নিরাপদ ও নিশ্চিত জীবনের আশায়

বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৩১

প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্টুডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসেন। তারা এখানে আসেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে যারা আসেন, তাদের প্রায় সবাই লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে যাবেন- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েই এখানে আসেন। এর পরও অনেকেই বিভিন্ন উপায়ে এখানে থেকে যান। আবার দেশের অনেক স্টুডেন্ট নিরাপদ ও নিশ্চিত জীবনের আশায় দেশ ছাড়েন। বাংলাদেশ থেকে যারা এখানে আসছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই অনেক ভালো ফলাফল করছেন। এখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে বিভিন্ন চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে তার সামনে নতুন একটি দ্বার খুলে যাচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১৩ হাজার ৫৬৩ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসেন, যা এ-যাবৎকালের রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আসার তালিকায় ১৩তম দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। আগের বছরের তুলনায় শিক্ষার্থী পড়তে আসার সংখ্যা বেড়েছে ২৮ শতাংশ, যা বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ।
জানা গেছে, বাংলাদেশের স্টুডেন্টরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়তে যাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো উন্নত দেশে উচ্চ ও বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণ করা। এ ছাড়া লেখাপড়া শেষ করার পর দেশে ভালো, পছন্দসই, মনের মতো চাকরি না পাওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিও অনেকের মধ্যে কাজ করে। বাবা-মায়েরা চান তার সন্তান বিদেশে লেখাপড়া করুক। এসব কারণে দিনে দিনে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি স্টুডেন্টের সংখ্যা বাড়ছে। এখানে আসার পর যারা মন দিয়ে পড়ছেন এবং লক্ষ্য পূরণ করছেন, তারা ভালো করছেন। কিছু স্টুডেন্ট এখানে আসার পর অর্থ রোজগারের জন্য নামছেন, কিংবা বিভিন্ন উপায়ে যখন এখানে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তখন অনেক সময় ভুল পরামর্শ নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে লেখাপড়া নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেন না। ফলে তারা বিপাকে পড়েন। দেখা গেছে, যারা এখানে লেখাপড়া করতে এসে আইন ও নিয়ম মেনেই স্টুডেন্ট স্ট্যাটাস ধরে রেখেছেন ও লেখাপড়া শেষ করেছেন, তাদের অনেকে কাজের জন্য স্পন্সর কোম্পানিও জোগাড় করতে পারছেন। এখানে স্টুডেন্ট হিসেবে আসার পর কেউ কেউ কলেজ চেঞ্জ করেন, স্কুলের অনুমোদনের বাইরে কাজ করা শুরু করেন, আবার কেউ কেউ এখানে থেকে যাওয়ার জন্য অ্যাসাইলাম কেস ফাইল করেন। তাদের অনেকেই সমস্যায় পড়েন। জানা গেছে, কিছু স্টুডেন্ট নিজেরা সমস্যা তৈরি করলেও বেশির ভাগ স্টুডেন্ট নিজের লক্ষ্য অর্জন করছেন।
চলতি বছরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি স্টুডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছেন। দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে যেসব স্টুডেন্ট আসেন, তাদের বেশির ভাগই মে মাসের ১ তারিখের পর থেকে আই-টুয়েন্টি পাওয়া শুরু করেন। সেটি পাওয়ার কারণে আগেভাগেই ভিসার আবেদন করার সুযোগ পান। যারা এবার আগেভাগে ভিসার আবেদন করেছেন, তাদেরকে তেমন ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কারণ তারা ৫ আগস্টের আগেই ভিসা পেয়েছেন। বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পর নতুন সরকার গঠিত হবে, এটা আগেভাগে কেউ জানতেন না। ফলে হঠাৎই পরিস্থিতি বদলে যায়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর যারা আবেদন করেছেন, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অফিস কিছুদিন বন্ধ থাকার কারণে তাদের জন্য কলকাতা থেকে স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং করার সুযোগ রাখা হয়। সাধারণত এখানে আগস্টের শেষ সপ্তাহে কিংবা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়। এ কারণে যারা ডর্মে থাকেন, তারা ক্লাস শুরুর আগে আগে এলেও যারা বাইরে বাসা নিয়ে থাকেন, তারা একটু আগেই আসেন।
বাংলাদেশ থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসতে চান বা আসেন, তাদের জন্য আমেরিকান সেন্টার, ইএমকে সেন্টার বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করে। এবারও জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ঢাকার এডুকেশনইউএসএ টিম ২০২৪ সালের ফল সেশনের যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা শুরু করতে যাওয়া বাংলাদেশের ১২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ইএমকে সেন্টারে প্রি-ডিপার্চার ওরিয়েন্টেশন (পিডিও) সেশনের আয়োজন করে।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সেলর স্টিফেন ইবেলি তার স্বাগত বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসকে সমৃদ্ধ করেছে এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করেছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১৩ হাজার ৫৬৩ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে গেছে, যা এ-যাবৎকালের রেকর্ড। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাঠানোর তালিকায় ১৩তম দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। আগের বছরের তুলনায় শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে ২৮ শতাংশ, যা বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ।’
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কনস্যুলার সেকশন, এডুকেশনইউএসএ, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক ভর্তি কর্মকর্তা, বর্তমান ও সাম্প্রতিককালে পড়াশোনা শেষ করেছেন এমন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সময় শিক্ষার্থীরা যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক, সাংস্কৃতিক এবং জীবনযাত্রার পার্থক্যের মুখোমুখি হবেন, সে বিষয়ে পরামর্শ দেন বক্তারা। স্টিফেন ইবেলি শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক, পেশাদার এবং ব্যক্তিগত বিকাশের এই যাত্রা শুরুর সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে থাকা সুবিধা নিতে উৎসাহ জানান। নতুন অভিজ্ঞতা নেওয়া এবং বন্ধু ও সহকর্মীদের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।
এডুকেশনইউএসএর তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৩০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১-২০১২ সালে যা ৩ হাজার ৩১৪ জন ছিল, ২০২২-২০২৩ সালে সেই সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৬৩ জনে পৌঁছেছে। বাংলাদেশি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার জন স্নাতক শিক্ষার্থী বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক শিক্ষার্থীদের সপ্তম বৃহত্তম উৎস করে তুলেছে। এই পরিসংখ্যান শক্তিশালী শিক্ষাগত সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিগ্রির উচ্চ চাহিদার কথা তুলে ধরে।
বাংলাদেশে এডুকেশনইউএসএর পরামর্শমূলক পরিষেবা এবং রেফারেন্স উপকরণ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে আমেরিকান সেন্টার, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, গুলশানের এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড আর্টস এবং চট্টগ্রামে আমেরিকান কর্নার, যেখানে প্রশিক্ষিত উপদেষ্টারা গ্রুপ ইনফরমেশন সেশনের নেতৃত্ব দেন এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ব্যক্তিগত পরামর্শমূলক পরিষেবা প্রদান করেন। এডুকেশন-ইউএসএ রেফারেন্স লাইব্রেরি এবং দূরবর্তী পরামর্শ পরিষেবা খুলনা, সিলেট ও রাজশাহীর আমেরিকান কর্নারেও পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ থেকে যেসব স্টুডেন্ট আসতে চান, তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সহায়তা নিতে পারেন।