দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ এবং শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২১ সালে। জাতীয় বিমা দিবস উপলক্ষে ওই বছর ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু বীমা মেলার আয়োজন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংস্থাটি নিজস্ব অর্থায়নে শিশুদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ চালুর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই বিমাটি আর চলমান থোকবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তাছাড়া এই শিক্ষা বিমার নাম পরিবর্তন করা হবে কিনা সে বিষয়টিও সামনে এসেছে।
২০২১ সালে সরকারি ও বেসরকারি সব জীবন বিমা কোম্পানিকে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ বিক্রির নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জীবন বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে এক বছর পাইলটিং করার পর এ বিমা পরিকল্পটি সব কোম্পানির জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে বিমার আওতায় আনা হয়। পরবর্তী সময়ে বিমার আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয় আরও ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে। আইডিআরএ’র নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা প্রবর্তন করা হয়। প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জীবন বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক, কারিগরি ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এই বিমার আওতাভুক্ত করে পরিকল্পটির পাইলটিং করা হয়। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমার আওতায় বছরে ৮৫ টাকার প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বিমাভুক্ত করার নির্দেশনা করা হয় ৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর অভিভাবককে। অভিভাবকের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু বা নির্দিষ্ট কিছু দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মাসিক ৫০০ টাকা হারে শিক্ষার্থীদের ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা বিমার সুবিধা দেওয়া হবে। দেশের ৬৪ জেলার ৫০ হাজার শিক্ষার্থী বিমা পরিকল্পটির আওতায় বিমাভুক্ত হয়।
২০২৩ সালের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে বিমার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। নতুন করে আরও ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী দেশের প্রতিটি জেলার একটি করে বাছাই করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের তথ্য নেওয়া প্রয়োজন।
এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা অধিদফতরগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা জারি করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী— মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর গত ২০ ফেব্রুয়ারি, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং পরবর্তী সময়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর সব আঞ্চলিক পরিচালকদের কাছ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাই করে শিক্ষার্থীদের তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দেয়। একইভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আঞ্চলিক উপরিচালকদের নির্দেশনা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম রাখা না রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নাম বদলে করা হয়েছে ‘জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’। যদিও শিক্ষা বিমার বিষয়ে এখনও কিছু বলা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’
‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ বন্ধ হতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন্ধ হওয়ার কথা নয়। তবে নাম হয়তো বদল হতে পারে। আমি খোঁজ নিয়ে পরে জানাতে পারবো।’
বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা সংক্রান্ত অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ড. একিউএম শফিউল আজম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ রকম আছে কিনা বা ছিল কিনা আমার ধারণা নেই।’
বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা
বাবা, মা বা আইনগত অভিভাবকদের যেকোনও একজনকে বিমার প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে। শিক্ষার্থীর ন্যূনতম বয়স তিন বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স হবে ১৭ বছর। বাবা, মা অথবা আইনগত অভিভাবকের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ৬৪ বছর হবে। মেয়াদ ন্যূনতম এক বছর, সর্বোচ্চ ১৭ বছর। বার্ষিক প্রিমিয়াম ৮৫ টাকা। বাস্তবায়ন করবে দুই বছর মেয়াদি পাইলটিং ভিত্তিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সহযোগীতায় জীবন বীমা করপোরেশন। বিমা করা প্রতিষ্ঠান হবে বাংলাদেশে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অভিভাবকের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু বা নির্দিষ্ট কিছু দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মাসিক ৫০০ টাকা হারে শিক্ষার্থীদের ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা বিমা সুবিধা দেওয়া হবে।
এই বিমার উদ্দেশ্য
শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমানোই বঙ্গবন্ধু শিক্ষার বীমার উদ্দেশ্য। এছাড়া বাবা, মা ও আইনগত অভিভাবকের অবর্তমানে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আর্থিক নিরাপত্তা তৈরি হবে। বিমার প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি পাবে। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমাটি বাস্তবায়ন হলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশে কোনও লোক নিরক্ষর থাকবে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা প্রবর্তন করা হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জীবন বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক, কারিগরি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বিমার আওতাভুক্ত করে পরিকল্পটির পাইলটিং করা হয়েছে আগেই।