টার এই নির্দেশনার আগেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বল প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ শিক্ষকদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক ছুটিও দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ, শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যের পরও সুযোগ সন্ধানীরা ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে। অপমানের ভয়ে রাজধানীর নীলক্ষেত মাধ্যমিক বিদ্যালয় মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষদের জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা ছাড়াও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এই পরিস্থিতি দেখা গেছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের পদত্যাগের পর ভিসি নিয়োগের দাবিতে শিশুরা পর্যন্ত আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, সারা দেশে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করাসহ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি নেপথ্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে সুযোগ সন্ধানীরা। অনেক ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক যাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার সুযোগ রয়েছে, তারাও এসব কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একের পর এক জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনার জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জোহরা বেগমকে গত ১৮ আগস্ট পদত্যাগ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে। যারা অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেন তাদের মধ্যে ছিলেন— ফারিয়াজ মজুমদার, অয়ন মাহমুদ, জারিফ ফারদিন, শাফিয়া এমদাদ রাইসা নামের শিক্ষার্থী।
এই পরিস্থিতিতে নিজের সম্মান বাঁচাতে প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অব্যাহতি চান অধ্যক্ষ জোহরা বেগম।
নরসিংদীর পলাশে গয়েশপুর পদ্মলোচন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছবি: বাংলা ট্রিবিউন
নরসিংদীর পলাশে গয়েশপুর পদ্মলোচন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছবি: বাংলা ট্রিবিউন
অধ্যক্ষ জেহরা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার যখন চুক্তিতে নিয়োগ বাতিল করেছে, তখন আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি চেয়েছি। অথচ আমাকে সমন্বয়কারীদের পক্ষে জোর করে পদত্যাগ করতে বলা হয়।’
এই ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আরিফুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। গত ২২ আগস্ট আরিফুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েই  প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক স্তরের সমন্বয়কারী সবিতা রানী সাহা এবং শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক সুবোল ঘোষকে ছয় মাসের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠান।
এদিকে, রাজধানীর আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গীতাঞ্জলী বড়ুয়াকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে নেয় শিক্ষার্থীরা। এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আজিমপুর সরকারি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা গীতাঞ্জলী বড়ুয়া  বলেন, ‘১৮ আগস্ট একদল ছাত্রী ক্যাম্পাসে এসে স্লোগান দেয়। সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। এক পর্যায়ে তারা আমাকে পদত্যাগপত্র লিখে সই করতে বলে। আমি নিজের সম্মান রক্ষার্থে পদত্যাগপত্র লিখে তাদের দেই। পরে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি।  সে কারণে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হতে পারে ভেবে ক্যাম্পাসের ভবনে না থেকে আমার ছেলেমেয়েসহ এখনও আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আছি। আমার এসব ঘটনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে জানিয়েছি।’
গীতাঞ্জলী বড়ুয়াকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন— ‘আমাকে শারীরিকভাবে কেউ নির্যাতন করেনি। গাছে বেঁধে রাখা একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে আমি শুনেছি। তবে সেই ছবি আমার না। পুরো ঘটনার সময় আমি আমার অফিসেই ছিলাম। সেনাবাহিনী আসার পর আমি এবং শিক্ষকরা নিরাপদে বের হয়ে গিয়েছি।’
গত ১১ আগস্ট রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায়কে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে নেয় শিক্ষার্থীরা। একই দিন প্রতিষ্ঠানের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. ফারহানা খানমকে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। ড. ফারহানা খানম বলেন, জোর করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং আমাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। ভয়ভীতি দেখানো হয়।’
শুধু এই কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নয়, অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষককে আঘাত করার পর উল্লাসের সঙ্গে তাদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা গেছে। এগুলো খুবই দুঃখজনক।
এসব কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও ট্রমার সৃষ্টি হয়েছে। তারা ক্লাসে কীভাবে ছাত্রদের সামলাবেন এমন কথাও বলেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার্থী ও ছাত্রদের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
শিক্ষার্থীদের ট্রমা কাটিয়ে তুলতে সুপারিশ তুলে ধরে শিক্ষাবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে সরকারকেও সময় দিতে হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা একটা ভূমিকা নিয়েছেন এর ফল পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে সময় দেওয়া দরকার। এখন যাই বলবো তাতেই বিতর্ক তৈরি হতে পারে। ভালো নাকি মন্দ তার জন্য সময় দেওয়া দরকার। এর মধ্যেই ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা দুই রকম ট্রমার মধ্যে দিয়ে পার করছে। একটি হলো— দেশের সব শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই কোনও না কোনোভাবে ইনফেকটেড। একটি পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে তাদের মানিয়ে ওঠার ব্যাপার। আরেকটি হচ্ছে— যারা নিজেদের চোখের সামনে সহপাঠী, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-স্বজনকে মারা যেতে দেখেছেন এবং আহত হয়েছেন। ট্রমা তো হবেই, এ জন্যই আমরা সরকারকে বলতে চাচ্ছি—এদের কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু কে করবে, শিক্ষকরা কী অবস্থায় আছে! একটা হচ্ছে ওই সময়কার ট্রমা। আরেকটি হচ্ছে— সুযোগ সন্ধানীরা। সমন্বয়করাও বলছেন, শিক্ষকদের অপমান করা যাবে না, তাদের মারধর করা যাবে না। শিক্ষা উপদেষ্টা নিজেও এ কথা বলেছেন। এটার কিন্তু একটা ভালো ফল আছে। যা হয়েছে তা বিশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবস্থা। অপরাধী হলেই তো কাউকে বিনা প্রমাণে শাস্তি দেওয়া যায় না। অপরাধ করলে অভিযোগ আসতে হবে, তদন্ত করতে হবে। শিক্ষককে হেনস্তা করার অধিকার তাদের নেই।  তাছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের স্পিরিটের সঙ্গে এটা যায় না। শিক্ষকদের ট্রমা কাটিয়ে উঠতেও সময় লাগবে। সরকারকে যেমন সময় দিতে হবে। তেমনি শিক্ষকদেরও সময় দিতে হবে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের ট্রমা কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেবো।
বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোনও আন্দোলন বা সংস্কারে সহিংসতা কাম্য নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাদের ট্রমা কাটিয়ে ওঠার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। বিশেষত এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশানুরূপ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করি। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের যে প্রক্রিয়ার পদত্যাগ করানো হচ্ছে এবং তাদেরকে অপদস্থ করা হচ্ছে, এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয় বলে আমি মনে করি। এতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করবে। একজন শিক্ষক হিসেবে নিজেকে যেমন সম্মানের জায়গায় রাখতে চাই, তেমনই অন্য শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষায় ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। কেননা, আজকের শিক্ষার্থী আগামী দিনের শিক্ষক।’
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর ছাত্রদের যে নির্যাতন, তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। শিক্ষকদের যে অপমান হতে হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। সবাই অপরাধী নয়। প্রধান শিক্ষকদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করালে শিক্ষক সমাজ চুপ করে বসে থাকবে না। তখন শিক্ষার পরিবেশ আরও খারাপ হয়ে যাবে।’